ইউনিয়ন পরিষদে নারী সদস্যদের সমস্যা দূরীকরণের উপায় বা পদক্ষেপসমূহ আলোচনা কর
ইউনিয়ন পরিষদে নারী সদস্যদের সমস্যা দূরীকরণের উপায় বা পদক্ষেপসমূহ আলোচনা কর |
ইউনিয়ন পরিষদে নারী সদস্যদের সমস্যা দূরীকরণের উপায় বা পদক্ষেপসমূহ আলোচনা কর
- অথবা, ইউনিয়ন পরিষদে নারী সদস্যদের সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের উপায় বা পদক্ষেপসমূহ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা: বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার বাবস্থায় তথ্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসন প্রবর্তন করা হয়েছে।
কিন্তু রাজনৈতিক অসচেতনতা এবং রাজনৈতিক দলসমূহের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ও অসহযোগিতামূলক মনোভাব, সন্ত্রাস ও পেশিশক্তির প্রভাব, প্রশাসনসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষপাত ও নারী অধিকার সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব এবং নারী সংগঠনসমূহের মধ্যে নেটওয়ার্কিং ও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ না থাকার কারণে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত নারী সদস্যরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। এজন্য তাদের সমস্যাসমূহ দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে।
ইউনিয়ন পরিষদে নারী সদস্যদের সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের উপায় বা পদক্ষেপ : ইউনিয়ন পরিষদে নারী সদস্যদের বিভিন্নমুখী সমস্যা রয়েছে। নিম্নে ইউনিয়ন পরিষদে নারী সদস্যদের সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের উপায় বা পদক্ষেপসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি : নারীরা অর্থনৈতিকভাবে পুরুষের ওপর নির্ভরশীল। এজন্য নির্বাচনি ব্যয় বহন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।
তাই তাদের কর্মস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানের জন্য কাজ করতে হবে। তাহলে তাদের ক্ষমতায়ন ঘটবে। ফলে তাদের সমস্যা থাকবে না।
২. জেন্ডার বৈষম্য দূরীকরণ ; ইউনিয়নে জেন্ডার বৈষম্য ব্যাপকভাবে লক্ষ করা যায়। তাই সাধারণ সদস্যরা নারী সদস্যদের মূল্যায়ন করে না।
সদস্যরা যাতে ইউনিয়নের কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে । ইউনিয়নে এভাবে নারী- -পুরুষ জেন্ডার বৈষম্য দূরীভূত করতে হবে।
৩. পারস্পরিক পরামর্শ : ইউনিয়নের পুরুষ সদস্যগণ নারী সদস্যদের কাজে বাধা দেয়। তারা নারী সদস্যদের পাত্তা দেয় না। তাদের ছাড়া মিটিং করে ও সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
ফলে নারী সদস্যরা কাজ করতে পারে না। তাছাড়া বিভিন্নভাবে তাদের কাজে বাধা প্রদান করে। এটি নারীদের জন্য একটি বড় সমস্যা।
এজন্য নারী সদস্যদের কাজের ক্ষেত্রে এসব বাধা দূর করতে হবে এবং সব কার্যক্রমে তাদের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
৪. যৌন হয়রানি রোধ : যৌন হয়রানি নারী সদস্যদের জন্য একটি বড় সমস্যা। ইউনিয়নের মিটিং প্রায়ই রাতে অনুষ্ঠিত হয়। তাই তারা পুরুষ সদস্যদের দ্বারা প্রায়ই যৌন হয়রানির শিকার হয়। নারী সদস্যদের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা। এটি দূর করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫. পুরুষের আধিপত্য হ্রাস : পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধ দূর করতে হবে এবং নারীর স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। নারীর ওপর পুরুষের আধিপত্য দূর করতে পারলে নারীরা সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারবে। তাদের সমস্যা দূরীভূত হবে।
৬. শিক্ষার অভাব : ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণের একটি বড় সমস্যা। শিক্ষা না থাকার কারণে তারা রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ নয়।
সুতরাং তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধে জাত করার জন্য তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে।
৭. পারিবারিক সহযোগিতা : পারিবারিক সমস্যা ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা বা সমস্যা। স্বামী ও পরিবারের সদস্যরা কাজে বাধা সৃষ্টি করে।
এ কারণে নারী পরিষদে সময় দিতে পারে না। তাছাড়া পরিবারেও নারী দ্বৈত ভূমিকা পালন করে। আর এক্ষেত্রে পুরুষ সদস্যগণ নারীদের সহযোগিতা করলে তাদের সমস্যা দূর হবে।
৮. রাজনীতি সচেতনতা বৃদ্ধি : নারীদের ইউনিয়ন পর্যায়ে রাজনীতিকীকরণ ঘটেনি। এটির কারণ শিক্ষা সামাজিকীকরণের অভাব। ইউনিয়ন পর্যায়ে শিক্ষা ও সচেতনতা বাড়াতে পারলে নারীরা রাজনীতি সচেতন হবে এবং তাদের কর্মকাণ্ড ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে।
৯. কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি : নারীর কর্মদক্ষতা কম। তাই তারা পিছিয়ে রয়েছে। সুতরাং নারীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তাদের প্রশিক্ষণ এবং ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে তাদের দক্ষতা ও অংশগ্রহণ বাড়বে ।
১০. ভাতা ও সম্মানি বৃদ্ধি : ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্যদের ভাতা ও সম্মানি খুবই কম। তাই তাদের ভাতা ও সম্মানি বাড়াতে হবে। এটি তাদের কর্মস্পৃহা বাড়াবে এবং তারা দায়িত্ব কর্তব্য পালনে অনেকটা সচেতন হবে।
১১. উপস্থিতি : নারী সদস্যদের ইউনিয়নের সভার উপস্থিতি 'বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং তাদের উপস্থিতি নিরীক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে তাদের পরিষদে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করবে।
১২. পেশিশক্তি রোধ : পেশিশক্তি প্রদর্শন ইউনিয়ন পরিষদে নারীর জন্য একটি সমস্যা। নারীরা পেশিশক্তিকে ভয় পায়। তারা ভোটের সময় এবং নির্বাচনের পর ভয়ভীতির মধ্যে থাকে। এটি তাদের জন্য একটি বড় সমস্যা। এজন্য পেশিশক্তির প্রভাব কমাতে হবে।
১৩. কর্মনির্ধারণ : নারী সদস্যদের ইউনিয়ন পরিষদে নিজস্ব কোনো কাজ নেই। তারা চেয়ারম্যান ও পুরুষ সদস্যদের ওপর নির্ভরশীল।
তাদের ইউনিয়নের কাজে সক্রিয় করতে হবে তাদের জন্য বিশেষ কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। এভাবে কর্ম বিভাগ হলে তাদের অংশগ্রহণ বাড়বে এবং সমস্যা দূর হবে।
১৪. অংশগ্রহণ : ইউনিয়নে নারী সদস্যদের আর একটি বড় সমস্যা হলো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণের অভাব তারা সন্ত্রাস, নিরাপত্তাহীনতা পেশিশক্তির দাপটে ইউনিয়নের কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারে না। তাই তাদের ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য এসব সমস্যা দূর করা জরুরি।
১৫. নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ : ইউনিয়ন পরিষদে নারীর নিরাপত্তা একটি বড় সমস্যা। এজন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাও একটি বড় বিষয়। তাই রাস্তাঘাট নির্মাণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে এবং তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে হবে। এতে নারীরা ব্যাপকভাবে ইউনিয়নের কর্মকাণ্ডে অংশ নেবে।
১৬. গ্রাম আদালতে অংশগ্রহণ : গ্রাম আদালতে নারী সদস্যের অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি করতে হবে এবং সেই সাথে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে । এটি করতে পারলে তারা কাজে অনুপ্রাণিত হবে ।
১৭. ক্ষমতায়ন : নারীর ক্ষমতায়নের অভাব নারী সদস্যদের আরও একটি বড় সমস্যা। জাতীয় জীবনেও তাদের ক্ষমতায়ন ঘটেনি। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদেও তাদের ক্ষমতায়ন নেই।
ফলে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে নারীরা তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে না। সুতরাং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে নারীর অংশগ্রহণ খুবই কম। বিভিন্ন সমস্যা এজন্য দায়ী। এর মধ্যে জেন্ডার বৈষম্যই প্রধান ।
তাই উপযুক্ত শর্ত পালন করলে ইউনিয়ন পরিষদে জেন্ডার বৈষম্য দূর হবে এবং নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পাবে। আর ইউনিয়ন পরিষদে ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেলে জাতীয় পর্যায়েও নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পাবে।