রাজনৈতিক অংশগ্রহণের গুরুত্ব আলোচনা কর
রাজনৈতিক অংশগ্রহণের গুরুত্ব আলোচনা কর |
রাজনৈতিক অংশগ্রহণের গুরুত্ব আলোচনা কর
- অথবা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বলতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং কার্যকলাপে জনগণের অংশগ্রহণকে বুঝায়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার মূলভিত্তি হচ্ছে জনগণের অংশগ্রহণ।
তাই আধুনিক বিশ্বের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
তাছাড়া সরকারকে জনকল্যাণে কাজ করার পিছনে জনগণের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ সুনাগরিকের গুণাবলি প্রকাশ করে।
রাজনৈতিক অংশগ্রহণের গুরুত্ব : রাজনৈতিক অংশগ্রহণের গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
১. সুশাসনের মূলভিত্তি : রাজনৈতিক অংশগ্রহণ সুশাসনের মূলভিত্তি হিসেবে কাজ করে। অংশগ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাষ্ট্রকে অধিকতর ক্ষমতাশীল করা।
গণতান্ত্রিক কার্যপ্রণালিতে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে ভোট প্রদান। এ ধরনের সরাসরি অংশগ্রহণ যেমন গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করে তেমণি সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
২. রাজনৈতিক জ্ঞানলাভ : জনগণের রাজনৈতিক জ্ঞানের প্রসারে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা রাজনৈতিক জ্ঞানলাভের অন্যতম মাধ্যম হলো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং কার্যকলাপে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা।
এর ফলে ব্যক্তি তার রাজনৈতিক জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয় এবং রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে অবদান রাখে।
৩. উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি : রাজনৈতিক অংশগ্রহণ একটি দেশে উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যেদেশের জনগণ রাজনীতি সম্পর্কে যত বেশি সচেতন এবং সক্রিয় থাকে সেদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি তত বেশি উন্নত হয়। তাই উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরিতে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের গুরুত্ব অপরিসীম।
৪. সরকারি নীতি গ্রহণে অংশগ্রহণ : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জনগণের মতামত গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। তাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণ রাজনৈতিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সরকারি নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে তাদের সুচিন্তিত মতামত প্রকাশ করতে পারে, যা সরকারের স্বচ্ছতাকে নিশ্চিত করে।
৫. নেতৃত্বের বিকাশ : জনগণের নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের গুরুত্ব অপরিসীম। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে।
তারা ধীরে ধীরে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও কার্যকলাপ সম্পর্কে দক্ষ হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে সময়োর ধারাবাহিকতায় স্থানীয় নেতৃত্ব থেকে জাতীয় নেতৃত্বের পূর্ণতা লাভ করে।
৬. সামাজিক সমস্যার সমাধান : বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানে জনগণের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উন্নয়নশীল দেশে বহু সামাজিক সমস্যা বিদ্যমান থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো যৌতুক, মাদক, বাল্যবিবাহ, সন্ত্রাস প্রভৃতি।
সরকারের একার পক্ষে এসব সামাজিক সমস্যা সম্পূর্ণরূপে দূর করা সম্ভব নয়। কিন্তু জনগণের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা পেলে সরকার এসব সমস্যা সমাধানে সফল হতে পারে।
৭. দেশপ্রেম তৈরি : রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ব্যক্তির মধ্যে দেশপ্রেম জান্নাত করে। আর একটি রাষ্ট্রের সফলতা তার জনগণের দেশপ্রেমের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।
দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ জনগণ দেশের যাবতীয় বিশৃঙ্খলা দূর করতে সচেষ্ট থাকে। এমনি দেশে বহিঃশত্রু আক্রমণ করলে নিজের জীবন দিয়ে হলেও মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে সচেষ্ট থাকে।
৮. মানবাধিকার নিশ্চিত করা : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্যতম উপাদান হলো মানবাধিকার নিশ্চিত করা। কিন্তু অনেক সময় স্বেচ্ছাচারী সরকার দেশের জনগণের মানবাধিকারে হস্তক্ষেপ করে।
তাই মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য জনগণের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যক। জনগণ বিভিন্ন প্রতিবাদমূলক মিছিল এবং সমাবেশে যোগদানের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।
৯. দুর্নীতিরোধ : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মাত্রাতিরিক্ত দুর্নীতি রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলছে। তাই প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি।
আর সেজন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো রাজনৈতিক অংশগ্রহণ। কেননা জনগণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দুর্নীতি রোধ করতে সহযোগিতা করতে পারে।
১০. সরকার ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন : সরকার ও জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের গুরুত্ব অপরিসীম। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা অত্যাবশ্যক। আর সে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে জনগণের অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যক।
জনগণ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নীতি গ্রহণে তাদের সুচিন্তিত মতামত প্রকাশের মাধ্যমে সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহযোগিতা করে। ফলে সরকার ও জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়।
১১. গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা : জনগণের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ মূলত গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা মূলত জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা পরিচালিত ব্যবস্থা।
তাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জনগণের মতামতই প্রাধান্য পায়। তাই গণতন্ত্রকে সুদৃঢ়ীকরণে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের গুরুত্ব অপরিসীম।
১২. সার্বিক উন্নয়ন : রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সাথে একটি সমাজের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। কারণ সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ প্রয়োজন ।
জনগণ যখন মনে করে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ তাদের উন্নয়ন করছে তখন তারা ব্যাপকভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে, যা সার্বিক উন্নয়ন ঘটায়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রাজনৈতিক অংশগ্রহণের গুরুত্ব অপরিসীম। রাজনৈতিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রতিনিধি নির্বাচন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে পারে।
রাজনৈতিক অংশগ্রহণ গণতন্ত্রকে সুসংহতকরণ, নেতৃত্বের বিকাশ, দেশপ্রেম সৃষ্টি, রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
সর্বোপরি দেশে উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।