উন্নয়নশীল দেশে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ৫টি কারণ উল্লেখ কর
উন্নয়নশীল দেশে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ৫টি কারণ উল্লেখ কর |
উন্নয়নশীল দেশে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ৫টি কারণ উল্লেখ কর
উত্তর : ভূমিকা : আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম আলোচ্যবিষয় হলো রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ। রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ব্যতীত কোন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয় না।
রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ হচ্ছে রাজনৈতিক উন্নয়নের মনস্তাত্ত্বিক দিক। এটি রাজনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে কাজ করে। তবে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার জন্য কতকগুলো মাধ্যমের প্রয়োজন পড়ে।
রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের কারণ/মাধ্যম : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ব্যক্তির সামগ্রিক সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। যে যে কারণে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ সম্পন্ন হয়, তার মধ্যে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ নিয়ে আলোচনা করা হলো :
১. পরিবার (Family) : উন্নয়নশীল দেশে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো পরিবার। পরিবারের মাধ্যমেই একজন মানুষের জানার হাতেখড়ি হয়। প্রতিটা মানব শিশু জন্মের পর তার চাহিদা পূরণের স্বার্থে পরিবারের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে।
এরূপ নির্ভরশীলতার কারণে পরিবারের যে রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও আচার আচরণ বিরাজ করে তার দ্বারা মানব শিশুর রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ঘটে।
২. রাজনৈতিক দল (Political parties) : উন্নয়নশীল দেশের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণে রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিটা রাজনৈতিক দলের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাজনৈতিক বিষয় ও সমস্যার ব্যাপারে জনগণকে অবহিত করা।
তাছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো তাদের আদর্শ, মূল্যবোধ, নীতি প্রচারের পাশাপাশি অন্যান্য দলের দোষত্রুটিগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরে। এতে জনগণের রাজনৈতিক মনোভাব ও বিশ্বাস সুদৃঢ় হয় ।
৩. জনসভা ও সমাবেশ (Public meeting & demonstration) : উন্নয়নশীল দেশের রাজনীতিতে রাজনৈতিক প্রচারণার অন্যতম মাধ্যম সভাসমিতি ও সমাবেশ। গ্রামের অর্ধশিক্ষিত অশিক্ষিত লোকেরা এর মাধ্যমেই রাজনৈতিক জ্ঞান আহরণ করে থাকে।
এতে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতাবোধ জাগ্রত হয় যা রাজনৈতিক সামাজিকীকরণে প্রভাব বিস্তার করে ।
৪. গণমাধ্যমে (Mass Media) : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের প্রভাবশালী মাধ্যমে হচ্ছে গণমাধ্যম। মানুষের মধ্যে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশ্বাস, মনোভাব, মূল্যবোধ বিকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের কোন বিকল্প নেই।
রাজনীতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে গণমাধ্যমগুলো মানুষের মৌলিক বোধকে জাগ্রত করে। এতে মানুষের মধ্যে রাজনীতি বিষয়ক ইতিবাচক ধ্যানধারণার বিকাশ ঘটে যা রাজনৈতিক সামাজিকীকরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৫. সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (Social & Religious institutions ) : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী মাধ্যম হচ্ছে সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ। উন্নয়নশীল দেশে সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে মানুষ রাজনৈতিক শিক্ষালাভ করে।
এছাড়া প্রতিটা প্রতিষ্ঠানেরই সুনির্দিষ্ট কিছু আদর্শ, মূল্যবোধ ও নিয়মনীতি থাকে। এসব আচার আচরণ ও মূল্যবোধের প্রতি সাধারণ মানুষের গভীর শ্রদ্ধাবোধ রাজনৈতিক সামাজিকীকরণকে ত্বরান্বিত করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ হচ্ছে একটি প্রক্রিয়া যার উদ্দেশ্য রাজনৈতিক কাঠামোর পুনর্গঠন। আধুনিক রাষ্ট্রকাঠামো বিনির্মাণে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের কোন বিকল্প নেই।