পরিবেশগত দ্বন্দ্ব কি । বাংলাদেশের পরিবেশগত দ্বন্দ্বগুলো কি কি
পরিবেশগত দ্বন্দ্ব কি । বাংলাদেশের পরিবেশগত দ্বন্দ্বগুলো কি কি |
পরিবেশগত দ্বন্দ্ব কি । বাংলাদেশের পরিবেশগত দ্বন্দ্বগুলো কি কি
- অথবা, পরিবেশগত দ্বন্দ্ব বলতে কী বুঝ? বাংলাদেশের পরিবেশগত দ্বন্দ্বগুলো বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : পরিবেশগত দ্বন্দ্ব বর্তমানে বিশ্বে একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিষয়। সাধারণত পরিবেশ সম্পর্কিত যেকোনো বাধা বা যন্ত্রকে পরিবেশগত দ্বন্দ্ব বলে।
নীতিগতভাবে পরিবেশের বিষয় নিয়ে যখন কোনো ইস্যু তৈরি হয় এবং সে ইস্যুতে দ্বন্দ্ব থাকে | তখন তাকে পরিবেশগত দ্বন্দ্ব বলে।
এটি বর্তমানে উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য নয়, বরং উন্নত বিশ্বের জন্যও সমস্যা। পরিবেশের এসব বিষয় নিয়ে বর্তমান বিশ্বে একদেশ অন্য দেশের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে।
পরিবেশগত দ্বন্দ্ব : পরিবেশগত দ্বন্দ্ব বলতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, জাতীয়, ধর্মীয়, ভূমিগত সম্পদের বা জাতীয় স্বার্থের জন্য সংঘর্ষকে বোঝায়।
পরিবেশের অবনতির কারণেই পরিবেশগত দ্বন্দ্ব প্রকাশ পায়। পরিবেশের বিভিন্ন ইস্যুর উপর ভিত্তি করে জনগণের দ্বারা পরিবেশগত দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। পরিবেশগত দ্বন্দ্ব পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
[] বাংলাদেশের পরিবেশগত দ্বন্দ্বগুলো : বাংলাদেশের পরিবেশগত দ্বন্দ্বগুলোর বিভিন্ন কারণ লক্ষ করা যায়; যেমন- প্রাকৃতিক সম্পদের অপর্যাপ্ততা, লক্ষ্য স্থিরে অক্ষমতা, পরিবেশগত নিরাপত্তার বিভিন্ন পদ্ধতিগুলোর পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও পরিবেশের ইস্যুগুলো যথাযথভাবে না বোঝা।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে পরিবেশগত দ্বন্দ্বের বিষয়টি, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও জাতীয় স্বার্থের দ্বন্দ্ব হিসেবে রূপ লাভ করেছে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পরিবেশগত দ্বন্দ্বগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র একটি মেগা প্রজেক্ট। বর্তমানে এ প্রজেক্টের কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে।
সরকার যথেষ্ট গবেষণা ও সম্ভাবনা ছাড়াই এ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে হাত দেয় যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল বা জনবহুল দেশের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। যার দরুন বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়।
২. শৈলা নদীতে জাহাজ ডুবি : ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে শৈলী নদীতে তেলবাহী জাহাজ ডুবে যায়। যার ফলে সুন্দরবন এলাকার আশেপাশে ফার্নেস অয়েল ছড়িয়ে পড়ে।
এর কারণে সামুদ্রিক জলজ প্রাণীসহ পশুপাখি ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
৩. বড় পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে উন্মুক্ত উত্তোলন : দিনাজপুরের বড় পুকুরিয়া কয়লাখনি থকে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উন্মুক্ত কয়লা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে ঐ এলাকার কৃষি জমি, বসবাসরত জীব ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
এতে সাধারণ জনগণ প্রতিবাদ জানালে বা আন্দোলন করলে পুলিশের গুলিতে ৪ জন মারা যায়। পরবর্তীতে উন্মুক্ত কয়লা উত্তোলন বন্ধ করা হয় ।
৪. জাহাজ ভাঙা শিল্প : বাংলাদেশের ভারী প্রজেক্টের মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো জাহাজ ভাঙা শিল্প। এ শিল্পে বাংলাদেশে অপর সম্ভাবনা থাকলেও সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে পরিবেশের ব্যাপক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে।
যার কারণে জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। মানুষ অসংখ্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মানুষ ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
৫. হাজারীবাগের ট্যানারী শিল্প : বাংলাদেশের জনবহুল রাজধানী হলো টাকার শহর। ঢাকার শহরের হাজারীবাগ এলাকা একটি গণবসতিপূর্ণ এলাকা।
বাংলাদেশের চামড়া শিল্প এই এলাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে পরিবেশও জনজীবন মারাত্মক হুমকির মুখে ৷
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পরিবেশের অবনতি ও নিরাপত্তার সমস্যার কারণে বিশ্বের পরিবেশ আজ হুমকির মুখে এবং পরিবেশগত দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশের পরিবেশ।
ব্যবস্থাপনায় নানা সমস্যা বিদ্যমান। এ দেশে বর্জ্য ব্যবস্থা, গাড়ির কালো ধোঁয়া, নদী দূষণ, ভাটার কালো ধোঁয়া, ঢাকার শহরে আবর্জনা ইত্যাদি বাংলাদেশের পরিবেশগত দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে ।