পরিবেশবাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী পরিবেশের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর
পরিবেশবাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী পরিবেশের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর |
পরিবেশবাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী পরিবেশের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর
- অথবা, পরিবেশবাদের মতামত অনুসারে পরিবেশের প্রকারভেদ বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : পরিবেশ বিভিন্ন উপাদানের সংমিশ্রণে গঠিত হয়। এ কারণে পরিবেশের প্রকারভেদের বিভিন্ন রকম দেখা যায়।
বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানীগণ পরিবেশের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে মতপার্থক্য প্রকাশ করেছে। ম্যাকাইভার ও পেজ-এর মতে, পরিবেশ দু'ধরনের।
অন্যদিকে অধ্যাপক ডিসবার্ট-এর মতে, পরিবেশ চার প্রকার। আবার অনেকে মনে করেন পরিবেশ বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে।
ম্যাকাইভার ও পেজ পরিবেশকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করেছেন; যেমন :
১. বাহ্যিক পরিবেশ ও
২. অভ্যন্তরীণ/সামাজিক পরিবেশ।
১. বাহ্যিক পরিবেশ : বাহ্যিক পরিবেশের মধ্যে অনেক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিদ্যমান রয়েছে। মানুষ তার বুদ্ধি ও শ্রম শক্তির প্রয়োগ প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর করে থাকে। এর ফলে মানব সভ্যতার অনেক উপকরণের সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে।
প্রকৃতি ও পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে মানুষ অনেক নতুন উদ্ভাবনের সৃষ্টি করেছে। এর ফলে মানুষের জীবনযাত্রার সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা হয়েছে। আর এসব কিছু মিলে সৃষ্টি হয় বাহ্যিক পরিবেশ।
২. অভ্যন্তরীণ বা সামগ্রিক পরিবেশ : অভ্যন্তরীণ পরিবেশ বলতে মানুষের নিজস্ব সামাজিক পরিমণ্ডলের পরিবেশসমূহকে বোঝায় । একটি সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার পেছনে অনেকগুলো বিষয় একত্রে কাজ করে এবং এসব বিষয়গুলো হলো সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি, সংগঠন, নিয়মকানুন ইত্যাদি।
সামাজিক পরিবেশের অস্তিত্ব মানুষের চলমান প্রক্রিয়ার সাথেই জড়িত থাকে ।অধ্যাপক ডিসকর্ট, চার প্রকার অভ্যন্তরীণ পরিবেশের কথা উল্লেখ করেছেন।
নিম্নে তার পরিবেশের বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
১. সামাজিক পরিবেশ : অধ্যাপক ডিসকর্ট তাঁর Fundamental of Society গ্রন্থে পরিবেশ সম্পর্কে যে চারটি শ্রেণিবিভাগ করেছে তার মধ্যে সামাজিক পরিবেশ অন্যতম।
সামাজিক পরিবেশ বলতে মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্বলিত পরিবেশকে বোঝায়। সাধারণত পুরো সমাজকেই পরিবেশ বলে।
মানুষের মধ্যে যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। তার থেকে সামাজিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মানুষের বাস্তব জীবনের সাথে পরিবেশের প্রভাব লক্ষ করা যায়।
২. প্রাকৃতিক পরিবেশ : আমাদের সমাজের চারপাশে যা | কিছু প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি তার সমন্বয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ গঠিত হয়। সাধারণত প্রাকৃতিক পরিবেশ বলতে জলবায়ু, বৃষ্টিপাত, নদনদী, পাহাড়, পর্বত, আকাশ, বাতাস, চন্দ্র, সূর্যকে বোঝায়।
এগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশের অংশ। তবে মানুষ প্রাকৃতিক পরিবেশের এসব উপাদানকে কতক পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অর্জন করেছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে।
৩. কৃত্রিম পরিবেশ : সাধারণত কৃত্রিম পরিবেশ বলতে মানুষের তৈরি পরিবেশকে বোঝায়। মানুষ নিজের প্রয়োজন নিজ = উদ্যোগে যে পরিবেশের সৃষ্টি করে তাকে কৃত্রিম পরিবেশ বলে।
মানুষ তার বুদ্ধি ও কর্মদক্ষতায় কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তাই মানুষের তৈরি সকল কিছুই কৃত্রিম পরিবেশ। মানুষের সৃষ্টি শিল্প-কারখানা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কলা সবই কৃত্রিম পরিবেশ।
৪. মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ : মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ বলতে মানুষের অভ্যাস, সহজাত প্রবণতা, অভিজ্ঞতা, বিশেষ ধরনের ঝোঁক প্রভৃতি থেকে সৃষ্টি মননগত পরিবেশকে বোঝায়।
সামাজিক পরিবেশের পরেই মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশের অবস্থান।প্রতিটি সমাজের মানুষের নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা থাকে ।
মানুষ স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে সক্ষম ও তার লক্ষ্যে পৌঁছাতেও সমর্থ। মানুষ যখন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তখন সে তার শিক্ষাদীক্ষা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগায় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পরিবেশের শ্রেণিবিভাগ . সম্পর্কে অধ্যাপক ডিসকর্ট সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতামত প্রকাশ করেছে। তার মতে, এ চার প্রকার পরিবেশের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও নির্ভরশীল।
এরা ডিসকটের মতে, পরিবেশের এ ধরনগুলো একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। তিনি মনে করেন, পরিবেশ এ চার প্রকার উপাদানের উপর নির্ভরশীল।