বনায়নের পরিবেশগত ভূমিকা কি। বনায়নের পরিবেশগত গুরুত্ব লেখ
বনায়নের পরিবেশগত ভূমিকা কি। বনায়নের পরিবেশগত গুরুত্ব লেখ |
বনায়নের পরিবেশগত ভূমিকা কি। বনায়নের পরিবেশগত গুরুত্ব লেখ
- অথবা, বনায়নের পরিবেশগত উপকারিতাগুলো কি কি?
- অথবা, বনায়নের পরিবেশগত ভূমিকাগুলো কি কি?
উত্তর : ভূমিকা : বনায়ন একটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা দরকার। কিন্তু আমাদের দেশে বনভূমি রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
বনভূমির ভূমিকা অপরিসীম। কারণ বনভূমি বায়ুমণ্ডল হতে ক্ষতিকর CO2 গ্যাস গ্রহণ করে এবং ত্যাগ করে পরিবেশকে নির্মল রাখে। আমাদের দেশে
প্রয়োজনীয় পরিমাণ বনভূমি থাকলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিমাণ অনেক কমে যেত। আমাদের দেশে সাধারণত যেসব জায়গায় চাষাবাদ করা হয় না অর্থাৎ পতিত জমি সেসব এলাকায় বিভিন্ন ধরনের সামাজিক বনায়ন তৈরি করতে দেখা যায়, বনভূমি আমাদের দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে।
এ বনের পরিবেশগত গুরুত্ব আমাদের দেশে বনায়নের পরিবেশগত গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ বনায়ন পরিবেশের মধ্যে বাস্তুসংস্থানের একটা ভারসাম্য বিরাজ করে।
কিন্তু কোনো কারণে এ বনভূমি ধ্বংস হলে প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য তা নানা ধরনের অকল্যাণ বয়ে আনবে। নিম্নে বনায়নের পরিবেশগত গুরুত্ব দেওয়া হলো
১. প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে বাধা : আমাদের দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের দেশের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। যেমন- বন্যার পরিমাণ বৃদ্ধি, নদীভাঙন বৃদ্ধি, এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিমাণ অনেক কমে যায়।
২. মরুকরণরোধ : মরুকরণ হলো সেই প্রক্রিয়া যেখানে কোনো গাছপালা জন্মানোর পরিবর্তে মরু বা বালির এবং অনুর্বর মাটির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
আমাদের দেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য | দেশে পর্যাপ্ত বনভূমির অভাবে মরুকরণ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
৩. তাপমাত্রা সমতা রাখা : বায়ুমণ্ডলের আপমাত্রা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়ার অন্যতম কারণ হলো বনভূমি ধ্বংস।
কারণ বনায়ন বায়ুমণ্ডল হতে বিষাক্ত CO, গ্রহণ করে যা বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। আর পরিবেশ বান্ধব o ত্যাগ করে যা পরিবেশ নির্মল রাখতে সাহায্য করে।
৪. ভূমিক্ষয় রোধ : বর্তমানে প্রায় প্রতিটি দেশের জন্য ভূমিক্ষয় একটি অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ দুর্যোগের ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয় এবং মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয়।
আর গাছপালা ভূমিক্ষয় রোধ করে। কারণ গাছপালার পাতা ও শিকড় পানির ধোয়ানি হতে মাটিকে রক্ষা করে। সুতরাং মাটির উর্বরতা নষ্ট হয় না।
৫. বন্যা : বন্যা আমাদের দেশের জন্য অতিপরিচিত একটি মারাত্মক দুর্যোগ। প্রায় প্রতিবছর আমাদের দেশে বন্যার সৃষ্টি হয়। আমাদের দেশে যে ধরনের বন্যা হয় তার মধ্যে মৌসুমী বন্যার ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়।
বন্যা সাধারণত নদীর পানি উপচে পড়ে বা নদীভাঙনের ফলে হয়ে থাকে। গাছপালা বেশি লাগালে এ ভাঙন রোধ করা যায়। তাছাড়া বনভূমির পরিমাণ বেশি থাকলে পর্যাপ্ত দৃষ্টিপাত হয় যা বন্যা প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে ।
৬. খরা : বন্যার মতো খরাও আমাদের দেশের একটি অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগ। খরা বলতে বুঝায় সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়া। খরার কারণে ফসল উৎপাদন ব্যহৃত হয়। আমাদের দেশে খরার কারণে উত্তরবঙ্গে মঙ্গা দেখা দিচ্ছে।
আর চাষাবাদের জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে । যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বনভূমি থাকে তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হত এতে খরার পরিমাণ অনেক কমে যেত। সুতরাং খরা প্রতিরোধে বনভূমির গুরুত্ব অপরিসীম।
৭. ঘূর্ণিঝড় ও সাইক্লোন রোধ : ঘূর্ণিঝড় ও সাইক্লোন একটি দেশের জন্য চরম সাময়িক ও আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ দুর্যোগের ফলে বহু মানুষ মারা যায়।
আমাদের দেশে উপকূলীয় এলাকায় এ ধরনের দুর্যোগ বেশি দেখা যায়। এজন্য বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। কারণ বনায়নের পরিমাণ বেশি থাকলে এ দুর্যোগের ক্ষতিকর বিষয়াবলী অনেক কমে যায়।
৮. ধুলাবালি ও দুর্গন্ধ শোষণ : গাছপালার কাজ হলো পরিবেশের ক্ষতিকর উপাদানগুলো শোষণ করা ও ধূলিকণা শোষণ করা। কারণ গাছপালা বায়ু হতে ক্ষতিকর CO, গ্রহণ করে পরিবেশ দূষণ রোধ করে। সুতরাং ধুলাবালি ও দুর্গন্ধ শোষণে গাছপালার গুরুত্ব অপরিসীম।
৯. অন্যান্য দূষণ রোধ : গাছপালা একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ দূষণ রোধে বনায়নের ভূমিকা অপরিসীম। কারণ বনায়ন পরিবেশ হতে ক্ষতিকারক দূষণকারি পদার্থ শোষণ করে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে বনায়নের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বাড়ার কারণে আমাদের দেশে বাসাবাড়ি তৈরি করার জন্য বনভূমি কেটে ফেলা হচ্ছে।
আমাদের দেশে সরকারি হিসাব মতে বর্তমানে ১৭.০২ ভাগ বনভূমি রয়েছে। এ বনভূমির পরিমাণ যদি বাড়ানো না যায় তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আরো বেড়ে যাবে।
সুতরাং পরিবেশ রক্ষায় বনায়নের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের দেশের বনভূমির পরিমাণ বাড়াতে হলে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের দেশে মানুষ অসতর্কতা ও অসচেতনতার ফলে বনভূমি ধ্বংস করে ফেলছে।
এতে পরিবেশের উপর একটা বিরূপ প্রভাব পড়ছে। মানুষের মাঝে বনায়নের সামগ্রিক গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। এতে তারা | বনায়নের গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত হবে।
উপসংহার : উপরের আলোচনা হতে পরিশেষে বলা যায় যে, বনভূমি আমাদের দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ বনায়নের কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ টিকে আছে।
এ বনায়নের পরিমাণ যদি কোনো কারণে অনেক কমে যায় তবে মানুষ সকল জীবের জন্য তা হুমকিস্বরূপ হবে।
আমাদের দেশে বর্তমানে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সুতরাং পরিবেশ রক্ষায় বনায়নের গুরুত্ব অপরিসীম ।