বাংলাদেশের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা কর

বাংলাদেশের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা কর
বাংলাদেশের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা কর

বাংলাদেশের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা কর

  • অথবা, বাংলাদেশের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কী? এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আলোচনা কর। 
  • অথবা, বাংলাদেশের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা দাও ।

উত্তর : ভূমিকা : প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নানা কারণে তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশে একটি দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৭৮-৮০) প্রণয়ন হয়। 

পদ্ধতিগত দিক থেকে দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনাটি গতানুগতিকতার গণ্ডি কাটিয়ে ওঠতে না পেরে ১৯৮০ সালের ৩০ জুন দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হয়। 

বাংলাদেশের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় প্রথম পঞ্চবার্ষিকী ও দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে ধারা সূচিত হয়েছিল তাকে ত্বরান্বিত ও সুসংহত করাই ছিল দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা : বাংলাদেশের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মেয়াদকাল ছিল ১৯৮০- ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত। ১৯৮০ সালের ১ জুলাই থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয় এবং ১৯৮৫ সালের ৩০ জুন এ পরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হয় । 

বাংলাদেশের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় মোট বরাদ্দ ছিল ২৫,৫৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২০,১২৫ কোটি টাকা এবং বেসরকারি খাতে ৫,৪৭০ কোটি টাকা। 

কিন্তু এ পরিকল্পনায় ধার্যকৃত বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় ব্যাপ্তি ও ব্যয়বরাদ্দ পুনরায় নির্ধারণ করা হয়। 

পুননির্ধারিত পরিকল্পনায় মোট ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ ১৭,২০০ কোটি টাকা ধার্য হয়। সংশোধিত এ পরিকল্পনায় সরকারি ব্যয় ধার্য হয় ১১,১০০ কোটি টাকা এবং বেসরকারি খাতে ধার্য হয় ৬,১০০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : বাংলাদেশের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রধান প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো :

১. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন : বাংলাদেশের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন। এ লক্ষ্য নিশ্চিতকল্পে মৌলিক প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর পর্যাপ্ত যোগান নিশ্চিত করা।

২. গ্রামীণ জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন : এ পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল স্থানীয় সংস্থাসমূহের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা। পাশাপাশি সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই ছিল দ্বিতীয় পদ্মবার্ষিকী পরিকল্পনার উদ্দেশ্য।

৩. নিরক্ষরতা দূরীকরণ : দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় নিরক্ষরতা দূরীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের মাধ্যমে ৯০% শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়।

৪. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ; এ পরিকল্পনায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পায়। পরিবার পরিকল্পনার কর্মসূচি সম্প্রসারণের মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শতকরা ২.৮ ভাগ থেকে কমিয়ে শতকরা ১.৫ ভাগে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়।

৫. সামাজিক ন্যায়বিচার : বাংলাদেশের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আয় ও সম্পদের সুসম বণ্টন এবং উন্নত সামাজিক জীবনের নিশ্চয়তা বিধান ।

৬. কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি : দ্বিতীয় পত্রবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা। এ পরিকল্পনায় কৃষি খাতে শতকরা বার্ষিক ৫.০ ভাগ এবং শিল্পক্ষেত্রে বার্ষিক শতকরা ৮.৪ ভাগ প্রবৃদ্ধির হার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়।

৭. খাদ্যে স্বয়সম্পূর্ণতা অর্জন : এ পরিকল্পনায় দেশে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের ওপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় এ পণবার্ষিকী পরিকল্পনায় ১৯৮৪-৮৫ সাল নাগাদ খাদ্য উৎপাদন ১ কোটি ৭৫ লাখ টনে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয় ।

৮. সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ : দ্বিতীয় পণ্যবার্ষিকী পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য হলো সেচ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ। সেচের আওতাভুক্ত এলাকার পরিমাণ ৩১ লাখ একর থেকে পরিকল্পনার শেষ বছরে ৭২ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ধায় হয়। 

৯. মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি : দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য ছিল জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা। এ লক্ষ্যে মাথাপিছু আয় বার্ষিক শতকরা ৩.৫ ভাগ হারে বৃদ্ধি করা ছিল এ পরিকল্পনার উদ্দেশ্য।

১০. জাতীয় সঞ্চয় বৃদ্ধি : বাংলাদেশের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল ১৯৮৪-৮৫ সাল নাগাদ অর্থাৎ শেষ বছরে জাতীয় সঞ্চয় মোট জাতীয় উৎপাদনের (GDP) এর ৭.১৬ শতাংশে উন্নীত করা ।

১১. বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস : দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ১৯৮৪-৮৫ সাল অর্থ শেষ বছরের মধ্যে বৈদেশিক সাহায্যের হারের ওপর নির্ভরশীলতার হার শতকরা ৬১ ভাগে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়। 

১২. বেকারত্ব দূরীকরণ : এ পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো বেকারত্ব দূরীকরণ। এ লক্ষ্যে পল্লি এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অধিক লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাই ছিল দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার বিশেষ উদ্দেশ্য। 

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কয়েকটি খাত বিশেষ অগ্রাধিকার পায়। তার মধ্যে পল্লি উন্নয়ন, শিল্প, কৃষি, পানি সম্পদ ও খনিজ সম্পদ খাত অন্যতম। 

যদিও প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, মুদ্রাস্ফীতি প্রভৃতি কারণে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৮০-৮৫) কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। 

তথাপি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব কম নয়। সর্বোপরি দেশজ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে সামগ্রিক উন্নয়নই ছিল দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ