তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কার্যকারিতা মূল্যায়ন কর
তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কার্যকারিতা মূল্যায়ন কর |
তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কার্যকারিতা মূল্যায়ন কর
- অথবা, তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সফলতা ও ব্যর্থতা মূল্যায়ন কর ।
- অথবা, তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মূল্যায়ন লেখ।
উত্তর : ভূমিকা : যেকোনো দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য সরকার কর্তৃক বিভিন্ন কর্মপন্থার সমষ্টিই হলো পরিকল্পনা। পরিকল্পনা সহকারে কোনো কাজ করলে তাতে সহজেই সফলতা আসে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য সরকার এ পর্যন্ত ৫ বছরব্যাপী ৫টি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। এ পরিকল্পনাগুলো পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নামেই পরিচিত।
তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কার্যকারিতা : বাংলাদেশে তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা শুরু হয় ১৯৮৫ সালের ১ জুলাই এবং এ পরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হয় ১৯৯০ সালের ৩০ জুন।
দীর্ঘ পাঁচ বছরে এ পরিকল্পনার কোনো খাতে সফলতা আবার কোনো খাতে ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে তৃতীয় পদ্মবার্ষিকী পরিকল্পনার কার্যকারিতা উল্লেখ করা হলো :
১. আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা : বাংলাদেশের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সরকারি খাতে ২৫,০০০ কোটি টাকা এবং বেসরকারি খাতে ১৩,৬০০ কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দ ধরা হয়।
পরিকল্পনা শেষে সরকারি খাতে ৬৮.৫ শতাংশ এবং বেসরকারি খাতে ৭৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়। সুতরাং বলা যায়, এ পরিকল্পনায় আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
২. মোট দেশজ উৎপাদন : দেশের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় মোট দেশজ উৎপাদনের বার্ষিক গড় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫.৪ ভাগ। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণ ছিল মূল পরিকল্পনার চেয়ে ১.৩ শতাংশ কম।
৩. কৃষির উৎপাদন : বাংলাদেশের তৃতীয় পদ্মবার্ষিকী পরিকল্পনায় কৃষিখাতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪ শতাংশ। এ পরিকল্পনায় কৃষির উন্নয়ন বৃদ্ধি পায় ১.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় ।
৪. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ : তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ন্যায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
এ পরিকল্পনাতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল শতকরা ২.২ ভাগ কিন্তু এর লক্ষ্যমাত্রা ছিল শতকরা ১.৮ ভাগ।
৫. মাথাপিছু আয় : তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণ।
কিন্তু এ পরিকল্পনাকালে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ১.৪ শতাংশ। মাথাপিছু আয়ের এ প্রবৃদ্ধি ছিল অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক।
৬. শিল্পোৎপাদন : বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের অনুপাতে বাংলাদেশের জাতীয় আয়ে শিল্পের অবদান খুবই কম। দেশের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় শিল্পখাতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১০.১% কিন্তু পরিকল্পনা শেষে এ প্রবৃদ্ধি হয় শতকরা ৪.২%, প্রবৃদ্ধির এ হার ছিল শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যাপক হতাশাজনক।
৭. আমদানি-রপ্তানি : এ পরিকল্পনায় আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ১৪৬৭.৭০ কোটি ডলার ধার্য করা হলেও বাস্তবে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫৪৮.৪০ কোটি ডলারে।
রপ্তানির ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩৮.৪০ কোটি ডলার কিন্তু রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৬৮৪.৪০ ডলার ।
৮. কর্মসংস্থান : বাংলাদেশের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ৫১ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
পরিকল্পনা শেষে মাত্র ৩৯ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হয়। যা পরিকল্পনার চেয়ে অনেক কম। সুতরাং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ব্যর্থ ।
৯. বৈদেশিক নির্ভরশীলতা হ্রাস : বৈদেশিক নির্ভরশীলতা হ্রাসের ক্ষেত্রে এ পরিকল্পনা মারাত্মকভাবে ব্যর্থ হয়। এ পরিকল্পনায় বৈদেশিক নির্ভরশীলতা হ্রাসের পরিমাণ ধার্য করা হয় ৫৪.৫%, কিন্তু অর্জিত হয় ৩৪.৫% মাত্র।
১০. অন্যান্য খাত : পরিবহণ, যোগাযোগ, বাজারজাতকরণ ও অন্যান্য সেবা, নির্মাণ, জনসেবা ইতাদি খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়। পরিকল্পনা শেষে বেশিরভাগ কার্যকরী হয়। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদের লক্ষ্যমাত্রা ৯৬ শতাংশ ধরা হলেও ১৭.৩৯ শতাংশ সাফল্য অর্জিত হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় যেসব বিষয়ের ওপর লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছিল, তার মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদসহ কতিপয় ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জিত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
এ পরিকল্পনায় পদ্ধতি ও কৌশলগত দিক দিয়ে বিগত দুটি পণ্যবার্ষিকীর মধ্যে নতুনত্বের তেমন কিছুই ছিল না। সুতরাং বলা যায়, এ পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।