বনায়ন কি। বনায়ন বলতে কি বুঝ। বনায়ন কাকে বলে
বনায়ন কি। বনায়ন বলতে কি বুঝ। বনায়ন কাকে বলে |
বনায়ন কি। বনায়ন বলতে কি বুঝ। বনায়ন কাকে বলে
- অথবা, বনায়নের সংজ্ঞা দাও ।
- অথবা, বনায়ন বলতে কী বোঝ?
উত্তর : ভূমিকা : বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের শতকরা ৭০-৮০ ভাগ লোক কৃষির সাথে জড়িত। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে।
আর গ্রামের মানুষ বনায়ন তৈরি করতে খুব ভালবাসে। কৃষির সাথে আমাদের দেশের বনায়নের একটা সম্পর্ক আছে। পৃথিবী সৃষ্টির আদিকাল থেকেই মানুষ বনের সাথে বসবাস করে আসছে।
আদিম মানুষ আগে গাছের ছাল, পাতা ও বাকল দিয়ে পোশাকের কাজ চালাত। বর্তমানে পরিবেশ রক্ষায় বনায়নের গুরুত্ব অপরিসীম।
কারণ প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন ।O বনায়ন বনায়ন বলতে সাধারণত বৃক্ষ বা গাছপালা রোপণ করাকে বোঝায়।
অর্থাৎ বনায়ন বলতে কোনো স্থানে গাছপালা লাগানো বা রোপণ করাকে বোঝায়। আমাদের দেশে পতিত জমি, রাস্তা বা রেললাইনের ধারে এ ধরনের বনায়ন পড়ে তোলা হয়।
আমাদের দেশে বনায়নের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। সরকারি হিসাব মতে আমাদের দেশে শতকরা ১৭.০২% বনভূমি রয়েছে।
বনভূমি একটি দেশের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। কারণ দেশের সামগ্রিক কাঠামো বিশেষ করে পরিবেশগত ও আর্থসামাজিক কাঠামোতে বনায়নের ভূমিকা অপরিসীম।
বাংলাদেশে বননীতি ঘোষণা করা হয় ১৯৯৫ সালে। এতে বনায়নের জন্য বিভিন্ন policy গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে।
তবে একথা সত্য যে পৃথিবীতে যদি বনায়ন না থাকত তবে কোনো জীবের অস্তিত্ব থাকত না। বনায়ন একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে।
সাধারণ অর্থে বনায়ন বলতে পতিত কোনো জমি, খালবিল ভরাট করে বা রাস্তার পাশে ও পুকুর পাড়ে গাছপালা লাগানোকে বনায়ন বলে বনায়ন এর মাধ্যমে একটি দেশের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে।
বনায়ন মানুষের অনেক চাহিদা পূরণ করে থাকে। খাদ্য, জ্বালানি, কাঠ ও অর্থ ইত্যাদি। বনায়ন হলো একটি চলমান প্রক্রিয়া।
সাধারণত নিজ উদ্যোগে নিজ উদ্যোগে কৃত্রিমভাবে গাছপালা লাগানোকে বনায়ন বলে। কৃত্রিমভাবে বনায়ন তৈরি করার জন্য বেশি মূলধনের প্রয়োজন হয়।
আমাদের দেশের মাঠে এ ধরনের বন তৈরি করা যায়। সাধারণত অনাবাদী জমিতে এ ধরনের বনায়ন তৈরি করা যায়। পরিবেশের সাথে বনায়নের নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান।
কারণ বনায়ন পরিবেশকে নির্মল রাখে আর বাতাসে CO2 এর পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এতে পরিবেশত সুন্দর থাকে।
আদিম যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান যুগ পর্যন্ত বনায়ন মানুষের খাদ্য, চিকিৎসা, কাঠ, জ্বালানি ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করে মানুষকে নিরাপদে রাখে। বনভূমির মাধ্যমে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় থাকে।
বনায়ন সাধারণ দুই প্রকার। যথা :
(i) প্রাকৃতিক বন
(ii) কৃত্রিম বন
(i) প্রাকৃতিক বন : মানুষের কোনো স্পর্শ ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে গাছপালা জন্মানোকে প্রাকৃতিক বন বলে। পৃথিবীতে যত বনায়ন রয়েছে তার বেশির ভাগই প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে ওঠা।
যেমন, আমাজান বন, সুন্দরবন ইত্যাদি। আমাদের দেশের বনায়নের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা সবচেয়ে বড় বন হলো চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকার বন।
প্রাকৃতিক বনায়নের সাথে বৃষ্টিপাতের সম্পর্ক বিদ্যমান। সাধারণত যেসব এলাকায় বৃষ্টিপাত বেশি হয় সেসব এলাকার প্রাকৃতিক বনভূমি বেশি গড়ে ওঠে।
এককভাবে ব্রাজিলে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বনভূমি রয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে বনভূমি গড়ে উঠলে এর উপর মানুষের কোনো হাত নেই। এটি সম্পূর্ণ মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গড়ে ওঠে।
(ii) কৃত্রিম বন : এ ধরনের বন সাধারণত মানুষ নিজে তৈরি করে। কোনো রকম প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াই সম্পূর্ণ মানুষের হাতে যে ধরনের বন গড়ে ওঠে তাকে কৃত্রিম বন বলে।
আমাদের দেশে বনায়ন তৈরি করতে হলে এর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জমি থাকা লাগবে। জমির খন্ড বিখন্ডতা রোধ করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক বনায়ন কৃত্রিম বনায়নের অন্তর্ভুক্ত।
আমাদের দেশে সাধারণত সামাজিক বনায়ন গ্রামাঞ্চলে গড়ে ওঠে। কারণ গ্রামের মানুষ কৃষির সাথে এ ধরনের বনায়ন গড়ে ওঠে।
এসব সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষের আর্থসামাজিক পরিবর্তন হয়। বাংলাদেশে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি সর্বপ্রথম নোয়াখালী জেলায় তৈরি হয়।
এর পরে কক্সবাজার জেলায় এ ধরনের বনায়ন গড়ে ওঠে। আমাদের দেশে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে সামাজিক বনভূমি গড়ে তোলা হয়েছে। যা একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
কৃত্রিম বন আবার দু প্রকার । যথা :
(i) একক চাষ;
(ii) বহু চাষ ।
(i) একক চাষ : একক চাষ বলতে বোঝায় সাধারণত একই জমিতে একই প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করা। অর্থাৎ সবই একই শ্রেণির গাছ থাকবে।
(II) বহু চাষ : যে জমিতে একই সাথে অনেক গাছের চারা রোপণ করে বনায়ন করা হয় তাকে বহু চাষ বলে। সুতরাং বনায়ন হলো এমন এক ধরনের কর্মসূচি যেখানে এক সাথে গাছ রোপণ করা হয়।
উপসংহার : উপরের আলোচনা হতে পরিশেষে বলা যায় যে, আমাদের দেশে বনায়নের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাকৃতিক ও সামাজিক বন আমাদের দেশের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা দরকার যেখানে আমাদের দেশে রয়েছে অনেক কম।
বনভূমি বায়ুমণ্ডল থেকে ক্ষতিকর CO, শোষণ করে এবং O, ত্যাগ করে পরিবেশকে নির্মল রাখে। সেই সাথে গাছপালার সাথে অন্যান্য সকল জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য বজায় রাখে।
আমাদের দেশের প্রাকৃতিক বনের মধ্যে সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এটি UNCSCO দ্বারা স্বীকৃত। সুতরাং বনায়ন একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।