রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পরিবেশ অধ্যয়নের গুরুত্ব আলোচনা কর
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পরিবেশ অধ্যয়নের গুরুত্ব আলোচনা কর |
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পরিবেশ অধ্যয়নের গুরুত্ব আলোচনা কর
- অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পরিবেশ অধ্যয়নের গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর ।
উত্তর : ভূমিকা : পরিবেশ একটি দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরিবেশ সেদেশের স্বাভাবিক অবস্থাকে বজায় রাখে। আমাদের পারিপার্শ্বিক ও সমাজ জীবনে পরিবেশ অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম ।
কারণ পরিবেশ থেকে মানুষ তার জীবনাচরণ শিখতে পারে। ব্যক্তি ও ব্যক্তির বিকাশ পরিবেশের উপরই নির্ভরশীল। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পরিবেশ অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম।
নিম্নে পরিবেশ অধ্যয়নের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১. মানব সভ্যতা পরিবেশের উপর নির্ভরশীল : রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নে পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। যেকোনো মানব সভ্যতার সৃষ্টি বা পরিবর্তন সর্বপ্রথম পরিবেশের উপর নির্ভর করেই হয়।
কারণ পরিবেশই যেকোনো কিছু সৃষ্টি করতে সাহায্য করে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে; যেমন— মিনার, চীনা, সুমেরু ও মায়া সভ্যতা ইত্যাদি। শুধু প্রাচীন সভ্যতাই নয়। আধুনিক সভ্যতাও পরিবেশের উপর নির্ভরশীল ।
২. পরিবেশ পরিবর্তনে সমাজও পরিবর্তন হয় : পরিবেশ পরিবর্তনের সাথে সমাজও পরিবর্তন হয়। প্রত্যেক পরিবেশের মানুষের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক ভিত্তি পরিলক্ষিত হয়। যেমন- পাহাড়ি পরিবেশের মানুষ ও সমতল পরিবেশের মানুষের জীবনধারা ভিন্ন হয়।
আমাদের দেশেও তুভিত্তিক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। সময়ের সাথে সাথে পরিবেশ যেমন পরিবর্তিত হয়, তেমনি মানুষের জীবন প্রণালিরও পরিবর্তন হয়।
৩. পরিবেশ মানুষের পেশ ও অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে : মানুষের জীবনের সাথে পেশা ও অর্থনীতি গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পরিবেশ অধ্যয়নে মানুষের পেশা ও অর্থনীতিকে গুরুত্ব প্রদান করা হয়।
পরিবেশের ভিন্নতার কারণে মানুষের পেশারও ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। গ্রামাঞ্চলের পরিবেশ ও শহরের পরিবেশ যেমন ভিন্ন, তেমনি গ্রাম ও শহরের মানুষের পেশাও ভিন্ন হয়।
মানুষের অর্থনৈতিক জীবনধারাও তেমনি পরিবেশের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তাই পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা একান্ত জরুরি। /
৪. টেকসই উন্নয়নে অনুকূল পরিবেশ : প্রত্যেক দেশের উন্নয়নের প্রয়োজন অনুকূল পরিবেশ। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশের স্থিতিশীলতা একান্ত প্রয়োজন।
দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য টেকসই উন্নয়ন প্রয়োজন। আর এর জন্য প্রয়োজন অনুকূল পরিবেশ। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অস্থিরতা রোধে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা।
৫. নতুন নতুন সামাজিক সংগঠনের উদ্ভব : রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পরিবেশ অধ্যয়নের গরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা মতামত প্রকাশ করেছেন যে, বিভিন্ন কারণে পরিবেশের নেতিবাচক পরিবর্তন চলতে থাকলে মানুষসহ পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণী আর বেশি দিন টিকতে পারবে না।
পরিবেশ পরিবর্তনের জন্য মানুষও তাদের কার্যাবলি বেশি দায়ী। তাই পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য নতুন নতুন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।
৬. পরিবেশ বিপর্যয় সামাজিক সংহতি নষ্ট করে : যেকোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। আর এ কারণে মানবজীবন ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ করা যায়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিবেশের উপর যে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। তার ফলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
পরিবেশ বিপর্যয় মানুষের জীবন প্রণালিকে বদলে দেয়। পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে মানবজীবনের ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মানব জীবনে পরিবেশ অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবেশ মানুষকে অনেক কিছু শেখায়।
পরিবেশ থেকে মানুষ অনেক কিছু শিক্ষা লাভ করে তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে থাকে। পরিবেশ সমাজ ও মানুষ এ তিনটি বিষয় একসাথে সম্পর্কযুক্ত।
কেননা সমাজ ও পরিবেশের উপর মানুষের জীবন ও জীবিকা অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পরিবেশ অধ্যয়নের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।