সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের শাখা সমূহ সংক্ষেপে আলোচনা কর
সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের শাখা সমূহ সংক্ষেপে আলোচনা কর |
সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের শাখা সমূহ সংক্ষেপে আলোচনা কর
- অথবা, সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের শাখাসমূহ সংক্ষেপে তুলে ধর।
- অথবা, সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের শাখাসমূহ সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : নৃবিজ্ঞান হলো সেই বিজ্ঞান যা দ্বারা মানুষের দৈহিক গঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন এবং মানবজাতির আচরণ সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক অধ্যয়ন করা হয়।
অর্থাৎ নৃবিজ্ঞান হলো মানুষের সামগ্রিক আলোচনা। তাই নৃবিজ্ঞানের পরিধি বা বিষয়বস্তু ব্যাপক ও বিস্তৃত।
নৃবিজ্ঞান যেমন মানুষকে সামাজিক সদস্য হিসেবে তার উৎপত্তি, বিকাশ, বিবর্তন প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে, তেমনি সামাজিক প্রাণী হিসেবেও মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ নিয়েও আলোচনা করে।
সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের শাখাসমূহ : নিম্নে সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের শাখাসমূহ সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো :
১. মানবজাতির বিবরণবিদ্যা : সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের এ শাখায় কোনো বিশেষ জাতির সংস্কৃতি ও জীবনধারা আলোচনা করা হয় ।
Ethnography বা মানবজাতির বিবরণবিদ্যা এমন সব তথ্য সংগ্রহ করে যা সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে । Hoebel এর মতে, "Ethnography provides the buildings blocks for cultural Anthropology."
২. জাতিবিদ্যা : বিভিন্ন সমাজে প্রচলিত প্রথা ও সংস্কৃতির তুলনামূলক আলোচনাই হলো জাতিবিদ্যা । জাতিবিদ্যা সংস্কৃতির ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করে বলে একে সাংস্কৃতিক ইতিহাসও বলা হয়।
৩. সামাজিক নৃবিজ্ঞান : নৃবিজ্ঞানের এ শাখায় নৃবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন। যেমন— পারিবারিক সম্পর্ক, জ্ঞাতিসম্পর্ক প্রভৃতি।
রেডক্লিফ ব্রাউনের নেতৃত্বে কিছু ইংরেজ নৃবিজ্ঞানী সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের একটি উপশাখা হিসেবে Social Anthropology বা সামাজিক নৃবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠা করেন ।
৪. ভাষাতত্ত্ব : একটি সমাজের সংস্কৃতির বাহন হলো সে সমাজের ভাষা। বিভিন্ন যুগ ও বিভিন্ন সমাজের ভাষার তুলনামূলক আলোচনা, ব্যাকরণ পদ্ধতি ও ভাষার উচ্চারণ প্রভৃতি নিয়েই ভাষাতত্ত্ব আলোচনা করে থাকে।
অনেক ক্ষেত্রে সংস্কৃতি নৃবিজ্ঞান ভাষাতত্ত্ব থেকে তথ্য সংগ্রহ করে । নৃবিজ্ঞানীরা ভাষাতত্ত্বকে কয়েকটি শাখায় ভাগ করেছেন। যেমন—
১. কাঠামোগত ভাষাতত্ত্ব,
২. ঐতিহাসিক ভাষাতত্ত্ব এবং
৩. প্রজ্ঞামূলক নৃতত্ত্ব ।
৫. প্রত্নতত্ত্ব : আদিম মানুষের জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা করাই প্রত্নতত্ত্বের মুখ্য উদ্দেশ্য। খননকার্যের মাধ্যমে আদিম অধিবাসীদের ব্যবহৃত যেসব জিনিসপত্র পাওয়া যায়, সেগুলো নিয়ে গবেষণা করে তাদের জীবনপদ্ধতি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার প্রয়াস চালানো হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নৃবিজ্ঞান মানুষের জৈবিক কাঠামো নিয়ে আলোচনা করার সাথে সাথে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট নিয়েও আলোচনা করে।
অর্থাৎ নৃবিজ্ঞান সমাজে অবস্থিত মানুষের জীবনযাত্রার বিভিন্ন উপকরণ, সামাজিক আদর্শ ও মূল্যবোধ, বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান প্রভৃতি সামগ্রিক জীবন নিয়ে আলোচনা করে। তাই মানবসমাজে নৃবিজ্ঞানের পরিধি দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ।