বাংলাদেশে স্থানীয় পর্যায়ের পরিকল্পনার কৌশলসমূহ আলোচনা কর
বাংলাদেশে স্থানীয় পর্যায়ের পরিকল্পনার কৌশলসমূহ আলোচনা কর |
বাংলাদেশে স্থানীয় পর্যায়ের পরিকল্পনার কৌশলসমূহ আলোচনা কর
- অথবা, বাংলাদেশে স্থানীয় পর্যায়ের পরিকল্পনার কৌশল বা ধাপসমূহ লেখ।
- অথবা, বাংলাদেশে স্থানীয় পর্যায়ের পরিকল্পনার ধাপসমূহ বর্ণনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করে এবং স্থানীয় সরকারের সাথে পরামর্শ করে স্থানীয় উন্নয়নের জন্য যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তাকে স্থানীয় পর্যায়ের পরিকল্পনা বলে অবহিত করা যায়।
জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে স্থানীয় পর্যায়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। কেননা, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর বেশিরভাগ মানুষ স্থানীয় এলাকায় বসবাস করে।
স্থানীয় পর্যায়ের পরিকল্পনার মাধ্যমে অধিক সংখ্যক লোকের কাছে সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। স্থানীয় পরিষদের ধাপ অনুসরণ করে স্থানীয় পর্যায়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় ।
বাংলাদেশে স্থানীয় পর্যায়ের পরিকল্পনার কৌশল বা ধাপসমূহ : নিম্নে বাংলাদেশে স্থানীয় পর্যায়ের পরিকল্পনার কৌশল বা ধাপসমূহ বর্ণনা করা হলো :
১. গ্রামীণ পর্যায়ে পরিকল্পনা : গ্রামীণ এলাকায় আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য গ্রামীণ পর্যায়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে । গ্রামীণ পর্যায়ে পরিকল্পনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে –
ক. সমগ্র গ্রাম উন্নয়ন ।
খ. কাঠামোগত সংস্কারের জন্য নতুন কর্মসূচি গ্রহণ ।
গ. সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার।
ঘ. সকল জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উন্নয়ন ।
ঙ. গ্রাম্য অবকাঠামোর উন্নয়ন সাধন ।
চ. টার্গেট গ্রুপের উন্নয়ন ।
২. ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিকল্পনা : ইউনিয়ন পরিষদ হলো পল্লি অঞ্চলের সর্বনিম্ন প্রশাসনিক একক । গ্রাম চৌকিদারি আইনের ১৮৭০ এর অধীনে ইউনিয়ন পরিষদের সৃষ্টি হয়।
এ আইনের অধীনে প্রতিটি গ্রামে পাহারা বা টহল ব্যবস্থা চালু করার উদ্দেশ্যে কতকগুলো গ্রাম নিয়ে একটি করে ইউনিয়ন গঠিত হয়।
এই প্রক্রিয়ার বিকাশের মধ্য দিয়ে একটি স্থানীয় সরকার ইউনিটের ধারণার সৃষ্টি হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এর ভূমিকা নিরাপত্তামূলক কর্মকাণ্ডে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তীকালে এটিই স্থানীয় সরকারের প্রাথমিক ইউনিটের ভিত্তিরূপে গড়ে ওঠে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ৪৫৬২টি ইউনিয়ন আছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিকল্পনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে
ক. খানা পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা।
খ. অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন ।
গ. স্থানীয় সম্পদের সদ্ব্যবহার।
ঘ. উন্নয়নে জনগণের অংশগ্রহণ ।
ঙ. স্থানীয় নেতৃত্বের বিকাশ।
৩. উপজেলা পর্যায়ে পরিকল্পনা : উপজেলা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ একক। কয়েকটি গ্রাম বা ইউনিয়ন মিলে একটি উপজেলা গঠিত হয়।
একটি উপজেলার প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত স্থানীয় জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত পরিষদ উপজেলা পরিষদ নামে পরিচিত।
উপজেলা পরিষদের মেয়াদকাল মিটিংয়ের দিন থেকে ৫ বছর। সময়ের মধ্যে উপজেলা পরিষদ কর্তৃক বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। নিম্নে কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরা হলো :
ক. কৃষির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ।
খ. স্থানীয় সম্পদের সদ্ব্যবহার।
গ. কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি।
ঘ. প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তার।
৪. জেলা পর্যায়ে পরিকল্পনা : জেলার সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রয়েছে 'জেলা পরিষদ'। একজন চেয়ারম্যান, পনেরো জন সদস্য ও পাঁচ জন সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠিত হয়, যারা প্রাপ্তবয়স্ক ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন।
নির্বাচিত এসব সদস্যরা জেলার উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকে যা জেলা পর্যায়ের পরিকল্পনা হিসেবে বিবেচিত হয়। নিম্নে কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরা হলো :
ক. জেলার সকল উন্নয়ন কার্যক্রমের পর্যালোচনা।
খ. উপজেলা ও পৌরসভা কর্তৃক গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি পর্যালোচনা ।
গ. সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত নয় এ প্রকার জনপথ, কালভার্ট ও ব্রিজের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ।
ঘ. সরাইখানা, ডাকবাংলা ও বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণ।
ঙ. জেলা পরিষদের অনুরূপ কার্যাবলি সম্পাদনকৃত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা।
চ. সরকার কর্তৃক জেলা পরিষদের ওপর অর্পিত উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।
৫. বিভাগীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা : বিভাগ হচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করার সর্বশেষ ধাপ। বিভাগের পরিধি বড় হওয়াতে এর পরিকল্পনার পরিধিও বড়। নিম্নে বিভাগীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা আলোচনা করা হলো :
ক. জনগণের জন্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা।
খ, স্থানীয় ও জাতীয় আয় বৃদ্ধি করা।
গ. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা।
ঘ. খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
ঙ. দ্রুত শিল্পায়ন করা।
চ. সম্পদের সুসম বণ্টন এবং
ছ. অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, স্থানীয় পর্যায়ের পরিকল্পনা প্রণয়ন করার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের জীবনমান পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরো সমাজকে বিভিন্ন ব্যবহারিক গ্রুপে সংগঠিত করা হয়।
তবে স্থানীয় পর্যায়ে গৃহীত এসব পরিকল্পনা সফল করতে হলে প্রয়োজন সক্রিয় সামাজিক সংগঠন যা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। স্থানীয় সম্পদ, অর্থ, উপকরণাদি ও জনশক্তিকে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজে ব্যবহার করতে হবে।