সভ্যতা উত্থানের তত্ত্বগুলো উল্লেখ কর
সভ্যতা উত্থানের তত্ত্বগুলো উল্লেখ কর |
সভ্যতা উত্থানের তত্ত্বগুলো উল্লেখ কর
উত্তর : ভূমিকা : মানুষ তার নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখা এবং উন্নত জীবনের আশায় যেসব কর্মপ্রচেষ্টায় রত থাকে তার সমষ্টিই সভ্যতা।
সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারণা নবতর কোন সংযোজন নয়। প্রাচীনকাল থেকে মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সভ্যতার যাত্রা শুরু হয়েছিল।
আবার প্রকৃতির বিরূপ আচরণে অনেক সভ্যতা বিলীনও হয়ে গেছে। তবে এর পিছনে বহুবিধ মতামত বিদ্যমান ।
সভ্যতা উত্থানের তত্ত্বসমূহ : সভ্যতার উদ্ভব ও বিকাশের পিছনে বিদ্যমান মতবাদসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. ভৌগোলিক তত্ত্ব : সভ্যতার উদ্ভব ও বিকাশের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক তত্ত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল । প্রাচীন বা আধুনিক অনেক সভ্যতার উদ্ভব ও বিকাশ যেমন আবহাওয়াজনিত বৈচিত্র্যের দরুন হয়েছিল তেমনি আবহাওয়াজনিত বৈরিতার দরুন অনেক সভ্যতা ধ্বংসপ্রাপ্তও হয়েছে।
সিন্ধু সভ্যতার পতন এবং মায়া সভ্যতার বিকাশের পিছনে আবহাওয়া ও জলবায়ুর যে বিরাট প্রভাব ছিল তা বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্যে স্পষ্ট।
২. ভূমির অবক্ষয়জনিত মতবাদ : সভ্যতার উৎপত্তি ও বিকাশের ক্ষেত্রে ভূমির অবক্ষয়জনিত মতবাদের প্রভাব খুবই সুদূরপ্রসারী।
উন্নত ভূমির কারণে প্রাচীনকালে অনেক সভ্যতার উদ্ভব হয়েছিল তেমনিভাবে ভূমির অবক্ষয়ের কারণে "একাধিক সভ্যতাও বিলীন হয়ে গিয়েছিল।
তবে ভূমির অবক্ষয় একটি গতিশীল এবং পরিবর্তিত অবস্থা। সভ্যতার উদ্ভবের চেয়ে বিলীনের ক্ষেত্রে ভূমি বা মৃত্তিকার অবক্ষয়জনিত তত্ত্ব বেশি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল ।
৩. ভূপ্রাকৃতিক গঠন : সভ্যতার উৎপত্তি ও বিকাশের ক্ষেত্রে ভূপ্রাকৃতিক গঠনের ভূমিকা অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। প্রাচীনকালে ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের উপর নির্ভর করে বহু সভ্যতার আবির্ভাব ঘটেছিল।
কারণ একেবারে বৈচিত্র্যহীন হলে সভ্যতা হবে গতিহীন এবং স্থবির। পক্ষান্তরে, ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য সভ্যতার উৎপত্তি ও বিকাশকে ত্বরান্বিত করে।
উদাহরণস্বরূপ, ইউরোপে উন্নত সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের কারণে সম্ভব হয়েছিল।
৪. যাযাবর মতবাদ : সভ্যতা বিকাশের ক্ষেত্রে যাযাবর শ্রেণির ভূমিকা ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। কেননা মানুষের আদিম জনগোষ্ঠী ছিল যাযাবর।
তারা নিজেদের প্রয়োজনে একস্থান থেকে অন্যস্থানে পাড়ি দিত এবং তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত করতো। ক্রমান্বয়ে এ যাযাবর শ্রেণিই রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করে।
বিশেষ করে, মেসোপটেমিয়া উপকূলে কিছু সভ্যতা যেমন— সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয়, এসেরিয়া ও ক্যালডীয় সভ্যতা মূলত যাযাবর শ্রেণি গড়ে তুলেছিল । সুযোগ সুবিধার আধিক্য এবং অনুকূল পরিবেশেই তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করতো।
৫. প্রতিবন্ধকতা এবং মোকাবিলা তত্ত্ব : পৃথিবীর বড় বড় সভ্যতা প্রতিকূল পরিবেশের কঠোরতার মধ্য দিয়ে উদ্ভব হয়েছিল। কেননা মানুষ তার প্রয়োজনে প্রতিরোধ বা মোকাবিলার মাধ্যমে বহু সভ্যতা গড়ে তুলেছে।
এ তত্ত্বের মূল কথা হচ্ছে, সর্বযুগে প্রতিকূলতাই মানুষকে সফলতার দিকে অনুপ্রাণিত করেছে। প্রাচীনকালে মানুষের সম্মুখে যখনই কোন সমস্যা এসে হাজির হতো তখনই তার সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতো। এতে স্পষ্ট হয় যে প্রতিকূলতাকে মোবাবিলার মাধ্যমেই নতুন নতুন সভ্যতার আবির্ভাব হয়েছিল ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সভ্যতার উৎপত্তি ও বিকাশের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকগণ বিভিন্ন সময় ও কালের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেছেন। তাঁরা সভ্যতা বিকাশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিয়ামকের কথা জোরালোভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
তবে একথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, সভ্যতার উৎপত্তি ও বিকাশের ক্ষেত্রে যে কোন প্রতিকূলতা বা প্রতিবন্ধকতাই আদিম মানুষকে সভ্যতা তথা স্থায়ী বসতি গঠনে অনুপ্রাণিত করেছিল।