দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কার্যকারিতা আলোচনা কর
দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কার্যকারিতা আলোচনা কর |
দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কার্যকারিতা আলোচনা কর
- অথবা, দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সফলতা মূল্যায়ন কর।
- অথবা, দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সাফল্যগুলো বর্ণনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকার কর্তৃক গৃহীত কতিপয় পদক্ষেপের সমষ্টিই হলো অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। পরিকল্পনার মাধ্যমে সরকার উন্নয়ন কার্যাবলি সম্পাদন করলে তা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়।
বাংলাদেশ সরকার বর্তমান সময় পর্যন্ত মোট পাঁচটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এগুলোকে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বলা হয়ে থাকে।
কৃষির উন্নতির মাধ্যমে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা ও পল্লি উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে ১৯৮০-৮৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
● দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কার্যকারিতা : প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অবশিষ্ট কাজ সমাপ্তকরণ, দেশকে মুদ্রাস্ফীতির হাত থেকে রক্ষা, শিক্ষাবিস্তার, অধিক খাদ্য উৎপাদনসহ বিভিন্ন পরিকল্পনার সাথে সমতা আনয়নের জন্য ১৯৭৮-'৭৯ এবং ১৯৭৯-৮০ সালে ১টি দুই বছরব্যাপী দ্বিবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
পরবর্তীতে দেশের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা শুরু হয় ১৯৮০ সালের ১ জুলাই এবং এর মেয়াদ শেষ হয় ১৯৮৫ সালের ৩০ জুন ।
এই পরিকল্পনায় সর্বমোট ব্যয়বরাদ্দ ধরা হয় ২৫.৫৯৫ কোটি টাকা। মোট বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে সরকারি খাতে ২০.১২৫ কোটি টাকা এবং বেসরকারি খাতে ৫.৪৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়।
দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল কৃষি উন্নয়ন, পল্লি উন্নয়ন, খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি হ্রাস ইত্যাদি।
দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কার্যকারিতা বা সাফল্য নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে : দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা।
এই পরিকল্পনায় ১৯৮৪-৮৫ অর্থবছরে খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয় ১.৭৫ কোটি টন। কিন্তু ঐ বছর মোট খাদ্য উৎপাদন হয় ১.৫৬ কোটি টন।
কৃষি, পানি এবং পল্লি উন্নয়নে এ পরিকল্পনায় মোট বরাদ্দ ছিল ৬০৫৯ কোটি টাকা। সে হিসেবে মোটামুটি সাফল্য অর্জন করেছে এ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা।
২. জাতীয় উৎপাদন : দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। বার্ষিক জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫৪%।
কিন্তু অর্জন হয়েছিল মাত্র ৩.৮%, জাতীয় উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার অন্তরায় হলো ১৯৮১ সালে একটি মহল দেশের রাজনীতিতে প্রবেশের চেষ্টা করে এবং তারা ১৯৮২ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করার পর তা সুদৃঢ় করার জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করে ফলে উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হয় ।
৩. কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে : কৃষির উন্নতির মাধ্যমে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করাই ছিল দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য। এ পরিকল্পনায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৫০%।
কিন্তু প্রবৃদ্ধি হয় মাত্র ৩৬%। এ সময় ঘন ঘন প্রতিকূল আবহাওয়া কৃষি উৎপাদন বিশেষ করে খাদ্য উৎপাদনকে বিশেষভাবে ব্যাহত করে।
৪. শিল্প উৎপাদন : দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার শিল্প উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এ পরিকল্পনার শতকরা ৮.৪ ভাগ হারে শিল্প উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ৪৮ ভাগ ।
৫. জনসংখ্যা বৃদ্ধি : দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.৮% থেকে ১.৫% এ নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় ২.৪%; এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি ।
৬. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এ সময় বাণিজ্য ঘাটতির ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সংকট দেখা দেয় । ফলে দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যথার্থ সাফল্য অর্জিত হয়নি ।
৭. কর্মসংস্থান সৃষ্টি : দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় জনগণের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় । কিন্তু বিভিন্ন কারণে এসব কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসেনি।
৮. সঞ্চয় ও মুনাফা গঠন : দেশে সঞ্চয় বৃদ্ধি পেলে অর্থনীতি মজবুত হয়। বাংলাদেশ সরকারের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সঞ্চয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয় ৭.৪%, পরিকল্পনা শেষে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৮ ভাগে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশে প্রণীত দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিভিন্ন অসামঞ্জস্য লক্ষ করা যায়।
দেশে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বাণিজ্য ঘাটতি প্রভৃতির ফলে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কেবল লক্ষ্যমাত্রার নিচেই নেমে যায়নি, সেই সাথে অর্জিত প্রবৃদ্ধির হার আগের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে অর্জিত প্রবৃদ্ধির হারের চাইতেও নিচে নেমে যায় ।