ইউনিয়ন পরিষদে নারীর ভূমিকা আলোচনা কর | ইউনিয়ন পরিষদে নারী সদস্যদের ভূমিকা বৃদ্ধির উপায় ব্যাখ্যা কর

ইউনিয়ন পরিষদে নারীর ভূমিকা আলোচনা কর। ইউনিয়ন পরিষদে নারী সদস্যদের ভূমিকা বৃদ্ধির উপায় ব্যাখ্যা কর
ইউনিয়ন পরিষদে নারীর ভূমিকা আলোচনা কর। ইউনিয়ন পরিষদে নারী সদস্যদের ভূমিকা বৃদ্ধির উপায় ব্যাখ্যা কর

ইউনিয়ন পরিষদে নারীর ভূমিকা আলোচনা কর। ইউনিয়ন পরিষদে নারী সদস্যদের ভূমিকা বৃদ্ধির উপায় ব্যাখ্যা কর

  • অথবা, ইউনিয়ন পরিষদে নারীর ভূমিকা কীরূপ? ইউনিয়ন পরিষদে নারী সদস্যদের ভূমিকা বৃদ্ধির উপায় বর্ণনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : ব্রিটিশ শাসনামল হতে স্থানীয় শাসনব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয় । একপর্যায়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর নারীরা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে থাকে। 

ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের ভিত্তিতে ১৯৯৭ সালে স্থানীয় শাসনব্যবস্থায় নারীরা ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে। ফলে স্থানীয় সরকারের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ সম্প্রসারিত হয়। 

তাছাড়া অংশগ্রহণের পাশাপাশি তাদের ভূমিকাও বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদে নারীর ভূমিকা আরও বৃদ্ধি করা দরকার । আর এক্ষেত্রে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা যায়।

ইউনিয়ন পরিষদে নারীর ভূমিকা : নারী সদস্য ইউনিয়ন পরিষদে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। নিম্নে ইউনিয়ন পরিষদে নারীর ভূমিকা আলোচনা করা হলো :

১. আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা : ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্যগণ গ্রামে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কাজ করেন। তাদের কাজে চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের পুরুষ সদস্যগণ সাহায্য ও সহযোগিতা করেন। 

তাছাড়া তারা এ ব্যাপারে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ও গ্রাম পুলিশের সাহায্য নেন। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে তারা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এর ফলে নারী সদস্যগণ নিরাপত্তাবোধ করেন।

২. নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করা : ইউনিয়নের নারী সদস্যগণ। তাদের এলাকার নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এজন্য তারা এলাকার নারীদের স্বামী কর্তৃক মারধর, ইভটিজিং ও পাচারের ওপর বিশেষ নজর রাখেন এবং পরিষদের মাধ্যমে এসব বন্ধের জন্য কাজ করেন এবং অপরাধীকে চিহ্নিত করে পরিষদের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

৩. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা করা : প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে তার এলাকার জনগণকে সতর্ক করা ও পরামর্শ দেওয়া নারী সদস্যদের একটি দায়িত্ব ও কাজ। 

অভাব ও দূর্ভিক্ষের সময় তাদের মহিলা ও শিশুদের জন্য জ্ঞাণ এনে বিতরণ করতে হয়। পরিষদের পুরুষ সদস্যগণ তাদের এসব কাজে সহায়তা করে। ফলে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব হয়।

৪. চুরি, ডাকাতি ও সন্ত্রাস রোধ করা : নারী সদস্যগণ তাদের এলাকায় সন্দেহভাজন লোকদের গতিবিধির ওপর নজর রাখে। এটি তাদের দায়িত্ব। এর মাধ্যমে চুরি, ডাকাতি ও সন্ত্রাস দূর করা যায়। 

এ ব্যাপারে সবাই সক্রিয় ভূমিকা তথা সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে। তবে এ ব্যাপারে ভূমিকা পালনে গ্রাম পুলিশ তাদেরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করে।

৫. এলাকার সার্বিক উন্নয়ন করা : ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্যকে সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হয়। যেমন- রাস্তাঘাট নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত, শিল্পের প্রসার ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষামূলক কাজ, বয়ক্ষশিক্ষা ও লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, গোরস্তান, শশ্মশান নির্মাণ, বাঁধ, কালভার্ট নির্মাণ প্রভৃতি। 

তাছাড়া খাল, বিল, পুকুর, কৃপ পরিষ্কার রাখা। এলাকায় সালিশি আদালতে কাজ করা, জাতীয় অনুষ্ঠান পালন করা, দুস্থদের সাহায্য ও পুনর্বাসন করা এবং বীজ, সার, কীটনাশক সরবরাহ করা প্রভৃতি।

ইউনিয়ন পরিষদে নারী সদস্যদের ভূমিকা বৃদ্ধির উপায় : ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্যরা যাতে স্বতঃস্ফূর্ত ও কার্যকরভাবে ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারে সেজন্য নিম্নলিখিত সুপারিশ পেশ করা যেতে পারে :

১. নারী সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান : ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্যদের যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। কারণ স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কার্যাবলির ধরন ও প্রকৃতি খুব জটিল। 

সাধারণ জনগণের সাথে মিশতে হলে তাদের সাথে কী ধরনের আচরণ করতে হবে, কীভাবে তাদের কাছাকাছি যাওয়া যাবে ইত্যাদি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। তাছাড়া পরিষদের দায়িত্ব ও কর্তব্য যাতে তারা বুঝতে পারে সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া আবশ্যক প্রয়োজন ।

২. প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বৃদ্ধি : গ্রামীণ যেসব নারী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হচ্ছে তারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উচ্চশিক্ষিত নয়। তাদের অধিকাংশই অল্পশিক্ষিত। 

তাই তারা তাদের কার্যাবলি যথাযথভাবে বুঝতে পারে না এবং ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন সভায় প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণ করতে পারে না। 

নারীদের এসব দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পুরুষ সদস্যরা তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ভূমিকা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। তাই নারী সদস্যদের জ্ঞান, দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন।

৩. নারীর আয় বৃদ্ধির ব্যবস্থা : গ্রামে নারী স্বাধীনভাবে আয় করতে পারে না। নারী কেবল রান্নাঘরেই বন্দি জীবনযাপন করে। নারীরা অর্থনৈতিকভাবে পুরুষদের ওপর নির্ভরশীল। 

ফলে তারা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তাই বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে নারীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে হবে। আর নারীরা স্বাবলম্বী হলে ইউনিয়ন পরিষদে যথাযথভাবে ভূমিকা পালন করতে পারবে।

৪. সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি : সমাজের নারী-পুরুষ সকল মানুষের মধ্যে সমানভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। নারী মানুষ এবং তারা এ সমাজের একটি অপরিহার্য অংশ, পুরুষদের একথা বুঝাতে হবে। 

এভাবে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নারী সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা যায় এবং ইউনিয়ন পরিষদে নারীর কার্যকর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব।

৫. প্রশাসনিক সহায়তা প্রদান : প্রশাসনের সকল পর্যায়ে পুরুষরাই নিজেদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেয়। এতে নারীসমাজের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ যথাযথভাবে হচ্ছে না। 

কিন্তু নারীদের প্রতি সব ধরনের সামাজিক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য দূর করে তাদেরকেও সব ধরনের প্রশাসনিক সুবিধা দিতে হবে। এতে নারীরা রাজনীতিতে অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করবে। 

৬. ন্যায়ভিত্তিক প্রকল্প বন্টন : ইউনিয়ন পরিষদে প্রকল্প বন্টনের ক্ষেত্রে নারী সদস্যগণ বৈষম্যের শিকার হয়। উন্নয়নমূলক কোনো প্রকল্পে সাধারণত নারী সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। পুরুষ সদস্যরাই এ ধরনের প্রকল্পের দায়িত্ব পালন করে, যা নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ। 

কাজেই লিকা বিবেচনা না করে নারী ও পুরুষ সবার মধ্যেই সমানভাবে প্রকল্প বন্টন করতে হবে। এতে নারী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে এবং পরিষদে নারীর কার্যকর ভূমিকা বৃদ্ধি পাবে।

৭. পুরুষতন্ত্রের উচ্ছেদ : বাংলাদেশের পুরুষতান্ত্রিক সমাজকাঠামো বিদ্যমান। সমাজে সবক্ষেত্রেই পুরুষই নীতিনির্ধারণ করে থাকে। তাই নারীদের সবক্ষেত্রে হীন ও দুর্বল ভাবা হয়। 

নারী-পুরুষের বৈষম্যের মূলে রয়েছে পুরুষতন্ত্র। সুতরাং সমাজ থেকে পূরুষতন্ত্রকে উচ্ছেদ করতে পারলেই নারী-পুরুষ সমতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং পরিষদে নারীর ভূমিকা বৃদ্ধি পাবে।

উপসংহার : উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা পুরুষতান্ত্রিক। আর পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আবহমানকাল ধরে নারী দুর্বল ও অদক্ষ, অকর্মঠ জ্ঞান করা হচ্ছে। 

ফলে ইউনিয়ন পরিষদের পুরুষ সদস্যরা তাদের মূল্যায়ন করছে না; বরং তাদের অধস্তন করে রাখছে। নারীর প্রতি এরূপ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে পারলে ইউনিয়ন পরিষদে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ