উন্নয়নের জন্য সংস্কার বা বিপ্লবী অধিক গ্রহণযোগ্য যুক্তি দেখাও
উন্নয়নের জন্য সংস্কার বা বিপ্লবী অধিক গ্রহণযোগ্য যুক্তি দেখাও |
উন্নয়নের জন্য সংস্কার বা বিপ্লবী অধিক গ্রহণযোগ্য যুক্তি দেখাও
উত্তর : ভূমিকা : বিপ্লব অর্থ আমূল পরিবর্তন। সমাজব্যবস্থাকে পাল্টানোর কাজ। বড় ধরনের সংস্কারকেও অনেকে বিপ্লব বলে অভিহিত করে থাকে।
অন্যদিকে, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা বহাল রেখে তার কিছু কিছু দোষত্রুটি সংশোধনের জন্য গৃহিত কর্মকাণ্ড হলো সংস্কার।
বিপ্লবীরা মনে করে বিপ্লবের মাধ্যমে উন্নয়ন বা পরিবর্তন সম্ভব। অন্যদিকে বিপ্লববিরোধীরা মনে করে যে সংস্কারের মাধ্যমে সমাজব্যবস্থার সুন্দর উন্নয়ন করা সম্ভব।
সংস্কার না বিপ্লব কোনটি অধিক গ্রহণযোগ্য (When is most acceptable reformation or revolution) : তৃতীয় বিশ্বের একটি অন্যতম দরিদ্র দেশ বাংলাদেশ। এদেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো বিশ্লেষণ করলে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, এদেশের উন্নয়নের জন্য সংস্কার নয়, বিপ্লবই একমাত্র উপায়।
কেননা বর্তমানে প্রচলিত সমাজকাঠামোর মধ্যে বসেই সুবিধাভোগী গোষ্ঠীগুলো তাদের স্বার্থরক্ষা করে চলেছে।
এরূপ অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হল বিদ্যমান সামাজিক কাঠামো ভেঙে দেয়া এবং নতুন কাঠামোর নেতৃত্ব প্রবর্তন করা।
তাছাড়া বিপ্লবের পক্ষে আরও যেসব যুক্তি রয়েছে সেগুলো হল :
ক. বিপ্লবের মাধ্যমে পুরাতন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও শাসনব্যবস্থার বৈধতার ধরন পরিবর্তন করা সম্ভব ।
খ. এর মাধ্যমে পুরাতন সামাজিক শ্রেণি বিলুপ্ত হবে এবং নতুন নতুন শ্রেণি গড়ে উঠবে।
গ. সমাজে নতুন রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চালু হবে এবং রাজনৈতিক সমাজ পুনর্নির্ধারিত হবে।
ঘ. রাজনৈতিক বৈধতার নতুন ধারণা প্রবর্তিত ও গৃহীত হবে।
ঙ. নতুন শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে।
চ. নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো সমাজের চাহিদা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে পারবে।
ছ. সর্বশ্রেণীর জনগণ রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে ।
জ. সমাজে প্রচলিত শ্রেণি ব্যবস্থা বিলুপ্ত হবে এবং শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে।
ঝ. সংক্ষিপ্ত ও সীমিত আনুগত্যের পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় আনুগত্যের নতুন মানদণ্ড প্রবর্তিত হবে। ঞ. অর্থনীতির নতুন মানদণ্ড নির্ধারিত হবে ।
ট, নতুন রাজনৈতিক কৃষ্টির বিকাশ ঘটবে এবং সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তন হবে। ঠ. রাজনৈতিক একাত্মবোধের সমস্যা দূরীভূত হবে।
অপরদিকে, সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব নয়। কারণ সংস্কার এর মাধ্যমে অনেক পরিবর্তন আনা সম্ভব হয় না।
সেক্ষেত্রে বিপ্লব এর কোন বিকল্প পথ নেই। তবে সংস্কারের ফলে এসব দেশে শ্রেণি শোষণ এর মাত্রা তুলনামূলকভাবে বিপ্লবের তুলনায় কম।
তাছাড়া সংস্কারের মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান না হয়ে বরং নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। যেমন- ভূমি সংস্কার কর্মসূচি, প্রশাসনিক সংস্কার কর্মসূচি ইত্যাদি। কিন্তু এসব কর্মসূচি কেবল কাগজে কলমে ও আলোচনার টেবিলে সীমাবদ্ধ থেকেছে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সংস্কার ও বিপ্লব দু'টি প্রত্যয় একই অর্থে ব্যবহৃত হয় না। এর মধ্যে কিছু কৌশলগত পার্থক্য রয়েছে।
সংস্কারমূলক কর্মসূচি ছাড়া যে কোন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয় না। তবে সংস্কারের পাশাপাশি বিপ্লবও দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে।
অর্থাৎ বিপ্লব ও সংস্কার এর মধ্যে উদ্দেশ্যগত পার্থক্য একই কিন্তু এখানে কৌশলগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের পিছনে সংস্কার ও বিপ্লব উভয়ের অবদান রয়েছে।