সামাজিকীকরণের মাধ্যম হিসেবে গণমাধ্যম ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর
সামাজিকীকরণের মাধ্যম হিসেবে গণমাধ্যম ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর |
সামাজিকীকরণের মাধ্যম হিসেবে গণমাধ্যম ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর
- অথবা, রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যম হিসেবে গণমাধ্যম ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : ভূমিকা : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশে অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাধ্যম কাজ করে।
তার মধ্যে সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ও বিভিন্ন ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে, গণমাধ্যমও রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করে।
রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ (Political socialization) : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ হল এমন একটি পদ্ধতি যার সাহায্যে শিশুর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পথে রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও মনোবৃত্তি জাগরিত করা যায় এবং প্রাপ্তবয়স্কদের বিভিন্ন রাজনৈতিক উপাত্তের উপযোগী করে গড়ে তোলা যায়।
রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যম হিসেবে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে পরিবারের পাশাপাশি ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য।
মুসলিম দেশগুলোতে দেখা যায় যে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রভাব অন্যান্য দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ। আবার যেসব দেশে বহুজাতিভিত্তিক কিংবা বহু বর্ণভিত্তিক সমাজ বিরাজ করে সেসব দেশে জাতিভিত্তিক কিংবা বর্ণভিত্তিক সমাজ বিরাজ করে সেসব দেশে যুবকরাই আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয় সংহতি গড়ে তোলে।
বিভিন্ন সংগঠন, ইউনিয়ন এবং প্রতিষ্ঠানসমূহ সকলের স্বার্থরক্ষা করতে তৎপর থাকলে সেখানেই সবার অজান্তে এক ধরনের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
এ পর্যন্ত আমরা রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যম হিসেবে যেসব বিষয়ের উল্লেখ করেছি তা নিয়ে আমাদের আরও চিন্তাভাবনা করা উচিত।
তবে এতটুকু স্মরণ রাখতে হবে যে, এসব মাধ্যমসমূহ হচ্ছে একে অপরের সম্পূরক এবং এরাই রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যমে আমরা বলতে পারি, বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে কেমন ধরনের পরিবর্তন কিভাবে নিয়ে আসতে পারে।
তবে এটা মনে করাটাও উচিত হবে না যে, রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ হচ্ছে রাজনৈতিক ঐতিহ্য ধরে রাখার একমাত্র মাধ্যম কিংবা একতরফা আদর্শ সমুন্নত করার একমাত্র উপকরণ।
মার্কসবাদী চিন্তাবিদরা মনে করেন, এটা হচ্ছে এমন এক মতবাদ যা পুঁজিবাদী মনমানসিকতা থেকে উৎসারিত।
তবে মার্কিন সমাজবিজ্ঞানীরা এ বিষয়ের উপর ব্যাপক জোর দিয়েছেন। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য এ বিষয়টা যথেষ্ট প্রয়োজনীয় হিসেবে গণ্য হয়েছে।
গণমাধ্যমের ভূমিকা : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা সর্বাধুনিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে সংবাদপত্র, বেতার, টেলিভিশন রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই উন্নতির সাথে সাথে এর গুরুত্বও অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে Becker বলেন যে, "The media functions as a political information giver to adolenscents and young children."
প্রথমত, সকলকে মনে রাখতে হবে যে, গণমাধ্যম ব্যবহৃত হয় সে সমাজের উন্নয়ন এবং প্রকৃতির উপর, তার গণমাধ্যমের প্রভাবের উপর।
দ্বিতীয়ত গণমাধ্যমের আশ্রয় নিয়ে যে আদর্শ এবং মূল্যবোধের প্রচার করা হয় তা সদস্যদের মধ্য থেকে কেউ করে না বরং এটা হচ্ছে এক ধরনের সদস্য বহির্ভূত প্রচারণা।
দ্বিতীয়ত, যেহেতু পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের সরকারই গণমাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে, সেহেতু গণমাধ্যমের প্রচারণাগুলো সর্বদা সরকারের অনুকূলেই থাকে।
অর্থাৎ গণমাধ্যমগুলো সকল দেশে সরকারের বিরোধিতা করে না। সেজন্য এটাকে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যম না বলে যন্ত্র বা উপকরণ বলাটাই সঠিক হবে।
তৃতীয়ত, গণমাধ্যম সরাসরি জনগণকে প্রভাবিত করে না। গণমাধ্যম দ্বারা প্রচারিত মতবাদ এবং আদর্শ মূল্যবোধ দ্বারাই গণমাধ্যমে শ্রোতা বা দ্রষ্টারা প্রভাবিত হয়। আর গণমাধ্যমে প্রচারণা যেমন ব্যাপক তেমনি এর প্রভাবও ব্যাপক।
গণমাধ্যম কখনও নিজে কোন মূল্যবোধ বা আদর্শের সৃষ্টি করতে পারে না, বরং বিদ্যমান আদর্শ কিংবা মূল্যবোধকে সে শক্তিশালী কিংবা দুর্বল করে তোলে ।
চতুর্থত, সাধারণত দেখা যায় যে, গণমাধ্যমগুলো নতুন কোন সরকারি উৎসকে সমর্থন করে। সেজন্য এদেরকে পরিবর্তনের মাধ্যম বলে চিহ্নিত করা যায়।
তবে দেখা যায়, যেসব দেশে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের বিকাশ লাভের ক্ষেত্রে স্বাধীন এবং জনগণ গণমাধ্যমের ব্যবহারে ব্যাপক স্বাধীনতা উপভোগ করে সেসব দেশে গণমাধ্যমগুলো উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় পরিবর্তনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে ।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গণমাধ্যম সামাজিক ও রাজনৈতিক আধুনিকীকরণের ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করতে তৎপর।
তবে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ক্ষেত্রে সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের ব্যাপক ভূমিকা পালন করে এ বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। এ দুটি মাধ্যম ছাড়া রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের সফলতা অচিন্ত্যনীয় ।