পরিবেশ পরিবর্তনের কারণগুলো কি কি । পরিবেশ পরিবর্তনের কারণগুলো আলোচনা কর
পরিবেশ পরিবর্তনের কারণগুলো কি কি । পরিবেশ পরিবর্তনের কারণগুলো আলোচনা কর |
পরিবেশ পরিবর্তনের কারণগুলো কি কি । পরিবেশ পরিবর্তনের কারণগুলো আলোচনা কর
ভূমিকা : পরিবেশ পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া । পৃথিবীর সৃষ্টির লগ্নে পরিবেশ যেমন বর্তমানে তা নেই। অনেক পরিবর্তন ও রূপান্তরের মধ্য দিয়ে পরিবেশ আজকের অবস্থানে এসেছে।
পরিবেশের এই পরিবর্তন দুভাবে ঘটে থাকে। একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ও অপরটি অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অস্বাভাবিক | প্রক্রিয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে পরিবেশের জন্য।
→ পরিবেশ পরিবর্তনের কারণ : পরিবেশ পরিবর্তনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি হচ্ছে পরিবেশের উপাদানগুলোর মধ্যে আন্তঃক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট ইকোসিস্টেম তথা পরিবেশের কাঠামোগত পরিবর্তন এবং অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া হচ্ছে মানুষের লাগামহীন ও অনিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ডের ফলে পরিবেশের উপাদানগুলোর ধ্বংস, ক্ষয় ও দূষণের মাধ্যমে পরিবর্তন। বর্তমান বিশ্বে পরিবেশের পরিবর্তন হচ্ছে পরিবেশের উপাদানগুলোর দূষণ ও ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে।
নিম্নে পরিবেশের পরিবর্তনের কারণগুলো আলোচনা করা হলো :
১. অধিক জনসংখ্যা : জনসংখ্যা পরিবেশের অন্যতম উপাদান। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে দ্রুতই জনসংখ্যার ঊর্ধ্বগতি এমন এক পর্যায় পৌঁছেছে যে এই বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্য, আবাসন প্রভৃতি ব্যবস্থা করতে গিয়ে পরিবেশের উপর চাপ পড়ছে, নিন দিন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ বাড়লেও সে হারে উৎপাদনের জন্য জমি বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
যার ফলে মানুষ তার মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পরিবেশের ওপর ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাচ্ছে। এভাবে অধিক জনসংখ্যার চাপ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং পরিবেশের পরিবর্তন ঘটছে অটেকসই প্রক্রিয়ায়।
২. পরিবেশ দূষণ : ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হওয়ার আগে পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ু তথা সমগ্র পরিবেশের যে জলবায়ু তথা সমগ্র পরিবেশের যে স্বাভাবিক এবং দূষণযুক্ত নির্মল অবস্থা ছিল, আজ তা সুদূর কল্পনামাত্র।
শিল্পবিপ্লবের শুধু ইংল্যান্ড নয় বিশ্বের সমগ্র দেশে শিল্পের অগ্রযাত্রা বিস্তার লাভ করে। আর এতে শিল্পের নিয়ামক কলকারখানার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, রাসায়নিক বর্জ্য ও পদার্থ প্রভৃতি ছড়িয়ে পড়ে।
পরিবেশ দূষিত হতে থাকে। এভাবে মানুষ পরিবেশের উপাদানগুলোর দূষণের মাধ্যমে যেমন- বায়ু, মাটি, পানি, শব্দ প্রভৃতির দূষণ ঘটাচ্ছে।
৩. নগরায়ণ ও পরিবেশের উপর এর প্রভাব : নগরায়ণ জনজীবনে বহুবিধ স্বাচ্ছন্দ্য ও সুবিধা প্রদান করেছে। কিন্তু অপরিকল্পিত ও দ্রুত নগরায়ণ পরিবেশের জন্য ডেকে এনেছে বিপর্যয়। নগরায়ণের ফলে ডেকে এনেছে বিপর্যয়।
নগরায়ণের ফলে যত্রতত্র আবর্জনা, পয়ঃপ্রণালির অপ্রতুলতা, উন্মুক্ত জমির দুষ্প্রপ্যতা, নিকটবর্তী অরণ্য, জলাভূমির সংকোচন ও ভরাট প্রভৃতি পরিবেশ বিবর্তন করে নগরকে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী করে তুলেছে।
৪. শিল্পায়ন ও পরিবেশের উপর প্রভাব : বর্তমান মানব সভ্যতার উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে শিল্পায়ন। কিন্তু এই শিল্পায়নের প্রভাব অনিবার্যভাবে পরিবেশের উপর পড়ে।
এর জন্য কৃষি, অরণ্য ও বসতযোগ্য জমি এমনকি জলাভূমির সংকোচন ঘটেছে। শিল্পায়নের জন্য খনিজ উত্তোলনকালে খনিজপূর্ণ বাতাসে মিশে গিয়ে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এছাড়া শিল্পায়ন তরল বর্জ্য দূষণ ঘটায়।
জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু শিল্পাঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময়ে ক্লোরিন ও নাইট্রোজেন অক্সাইড সমৃদ্ধ হয় এবং বৃষ্টির সঙ্গে এই বিষাক্ত গ্যাসগুলো ভূমি ও জলভাগে পড়ে দূষণ ঘটায় ।
৫ বৈশ্বিক উষ্ণতা : গ্রিন হাউস গ্যাস তথা CFC (ক্লোরোফ্লোরো কার্বন) নির্গমনের ফলে ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগে অবস্থিত ওজোন স্তর ছিদ্র হয়ে সূর্যের অতি তেজস্ক্রিয় বেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে বিনা বাধায় পতিত হচ্ছে এবং দিনের বেলায় পতিত আলো বাতাসের অধিক ধূলি, কার্বন ও অন্যান্য গ্যাসীয় পদার্থের সাথে মিশে ভূ-পৃষ্ঠে অধিক তাপ আটকা পড়ছে।
যার ফলে একদিকে কার্বন গ্যাস প্রাণিজগতের ক্ষতি করছে ও অন্যদিকে আটকা পড়া তাপের ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপ তথা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আর বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে দুই মেরু ও হিমালয় বৃহৎ পবর্তশৃঙ্গে জমাট বাধা বরফ গলতে শুরু করছে এবং পরিবেশ পরিবর্তন করে এর জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পরিবেশের পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু মনুষ্যসৃষ্ট কারণে পরিবেশের অস্বাভাবিক পরিবর্তন এর স্বাভাবিক পরিবর্তনকে ব্যাহত করে ত্বরিত বা ধীর গতির আকস্মিক বা দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর পরিবর্তন আনে।
এই পরিবর্তন সমগ্র প্রাণী ও জীবজগতের জন্য বিপদজ্জনক। কারণ এতে এদের অস্তিত্ব ভয়ংকর সংকটের মুখে পতিত হয়।