চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কার্যকারিতা উল্লেখ কর
চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কার্যকারিতা উল্লেখ কর |
চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কার্যকারিতা উল্লেখ কর
- অথবা, চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সাফল্য মূল্যায়ন কর।
- অথবা, বাংলাদেশের চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সফলতা ব্যর্থতা আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা : কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গৃহীত সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিত কর্মসূচিই হলো অর্থনৈতিক পরিকল্পনা।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পাঁচ বছরব্যাপী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়ে আসছে স্বাধীনতার পর থেকেই।
তারই ধারাবাহিকতায় অর্থনৈতিক অবকাঠামোগত ভিত্তি মজবুত করতে ১৯৯০-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত দেশে চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কার্যকারিতা : বাংলাদেশে গৃহীত পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে অন্যতম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা হলো চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা।
তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অবাস্তবায়িত কাজ সম্পাদন ও দেশের সামগ্রিক উন্নতিসাধনকল্পে ১৯৯০-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরব্যাপী চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়।
এ পরিকল্পনায় মোট দেশজ উৎপাদনে বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ধরা হয় শতকরা ৫০ ভাগ। এ পরিকল্পনার কিছু কিছু সাফল্য অর্জিত হলেও অনেক পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
নিম্নে চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কার্যকারিতা তুলে ধরা হলো :
১. জাতীয় উৎপাদন : চতুর্থ পদ্মবার্ষিকীর প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করা। এই লক্ষ্যে এ পরিকল্পনায় বার্ষিক শতকরা ৫ ভাগ জাতীয় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়।
এই পরিকল্পনায় বলা হয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য জাতীয় উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি করা আবশ্যক। কিন্তু মেয়াদ শেষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় শতকরা ৪.২ ভাগ। তাই এ পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পরিণত হয়।
২. আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা : চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সরকারি খাতে ৩৪.৭০০ কোটি টাকা এবং বেসরকারি খাতে ২৭.৩০০ কোটি টাকা মোট ব্যয় ধার্য করা হয়।
কিন্তু মেয়াদ শেষে বেসরকারি খাতের ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩১.৭৭৩ কোটি টাকা । এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায় ।
৩. খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন : বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম কৃষিপ্রধান দেশ হলেও এদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকীতে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। কারণ ১৯৯১ সালে দক্ষিণাঞ্চলে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের ফলে দেশের অনেক ফসলাদি বিনষ্ট হয়।
৪. জনসংখ্যা হ্রাস : বিশ্বের জনবহুল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অত্যধিক। এ পরিকল্পনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.২ শতাংশ থেকে ১.৬ শতাংশ নামিয়ে আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তা ব্যর্থ হয় ।
৫. কৃষি উন্নয়ন খাত : 'বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাই কৃষিকে বাদ দিয়ে এদেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয়।
সেজন্য এ পরিকল্পনায় কৃষিতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩.৬ ভাগ কিন্তু মেয়াদ শেষে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় শতকরা ২.২ ভাগ।
৬. শিল্পখাতে উন্নয়ন : বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষির পরই শিল্পের অবস্থান। শিল্পোন্নয়ন ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিসাধন করা সম্ভব নয়।
তাই ৪র্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় শিল্প প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয় ৯.২৮% কিন্তু মেয়াদ শেষে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় ৮.৬%।
৭. শিক্ষাক্ষেত্রে : শিক্ষাক্ষেত্রে চতুর্থ পদ্মবার্ষিকী পরিকল্পনায় যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা অনেকাংশে বাস্তবায়িত হয়নি। শিক্ষাক্ষেত্রে এ পরিকল্পনা চরমভাবে ব্যর্থ হয় ।
৮. বিদ্যুৎ ও গ্যাস : তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মতো চতুর্থ পণ্যবার্ষিকী পরিকল্পনায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অগ্রগতি অর্জিত হয়।
এ পরিকল্পনায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯.২৮ ভাগ। মেয়াদ শেষে এর হার দাঁড়ায় ১১.৩ ভাগ। অর্থাৎ এক্ষেত্রে অনেকটা অগ্রগতি সাধিত হয়।
৯. কর্মসংস্থান সৃষ্টি : এ পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল উৎপাদনমূখী কর্মসংস্থান সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে অনেকটা অগ্রগতি অর্জিত হয়।
১০. পরিবহণ ও যোগাযোগ : বাংলাদেশের পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই অনুন্নত। অপরিকল্পিত পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ ছিল যথাক্রমে ৬২৪০ ও ১২৩৩ কোটি টাকা। এতে উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয় ৫৯% কিন্তু অর্জিত হয় ৫.৩ ভাগ প্ৰায় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন করা চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়।
এ পরিকল্পনার প্রথম দুই বছরের মতো বাকি বছরগুলোতেও যদি অনুকূল আবহাওয়া ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা যেত তবে চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফলতা অর্জিত হতো বলে অনুমান করা হয় ।