সামাজিক স্তরবিন্যাসের ধরন আলোচনা কর
সামাজিক স্তরবিন্যাসের প্রকারভেদ আলোচনা কর |
সামাজিক স্তরবিন্যাসের প্রকারভেদ আলোচনা কর
- অথবা, সামাজিক স্তরবিন্যাসের ধরন আলোচনা কর ।
- অথবা, সামাজিক স্তরবিন্যাসের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : সাম্প্রতিক সময়ের একটি অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে সামাজিক স্তরবিন্যাস। সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে উৎকর্ষ ও নিকৃষ্টতার ভিত্তিতে ক্রমোচ্চভাবে সমাজের বিভাজনের প্রক্রিয়াকে বুঝায়।
একটি সমাজের সম্পত্তির মালিকানা, অমালিকানা, মর্যাদা ও ক্ষমতার অসম বণ্টনের ভিত্তিতে স্তর ভাগ করা হয়। এটি সমাজের আদি ও চিরন্তন একটি বিষয় ।
সামাজিক স্তরবিন্যাসের প্রকারভেদ : সমাজবিজ্ঞানীরা সামাজিক স্তরবিন্যাসের চারটি প্রধান রূপ বা ধরনের কথা বলেছেন। যথা :
১. দাসপ্রথা : দাসপ্রথা প্রাচীন ও প্রথম শ্রেণিভিত্তিক সমাজব্যবস্থা। আদিম সমাজব্যবস্থার মধ্য থেকেই এর উৎপত্তি হয়েছে। যখন কৃষি সমাজব্যবস্থার গোড়ার দিকে সম্পত্তিতে ব্যক্তিমালিকানা আরোপিত হয় তখন দাসব্যবস্থার উদ্ভব হয়।
প্রত্যেক দাসের একজন প্রভু থাকে। প্রভুর কাছে সে 'Subject' হিসেবে গণ্য হয়। তার কোনো স্বাধীনতা নেই এবং রাজনৈতিক অধিকার থাকে না।
এ প্রসঙ্গে H. R. Kerbo তার 'Social Stratification and Inequality' (1983 :11) গ্রন্থে বলেছেন, আধিপত্য বিস্তারের এ ধরনটি মানবজাতির স্থায়ী এবং প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে উদ্ভব ঘটে। কৃষি সভ্যতার সাথে সাথেই এটি শীর্ষবিন্দুতে আরোহণ করে ।
২. বর্ণপ্রথা : 'Caste system' বর্ণপ্রথার ইংরেজি প্রতিশব্দ। বর্ণ হচ্ছে বংশগত গুণের ভিত্তিতে বিশেষ কোনো মানবগোষ্ঠী। যেখানে আচার অনুষ্ঠানের বিশুদ্ধতায় একে অন্য থেকে উঁচু-নীচ ক্রমানুসারে সংগঠিত এবং পৃথককৃত।
হিন্দুশাস্ত্রে ৪টি বর্ণের উল্লেখ পাওয়া যায় । যথা : ১. ব্রাহ্মণ, ২. ক্ষত্রিয়, ৩. বৈশ্য এবং ৪. শূদ্র। বর্ণপ্রথা বংশানুক্রমিকভাবে আগত হয় ।
৩. এস্টেট ব্যবস্থা : অনেকে 'Estate' বলতে সামন্ত ব্যবস্থাকে বুঝিয়ে থাকেন। তবে এর অর্থ হতো জমিদারের মালিকানাধীন জমি।
এ প্রসঙ্গে B. Bhushan বলেন, "A system of stratification found historically in Europe and Russia which like caste".
এ ব্যবস্থার ৩টি শ্রেণিকে ঘিরে সমাজ এবং সামাজিক স্তরবিন্যাস পরিচালিত হতো । যথা : ১. যাজক শ্রেণি, ২. অভিজাত শ্রেণি ও ৩. সাধারণ শ্রেণি ।
৪. সামাজিক শ্রেণি : রোমানরা রাজস্বসংক্রান্ত বিষয়ে 'Class' শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। রাজস্ব কমবেশি প্রদানের ভিত্তিতে তারা ধনী-গরিব শ্রেণিতে ভাগ করেন ।
সমাজ ব্যবস্থার বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে 'Vertical' সম্পর্ক থেকেই সামাজিক স্তরবিন্যাসের সৃষ্টি। এ শ্রেণি প্রত্যয়টি তিন ভাগে বিভক্ত করা যায় । যথা :
১. উচ্চশ্রেণি,
২. মধ্যবিত্তশ্রেণি
৩. নিম্নশ্রেণি ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে উৎকর্ষ ও নিকৃষ্টতার ভিত্তিতে ক্রমোচ্চভাবে সমাজের বিভাজনের প্রক্রিয়াকে বুঝায়। প্রত্যেক সমাজেই স্তরবিন্যাস বিদ্যমান।
মানবসমাজের প্রতিটি স্তরেই সামাজিক স্তরবিন্যাস লক্ষ করা যায় । সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থায় কোনো স্তরবিন্যাস থাকবে না। শোষণমুক্ত সমাজই হবে স্তরবিহীন সমাজ ।