বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসনের সমস্যাসমূহ আলোচনা কর

বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসনের সমস্যাসমূহ আলোচনা কর
বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসনের সমস্যাসমূহ আলোচনা কর

বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসনের সমস্যাসমূহ আলোচনা কর

  • অথবা, বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসনের সীমাবদ্ধতাসমূহ আলোচনা কর। 

উত্তর : ভূমিকা : একটি দেশের সুষ্ঠু প্রশাসন ব্যবস্থা দেশের সার্বিক অগ্রগতির পূর্বশর্ত। দেশের সব জনগণের চাহিদা ও স্বার্থ নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। 

আর সেজন্য সরকার একটি দক্ষ ও যোগ্য মাঠ প্রশাসন। কারণ শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় প্রশাসন দেশের সব স্তরের জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। মাঠ প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হলো জনগণের ধারে রাষ্ট্রীয় সেবা পৌঁছে দেওয়া। 

বাংলাদেশে মাঠ প্রশাসন দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। তবে বিভিন্ন সেবা প্রদান করতে গিয়ে মাঠ প্রশাসনকে কতিপয় প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়।

© বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসনের সমস্যা : বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসনকে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করতে গিয়ে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কতিপয় সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। 

নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো :

অভ্যন্তরীণ সমস্যা : নিম্নে মাঠ প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ সমস্যাসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. স্থানীয় কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্ব : বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসনের অন্যতম একটি সমস্যা হলো স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতার অভাব। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় আঞ্চলিক পর্যায়ে তাদের বিভাগ স্থাপনের মাধ্যমে নাগরিক সেবা প্রদান করে থাকে। 

কিন্তু আঞ্চলিক কর্মকর্তাগণ এক বিভাগের সাথে অন্য বিভাগের পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয়সাধন করতে ব্যর্থ হয়। ফলে বিভিন্ন আঞ্চলিক বিভাগীয় কর্মকর্তাগণের মধ্যে মতানৈক্য ও দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।

২. বিভাগগুলোর সমন্বয়ের অভাব : বাংলাদেশের মাঠ শাসনের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে বিভিন্ন আঞ্চলিক বিভাগসমূহের সমন্বয়ের ওপর। 

কিন্তু সঠিক নির্দেশনার অভাবে মাঠ প্রশাসনের বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয় হচ্ছে না, যা মাঠ প্রশাসনের অন্যতম বড় একটি সমস্যা। কাজেই মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়হীনতা মাঠ প্রশাসনের সফলতাকে বিঘ্নিত করছে।

৩. রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ : মাঠ প্রশাসনের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে জেলা প্রশাসকদের পদটিই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়। তারা প্রশাসনিক ও আর্থসামাজিক কর্মকাণ্ড সমন্বয় এবং সরকারের নীতি বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকেন কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন কাজে হস্তক্ষেপ করে, যা মাঠ প্রশাসনের কাজকে বাধাগ্রস্ত করে। কাজেই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এদেশের মাঠ প্রশাসনের অন্যতম একটি সমস্যা। 

৪. কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা থেকে প্রাপ্ত দ্বন্দ্ব : কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সব ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে ছিল। তখন সব কর্তৃত্ব ছিল কেন্দ্রীয় কর্মকর্তাদের হাতে। 

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হয়েছে ঠিকই কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়নের ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিকল্পনা ও নীতি বাস্তবায়নের স্বাধীন ক্ষমতা দেওয়া হয়নি মাঠ প্রশাসনকে। কাজেই কেন্দ্রের কর্তৃত্ব প্রদানের অনীহা বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসনের সফলতার প্রধান অন্তরায়।

৫. আমলাতান্ত্রিক মানসিকতা : একটি দেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য দেশের আমলাদের নিজস্বার্থের পরিবর্তে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া অত্যাবশ্যক। 

কিন্তু ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই আমলাদের যে উচ্চ মানসিকতা সেটি আজও রয়েছে। তারা নিজেদেরকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে একটি আফলাতান্ত্রিক মানসিকতা পোষণ করে। 

ফলে তারা নিজেদের গোষ্ঠীগত স্বার্থ ও মর্যাদাকে রক্ষা করতে সচেষ্ট থাকে। এটি মাঠ প্রশাসনের অন্যতম একটি সমস্যা। 

বাহ্যিক সমস্যা : নিয়ে মাঠ প্রশাসনের বাহ্যিক সমস্যাসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. দুর্নীতি : বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসনের অন্যতম একটি বাহ্যিক সমস্যা হলো দুর্নীতি। প্রায়ই স্থানীয় মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। 

তারা জনগণের স্বার্থ রক্ষা না করে নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে দুর্নীতির পথ অবলম্বন করে। দুর্নীতির ফলে মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। কাজেই এটি অন্যতম একটি সমস্যা। 

২. জনপ্রতিনিধিগণের বেপরোয়া আচরণ : বাংলাদেশে জনপ্রতিনিধিগণের বেপরোয়া আচরণ মাঠ প্রশাসনের একটি বড় সমস্যা। তৃতীয় বিশ্বের অগ্রসরমান অর্থনীতি এবং বিকাশমান বা কম বিকশিত গণতন্ত্রের দেশসমূহে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রায়ই অনুরূপ প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। 

এসব দেশে যখন যেই দল সরকারে থাকে। তখন সেই দলের জনপ্রতিনিধিগণ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে স্থানীয় প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করে।

৩. অর্থসংকট : বাংলাদেশে মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজকর্মের বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে। বাংলাদেশে মাঠ পর্যায়ে আয়ের উৎস সীমাবদ্ধ। 

ফলে বিভিন্ন উৎস থেকে ঠ প্রশাসনের যা আয় হয় তা দিয়ে বড় কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। 

তাই মাঠ প্রশাসন কেন্দ্রীয় প্রশাসনের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতার জন্য অপেক্ষা করে। কাজেই অর্থের অভাব মাঠ প্রশাসনের অন্যতম প্রধান সমস্যা।

৪. বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ : বাংলাদেশে মাঠ প্রশাসনকে কতিপয় ক্ষেত্রে বিচারকার্য সম্পাদন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মাঠ প্রশাসনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক, TNO এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিচার সম্পাদন করতে পারেন, যা প্রকৃতপক্ষে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ।

৫. দলীয়করণ : বাংলাদেশে মাঠ প্রশাসনের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো রাজনৈতিক দলীয়করণের চাপ। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল মাঠ প্রশাসনকে বিভিন্নভাবে দলীয়করণ করার চেষ্টা করে। 

তারা প্রায়ই প্রশাসনের ওপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে প্রভাবিত করতে চায়। ফলে মাঠ প্রশাসনের কার্যক্রম বাধাপ্রাপ্ত হয়।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দিক দিয়ে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসনের যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলোর সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি। 

বিশেষ করে মাঠ প্রশাসনের ওপর রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের চাপ ও প্রভাব দূর করা অত্যাবশ্যক। অন্যথায় মাঠ প্রশাসন তার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবে না। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ