পোষক ও পোষ্য সম্পর্ক কি - পোষক পোষ্যের সম্পর্ক বলতে কী বুঝ
পোষক ও পোষ্য সম্পর্ক কি । পোষক পোষ্যের সম্পর্ক বলতে কী বুঝ |
পোষক ও পোষ্য সম্পর্ক কি । পোষক পোষ্যের সম্পর্ক বলতে কী বুঝ
- অথবা, পোষক-পোষ্য সম্পর্ক কাকে বলে?
উত্তর : ভূমিকা : সাম্প্রতিক সময়ে একটি দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে পোষক-পোষ্য সম্পর্ক ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। অসম পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদ্বয়ের পারস্পরিক লেনদেনের কারণে এ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।
পোষকের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার জন্য পোষ্য তাকে সমর্থন প্রদান করে এবং এর বিনিময়ে পোষ্য পোষকের নিকট থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা নিয়ে থাকে ।
পোষক-পোষ্য সম্পর্কের শাব্দিক অর্থ : বাংলা পোষক-পোষ্য কথাটির ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Patron-Client' Patron শব্দের অর্থ পৃষ্ঠপোষক এবং 'Client' শব্দের অর্থ পোষ্য।
সুতরাং শব্দগত দিক থেকে 'Patron-Client' পোষক-পোষ্য সম্পর্ক বলতে এমন এক সম্পর্ককে বুঝায় যেখানে পোষ্য পোষকের স্বার্থোদ্ধারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে এবং পোষকের স্বার্থসিদ্ধির পর তার নিকট থেকে পোষ্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবিধা নিয়ে থাকে । এর মাধ্যমে তাদের মধ্যে আন্তঃনির্ভরশীল সম্পর্ক তৈরি হয় ।
পোষক-পোষ্য সম্পর্কের সংজ্ঞা : সাধারণভাবে সামাজিক অবস্থান, পদমর্যাদা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে যখন পোষক ও পোষ্যের মধ্যে লেনদেনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তখন তাকে পোষক-পোষ্য সম্পর্ক বলা হয়।
এক্ষেত্রে পোষ্যকে স্বার্থান্বেষী দলও বলা যায়। কেননা পোষ্য প্রথমে পোষককে উচ্চতর পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করা ও সে পদে বহাল রাখার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালায় ।
যখন পোষক সে পদে অধিষ্ঠিত হয় তখন তিনি যেকোনো নীতিনির্ধারণে পোষ্যের দিকটি বিবেচনা করে। পোষ্যের যেকোনো সংকটপূর্ণ মুহূর্তে পোষক সাহায্য করেন । এভাবে পোষক-পোষ্য সম্পর্ক তৈরি হয়ে থাকে ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা :-
জেমস সি. স্কট (James C. Scott) এর মতে, “পোষক আশ্রিত সম্পর্ক হলো এমন একটি দ্বিমুখী সম্পর্ক যেখানে পোষক আশ্রিত বা পোষ্যের নিকট থেকে সাহায্য, সমর্থন ও সেবাযত্ন লাভ করে এবং এর বিনিময়ে পোষক তার প্রভাব-প্রতিপত্তির মাধ্যমে আশ্রিতের বা পোষ্যের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তা লাভ নিশ্চিত করে।
পাওয়েল (Powell) এর মতে, “অসম আর্থসামাজিক পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদ্বয়ের মধ্যে পণ্য ও সেবার লেনদেনের মাধ্যমে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে সেটিই পোষক-পোষ্য সম্পর্ক বলে পরিচিত।”
বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর বলেন, “পোষক-পোষ্য সম্পর্ক বলতে এমন এক দ্বিপক্ষীয় (দুইজন ব্যক্তির মধ্যে) বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে বুঝায়, যেখানে এজন উচ্চ আর্থসামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি (পোষক) তার প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে নিম্ন পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির (পোষ্য) সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং এর বিনিময়ে সেই নিম্নপর্যায়ের ব্যক্তিটি উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিটিকে সমর্থন ও সেবা প্রদান করে।”
ইরিক জি. জেনসেন (Erik G. Jansen) বলেন, “পোষক-পোষ্য সম্পর্ক বলতে মানুষের মধ্যে পদমর্যাদাগত পার্থক্যকে বুঝায় ।”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব, পদমর্যাদা, অর্থসম্পদ ইত্যাদির পার্থক্যের ভিত্তিতে মনিব (পোষক) ও আশ্রিতের (পোষ্য) মধ্যে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে সেটিই পোষক-পোষ্য সম্পর্ক।
কিন্তু এ সম্পর্ক মূলত অর্থনৈতিক অসমতাকে ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে। এ সম্পর্কের মাধ্যমে পোষক ও পোষ্য উভয়ই সমাজে প্রভাবশালীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় । এরা পরস্পর পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল থাকে।