পৌরসভার অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা কর
পৌরসভার অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা কর |
পৌরসভার অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা কর
- অথবা, পৌরসভার অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে যা জান লেখ।
- অথবা, পৌরসভার অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বর্ণনা দাও।
উত্তর : ভূমিকা : পৌরসভা বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার শহর এলাকার সরকারের মধ্যে নিম্নস্তরের প্রশাসনিক এলাকা।
পৌরসভা আইন- ২০০৯ অনুযায়ী বাংলাদেশের কোনো এলাকা পৌরসভা ঘোষণা করা যেতে পারে যদি ঐ এলাকার তিন-চতুর্থাংশ লোক অকৃষিজ পেশায় নিয়োজিত থাকে, জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৫০০ জনের বেশি হয় এবং ঐ এলাকার মোট জনসংখ্যা ৫০ হাজারের কম হবে না।
শহরের জনগণের স্থানীয় সমস্যার সমাধান ও নানাবিধ উন্নয়নমূলক কাজের দায়িত্ব পালন করে পৌরসভা। এটি স্থানীয় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ইউনিট ।
পৌরসভার অর্থ ব্যবস্থাপনা : নিম্নে পৌরসভার অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. আয়ের উৎস : প্রত্যেক পৌরসভার পৌরসভা তহবিল নামে একটি তহবিল থাকবে। যেখানে সকল আয় জমা করা হবে। পৌরসভা তহবিলে নিম্নবর্ণিত অর্থ জমা করতে হবে—
• পৌরসভার সম্পূর্ণ এখতিয়ারে উদ্বৃত্ত তহবিল; পৌরসভা কর্তৃক ধার্যকৃত সকল কর, উপ-কর, রেইট, টোল, ফি ও অন্যান্য দাবি বাবদ প্রাপ্ত অর্থ;
• পৌরসভার উপর ন্যস্ত অথবা তদকর্তৃক ব্যবস্থিত সম্পত্তি হতে সকল খাজনা এবং আয়, যা পৌরসভার নিকট পরিশোধ অথবা জমাযোগ্য;
• পৌরসভার কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য পৌরসভা কর্তৃক প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ;
• কোনো ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান অথবা স্থানীয় যেকোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত দানের সমুদয় অর্থ;
• পৌরসভার অধীনে পরিচালিত ট্রাস্ট হতে (যদি থাকে) জমাকৃত সমুদয় আয়, সরকার এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত সকল অনুদান;
• বিনিয়োগ হতে প্রাপ্ত সমুদয় লভ্যাংশ; এবং সরকারের নির্দেশে পৌরসভার সম্পূর্ণ অধিকারে ন্যস্ত অন্যান্য আয়ের উৎস হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ।
২. আরোপিত ব্যয় : পৌরসভা তহবিলের ওপর আরোপিত ব্যয় নিম্নরূপ হবে, যথা :
• পৌরসভার কর্মে নিয়োজিত যেকোনো সরকারি কর্মচারী অথবা স্থানীয় পরিষদ সার্ভিসের যেকোনো সদস্যকে অথবা তাহার নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে প্রদেয় সমুদয় অর্থ;
• নির্বাচন পরিচালনায় অবদান, পৌরসভার সার্ভিসসমূহ রক্ষণাবেক্ষণ, হিসাব নিরীক্ষা এবং এরূপ অন্যান্য বিষয়ে প্রয়োজনে সময়ে সময়ে সরকার কর্তৃক নির্দেশিত পৌরসভা কর্তৃক প্রদেয় সমুদয় অর্থ;.
• কোনো আদালত অথবা ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক পৌরসভার বিরুদ্ধে প্রদত্ত কোনো রায়, ডিক্রি অথবা রোয়েদাদ কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় যেকোনো অর্থ এবং সরকার কর্তৃক ঘোষিত এরূপ আরোপযোগ্য যেকোনো বায়।
৩. সংরক্ষণ, বিনিয়োগ এবং বিশেষ তহবিল গঠন :
• পৌরসভা তহবিলের জমাকৃত টাকা সরকারি ট্রেজারির কার্য পরিচালনাকারী কোনো ব্যাংকে অথবা সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্দেশিত অন্য কোনো পদ্ধতিতে জমা রাখতে হবে।
• বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে পৌরসভা উহার তহবিলের যেকোনো অংশ বিনিয়োগ করতে পারবে।
পৌরসভা কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে পৃথক তহবিল গঠন এবং সংরক্ষণ করতে পারবে, যা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হবে।
• পৌরসভা কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের বেতন ও ভাতা প্রদান ।
• সরকার কর্তৃক ঘোষিত পৌরসভা তহবিলের উপর আরোপিত ব্যয় মিটানো।
৪. কমিশনের অর্থবিষয়ক সুপারিশ বাস্তবায়ন : নিম্নবর্ণিত বিষয়ে, কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত সুপারিশ বিবেচনা করে, সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, যথা:
• সরকারের বিভিন্ন উৎস হতে প্রদত্ত কর বা ফি ইত্যাদি প্রদানের হার বৃদ্ধি;
• সরকারি কোষাগার হতে উন্নয়নমূলক কার্যক্রমসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আর্থিক অনুদান; এবং পৌরসভার আয়ের উৎস ও পরিমাণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত ব্যবস্থা।
৫. বাজেট প্রণয়ন : প্রতি অর্থবছর শুরু হওয়ার পূর্বে, পৌরসভা উত্তর বৎসরের সম্ভাব্য আয় ও ব্যয় সম্বলিত বিবরণী, অতঃপর প্রাক্কলিত বাজেট বলে উল্লিখিত, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রণয়ন ও অনুমোদন করবে এবং উহার একটি করে অনুলিপি বিভাগীয় কমিশনার অথবা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করবে।
• প্রাক্কলিত বাজেট সম্পর্কে জনগণের মন্তব্য ও পরামর্শ বিবেচনাক্রমে পৌরসভা সংশ্লিষ্ট অর্থবছর শুরু হওয়ার ত্রিশ দিন।
পূর্বে বাজেট অনুমোদন করে উহার একটি অনুলিপি বিভাগীয় কমিশনার অথবা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করবে ।
• কোনো অর্থবছর শুরু হওয়ার পূর্বে, বিশেষ পরিস্থিততে, পৌরসভা ইহার বাজেট অনুমোদন করতে না পারিলে, সরকার উক্ত বৎসরের জন্য একটি আয়-ব্যয় বিবরণী প্রস্তুত করাইয়া উহা প্রত্যয়ন করবে এবং এরূপ প্রত্যয়নকৃত বিবরণী পৌরসভার অনুমোদিত বাজেট বলে গণ্য হবে ।
• বাজেটের অনুলিপি প্রাপ্তির ত্রিশ দিনের মধ্যে সরকার, আদেশ দ্বারা, বাজেটটি সংশোধন করতে পারবে এবং অনুরূপ সংশোধিত বাজেটই পৌরসভার অনুমোদিত বাজেট বলে গণ্য হবে;
৬. হিসাব : পৌরসভার আয় ও ব্যয়ের হিসাব নির্ধারিত ফরম এবং পদ্ধতিতে রক্ষিত হবে। প্রতি অর্থবৎসরের শেষে বার্ষিক হিসাব বিবরণী প্রস্তুত করতে হবে।
বার্ষিক হিসাব বিবরণীর একটি প্রতিলিপি জনসাধারণের দর্শনের জন্য উহার কার্যালয়ের প্রকাশ্য কোনো স্থানে প্রদর্শন করবে এবং জনসাধারণের নিকট হতে হিসাবসংক্রান্ত সকল আপত্তি অথবা পরামর্শ পৌরসভা কর্তৃক বিবেচিত হবে।
৭. নিরীক্ষা : পৌরসভার হিসাব উপযুক্ত নিরীক্ষা কর্তৃপক্ষ অথবা কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত প্যানেল হতে নিয়োজিত অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিরীক্ষিত হবে। কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের ব্যবধানে প্রত্যেক পৌরসভার হিসাব নিরীক্ষিত হবে।
নিরীক্ষা কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট পৌরসভার হিসাবসংক্রান্ত সকল বহি এবং অন্যান্য দলিলাদি দেখিতে পারবে এবং পৌরসভার মেয়র অথবা কোনো কাউন্সিলর অথবা কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, একটি পৌরসভাকে সফলভাবে পরিচালনা করতে হলে অর্থ ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।
পৌরসভাকে দারিদ্র্যমুক্ত, শিক্ষিত, আধুনিক পরিকল্পিত ও সুসজ্জিত এবং আর্থসামাজিকভাবে উন্নত নিরাপদ বাসযোগ্য মডেল পৌরসভা হিসেবে পড়তে চাইলে অর্থের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
অর্থ ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে পৌরসভায় বসবাসকারী জনগণের কাছে উন্নয়নের সোপান পৌঁছে যাবে।