পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কৌশলসমূহ লেখ
পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কৌশলসমূহ লেখ |
পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কৌশলসমূহ লেখ
- অথবা, পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কৌশলসমূহ উল্লেখ কর ।
- অথবা, পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কৌশলসমূহ কী কী?
উত্তর ভূমিকা : বাংলাদেশের পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার স্থায়িত্বকাল ছিল ১৯৯৭-২০০২ সাল পর্যন্ত । অর্থনৈতিক বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বল্পসময়ে স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যেই বাংলাদেশের পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়।
তবে বাংলাদেশের অতীত পরিকল্পনার কৌশলের ন্যায় এ পরিকল্পনার উন্নয়ন কৌশলও একই আঙ্গিকে ছিল। দারিদ্র্য বিমোচন, মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ে স্বনির্ভরতা অর্জন প্রভৃতি লক্ষ্য সামনে রেখেই পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অগ্রযাত্রা শুরু করে।
পাঁচ বছর মেয়াদি এ পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক সমদ্ধিই ছিল এর অন্যতম কৌশল ৷। পঞ্চম পদ্মবার্ষিকী পরিকল্পনার কৌশলসমূহ নিম্নে বাংলাদেশের পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার উল্লেখযোগ্য কৌশলসমূহ তুলে ধরা হলো:
১. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ : বাংলাদেশ জনসংখ্যা সমস্যায় জর্জরিত একটি দেশ। এদেশে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে দেখা যায় বছরান্তে জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ বেকারত্ব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় উপযুক্ত কর্মসূচি ও পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে জনসংখ্যা ১.২ ভাগ হ্রাস করে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কৌশল অবলম্বন করা হয়। এ খাতে সর্বমোট বরাদ্দ হয় ২,৮৫৮.৭০ কোটি টাকা।
২. গ্রামীণ উন্নয়ন : বাংলাদেশের পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার একটি ইতিবাচক কৌশল হলো গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মসূচি বা কৌশল।
স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং তাদের সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানের উন্নয়নসাধন করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারী পুরুষের ব্যবধান কমিয়ে আনার মাধ্যমে নারীদের চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান করে নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি করা।
এ কৌশল অবলম্বনে পাম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় গ্রামীণ উন্নয়ন খাতে সর্বমোট বরাদ্দ ছিল ৮,৭০০.২৫ কোটি টাকা।
৩. খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন : পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল ছিল শ্রমঘন ও পুঁজিঘন প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে স্বল্প সময়ের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা।
এ পরিকল্পনায় শেষ বছরান্তে দেশে ২ কোটি ৫০ লাখ খাদ্যশস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়। এ খাতে সর্বমোট বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৪,২২৯.৯১ কোটি টাকা। সর্বোপরি এ পরিকল্পনায় খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জন অন্যতম কৌশল হিসেবে স্থির করা হয়।
৪. প্রযুক্তিগত উন্নয়ন : বাংলাদেশের পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য ছিল প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের দিকে এগিয়ে নেওয়া।
ইলেকট্রনিক্স ও জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংসহ নব প্রজন্মের বিভিন্ন প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব প্রদানপূর্বক দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভিত্তি মজবুত করা। এ কৌশল অবলম্বনে এ খাতে সর্বমোট বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৫০৫.৯১ কোটি টাকা ।
৫. বেসরকারি খাতকে প্রাধান্য : বাংলাদেশের পণবার্ষিকী পরিকল্পনার অন্যতম কৌশল ছিল বেসরকারি খাতের মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সমৃদ্ধ করা।
এ পরিকল্পনায় বেসরকারি খাতে সর্বমোট বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ১,১০,০৫৮.২১ কোটি টাকা যা মোট বরাদ্দের ৫৬.১৭%।
তাছাড়া এ পরিকল্পনা আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতও বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হলে সফলতা অর্জন হবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয় ।
৬. জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত : এ পরিকল্পনায় জনসংখ্যাকে পেশাগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনশক্তিতে পরিণত করার কৌশল অবলম্বন করা হয়।
উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রযুক্তির উন্নয়ন কারিগরি জ্ঞান অর্জন, বৃত্তিমূলক পেশার ব্যবস্থা প্রভৃতি কৌশল অবলম্বনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়।
এ কৌশল অবলম্বনের লক্ষ্যে শ্রম ও জনশক্তি খাতে সর্বমোট বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৯৬৭.৪৩ কোটি টাকা।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে অগ্রযাত্রা শুরু করে কিন্তু নানা প্রতিকূলতার প্রেক্ষিতে এ পরিকল্পনার অধিকাংশ লক্ষ্যমাত্রা সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হয়।
এ পরিকল্পনায় দারিদ্র্য বিমোচনসহ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল অবলম্বন করা হয়।
কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, বিদেশি সাহায্য ঘাটতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি কারণে আশানুরূপ সফলতা অর্জিত হয়নি।