কেন্দ্রীয় প্রশাসন ও মাঠ প্রশাসনের পার্থক্য কী কী
কেন্দ্রীয় প্রশাসন ও মাঠ প্রশাসনের পার্থক্য কী কী |
কেন্দ্রীয় প্রশাসন ও মাঠ প্রশাসনের পার্থক্য কী কী
- অথবা, কেন্দ্রীয় প্রশাসন ও মাঠ প্রশাসনের বৈসাদৃশ্য লেখ।
উত্তর : ভূমিকা : কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার আঞ্চলিক ও স্থানীয় সংস্থাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব অর্পণ করে।
আঞ্চলিক পর্যায়ে কেন্দ্র থেকে কর্মচারী প্রেরিত হয়, আবার এ কর্মচারীরা কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। তবে একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন নির্ভর করে প্রশাসনের দক্ষতা ও সুষ্ঠু কার্যাবলি সম্পাদনের মাধ্যমে। ©
কেন্দ্রীয় প্রশাসন ও মাঠ প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য : নিম্নে কেন্দ্রীয় প্রশাসন ও মাঠ প্রশাসনের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্যসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. সংজ্ঞাগত : যে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব শুধু কেন্দ্রীয় অফিসের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে তাকে কেন্দ্রীয় প্রশাসন বলে। অপরদিকে, রাষ্ট্রকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলে বিভক্ত করে স্থানীয়ভাবে যে প্রশাসন পরিচালনা করে থাকে তাকে মাঠ প্রশাসন বলে।
২. দুর্নীতির মাত্রা : মাঠ প্রশাসনে ক্ষমতা বহুজনের হাতে ন্যস্ত থাকায় দুর্নীতি বৃদ্ধি পায় ও দমন কঠিন হয়ে যায়। তবে কেন্দ্রীয় প্রশাসনে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব কিছু মানুষের নিকট থাকায় দুর্নীতি দমন সহজ হয়।
৩. প্রশাসনিক কার্যসম্পাদনগত : কেন্দ্রীয় প্রশাসনে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে কাজ করা সম্ভব হয় না। কিন্তু মাঠ প্রশাসনে কর্ম বিভাজন থাকায় যেকোনো কাজে সুষ্ঠুতা অর্জন সম্ভব হয়।
৪. ঐক্য ও সমন্বয়গত : কেন্দ্রীয় প্রশাসনের আকৃতি বিশাল হওয়ায় সব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে ঐক্য ও সমন্বয়সাধন সম্ভব হয় না। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঙ্গিকে ক্ষমতার বিভাজন থাকায় ঐক্য ও সমন্বয়সাধন সম্ভবপর হয়।
৫. সরকারি সুবিধা প্রদানগত : পরিধির ব্যাপকতার কারণে কেন্দ্রীয় প্রশাসনে সব জনগণের নিকট সরাসরি সেবা পৌঁছানো দুরূহ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, মাঠ পর্যায়ে জনতার সেবামূলক সুবিধা প্রদান বেশ সহজ।
৬. আকার বা পরিধি : কেন্দ্রীয় প্রশাসন সমগ্র ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করায় এর আকার যথেষ্ট বড়। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনকে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করায় পরিধি যথেষ্ট ছোট
৭. জবাবদিহিতা : মাঠ পর্যায়ে যারা থাকেন তারা কেন্দ্রীয় প্রশাসনকে জবাব দিতে বাধ্য বিধায় তাদের জবাবদিহিতা বেশি। তবে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের অবাবদিহিতা অপেক্ষাকৃত কম।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক কল্যাণরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায় এ দুই ধরনের প্রশাসনের উপস্থিতি প্রায় সমভাবে লক্ষ করা গেলেও উভয়ের মাঝে পার্থক্য বিদ্যমান।
তবে উভয়ের উপযোগিতাই সমধিক। তাই আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনের গুরুত্ব অপরিসীম।