গ্রামীণ নেতৃত্ব কিভাবে গড়ে ওঠে | গ্রামীণ নেতৃত্ব গড়ে ওঠার উপায় সম্পর্কে আলোচনা কর
গ্রামীণ নেতৃত্ব কিভাবে গড়ে ওঠে । গ্রামীণ নেতৃত্ব গড়ে ওঠার উপায় সম্পর্কে আলোচনা কর |
গ্রামীণ নেতৃত্ব কিভাবে গড়ে ওঠে । গ্রামীণ নেতৃত্ব গড়ে ওঠার উপায় সম্পর্কে আলোচনা কর
- অথবা, গ্রামীণ নেতৃত্ব গড়ে ওঠার উপায় সম্পর্কে বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : গ্রামীণ সমাজে যেসব ব্যক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গ্রামীণ উৎপাদন যন্ত্র এবং প্রশাসন যন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করেন তারাই সেই সমাজের নেতৃত্বের মর্যাদা লাভ করেন।
বিশ্ব প্রেক্ষাপটে নেতৃত্বের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় নেতৃত্বও বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোকে নিয়ন্ত্রণ এবং গ্রামীণ এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য গ্রামীণ নেতৃত্বের ভূমিকা অপরিসীম ।
গ্রামীণ নেতৃত্ব যেভাবে গড়ে ওঠে : বহুবিধ উপায়ে নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। নিম্নে গ্রামীণ নেতৃত্ব গড়ে ওঠার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. ভূমির মালিকানা : গ্রামীণ নেতৃত্ব গড়ে ওঠার অন্যতম উপায় ভূমির মালিকানা। গ্রামীণ সমাজে যার যত বেশি ভূমির মলিকানা রয়েছে সাধারণত সে তত বেশি ক্ষমতাবান এবং নেতৃত্বের অধিকারী।
২. ঋণদানের ক্ষমতা : গ্রামীণ সমাজে যে ব্যক্তির হাতে নগদ টাকা থাকে সে নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হয়। কেননা তিনি গ্রামের অসচ্ছল, দরিদ্র মজুর ও প্রান্তিক চাষিদেরকে অর্থ ঋণ হিসেবে প্রদান করে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
৩. পারিবারিক ঐতিহ্য : গ্রামীণ নেতৃত্ব গড়ে ওঠার অন্যতম উপায় পারিবারিক ঐতিহ্য। গ্রামীণ সমাজে অভিজাত, ক্ষমতাশালী ও বিশেষ মর্যাদার অধিকারী পরিবারের লোকজন উত্তরাধিকারসূত্রে নেতৃত্ব লাভ করে থাকেন।
৪. জ্ঞাতিসম্পর্ক : জ্ঞাতিসম্পর্ক গ্রামীণ নেতৃত্ব পড়ে উঠতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। গ্রামীণ সমাজে বৃহৎ কোনো জ্ঞাতিগোষ্ঠীর প্রধান এবং কোনো সমাজের সমাজপতি পদাধিকার বলেই গ্রামীণ নেতৃত্ব লাভ করেন।
৫. ব্যক্তিগত গুণাবলি : গ্রামীণ নেতৃত্ব গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গুণাবলি অপরিসীম ভূমিকা পালন করে। জ্ঞান ও দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, জনপ্রিয়তা, বুদ্ধিমত্তা, কৌশল প্রভৃতিকে কাজে লাগিয়ে একজন মানুষ নিজেকে গ্রামীণ নেতৃত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।
৬. জাতীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত : যে ব্যক্তি রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত হন কিংবা কোনো প্রভাবশালী জাতীয় নেতার সাথে সংযোগ রক্ষা করে চলেন সেই ব্যক্তি গ্রামীণ নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হন।
৭. শিক্ষা : আধুনিক শিক্ষার মাধ্যমে গ্রামীণ নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। কেননা শিক্ষা সমাজে মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি করে। সাম্প্রতিক সময়ে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত অনেক যুবক গ্রামীণ নেতৃত্ব দানে এগিয়ে আসছে।
৮. শহরের সাথে যোগাযোগ : সাধারণত গ্রামীণ সমাজের যেসব ব্যক্তি শহরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকেন তারা গ্রামীণ নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গ্রামীণ সমাজে অনুসারী সৃষ্টি করতে হলে নেতাকে কতকগুলো বিশেষ গুণের অধিকারী হতে হয়।
গ্রামীণ সমাজে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের পিছনে মূলত কাজ করছে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা, শিক্ষা, বংশমর্যাদা, বুদ্ধিমত্তা, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার সাথে সম্পৃক্ত প্রভৃতি।
কিন্তু গ্রামীণ নেতৃত্ব গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক অবস্থাকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় ।