রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের সাথে ইতিহাসের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য আলোচনা কর
রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের সাথে ইতিহাসের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য আলোচনা কর |
রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের সাথে ইতিহাসের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য আলোচনা কর
- অথবা, রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের সাথে ইতিহাসের সম্পর্ক আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব হল মানবসমাজের সামগ্রিক অনুশীলন ও বিশ্লেষণ। তেমনি ইতিহাস হল মানবসমাজেরই ইতিহাস।
সুতরাং রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব ও ইতিহাসে এ দু'টি সামাজিক বিজ্ঞানের উপজীব বিষয় অভিন্ন। সমাজবদ্ধ মানুষের আলোচনাই হল উভয় শাস্ত্রের কেন্দ্রীয় বিষয়।
রাজনৈতিক সমাজততত্ত্ব : যে কোন সামাজিক বিজ্ঞানের ন্যায় রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের সংজ্ঞা ও ধারণা তর আলোচনার পরিধির দ্বারাই নির্ধারিত হয়। সাবেকি রাজনীতি ছিল সম্পূর্ণরূপে রাজনীতিকেন্দ্রিক।
কিন্তু আধুনিক কালে বহুলাংশে সামাজিক স্বরূপ সম্পন্ন হয়ে পড়েছে। আধুনিক রাজনীতির ধীরা বাস্তবে সময় সমাজের বৃহত্তর ক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত।
রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের সাথে ইতিহাসের সাদৃশ্য বিষয়সমূহ : রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব ও ইতিহাস উভয়ই মানবসমাজের উপর বিস্তারিত আলোচনা করে । নিম্নে রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব ও ইতিহাসের মধ্যে সাদৃশ্য বিষয়সমূহ আলোচিত হল :
১. বিষয়বস্তুগত সাদৃশ্য : ইতিহাস ও রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের মধ্যে বিষয়বস্তুগত সাদৃশ্য আছে। অধ্যাপক বটোমোর এর অভিমত অনুসারে ইতিহাস ও রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র করা সম্ভব নয়।
এ দু'টি বিদ্যার বিষয়বস্তু এক ও অভিন্ন। পরিবর্তনশীল সমাজের অন্তর্ভুক্ত মানুষই হল উভয় বিদ্যার বিষয়বস্তু ।
২. পরস্পরের পরিপূরক : সমাজতত্ত্ব ও ইতিহাস হল একে অপরের পরিপূরক। অভিন্নতার ভিত্তিতে উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সংযোগ সম্পর্ক বর্তমান।
সমাজতত্ত্ব ও ইতিহাস উভয়ই পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। বস্তুত এ দু'টি সামাজিক বিজ্ঞান একে অপরের পরিপূরক হিসেবে গণ্য।
৩. মৌলিক বিষয়ের সাদৃশ্য : সমাজতত্ত্ববিদকে সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনধারার বিভিন্ন বিষয় ও দিক সম্পর্কে সম্পূর্ণ ও সুসঙ্গত জ্ঞান অর্জন করতে হয়।
অনুরূপভাবে ইতিহাসের বিষয়বস্তুকে সম্যকভাবে অনুধাবন করার উদ্দেশ্যে ইতিহালবিদকেও সমাজতত্ত্বের মৌলিক ধারণাসমূহ সম্পর্কে অবহিত হতে হয়।
৪. উপাদানগত সাদৃশ্য : উপজীব্য উপাদানের ব্যাপারে সমাজতত্ত্ব অনেকাংশে ইতিহাসের উপর নির্ভরশীল। সমাজতত্ত্ব মানবসমাজের ঐতিহাসিক বিকাশের উপর গুরুত্বারোপ করে।
ইতিহাস ও রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সাহায্য ও সহযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে তাদের উপাদানে এ সাহায্য ও সহযোগিতা লক্ষ্য করা যায়।
৫. অনুশীলন ক্ষেত্রে সাদৃশ্য : মানবজীবনের বিভিন্ন পর্যায়, জীবনধারণের পদ্ধতি, রীতিনীতি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে প্রকাশিত আচার আচরণের অভিব্যক্তি সম্পর্কে সমাজতত্ত্বে অনুশীলন করা হয় এবং এসব কারণে প্রয়োজনীয় উপাদানের জন্য সমাজতত্ত্বকে ইতিহাসের উপর নির্ভর করতে হয় ।
৬. ইতিহাস ও রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব উত্তরই তথ্যভিত্তিক : অধ্যাপক বটোমোরের অভিমত অনুসারে সমাজতত্ত্বে ব্যবহার্য উপাদানসমূহ বহুলাংশে ইতিহাস সরবরাহ করে।
আধুনিক ইতিহাসকে সামাজিক ইতিহাস বা মানবসমাজের ইতিহাস বললে অত্যুক্তি হয় না। দৃষ্টিভঙ্গির স্বাতন্ত্র্য থাকলেও সমাজতত্ত্ব ও ইতিহাস উভয়ই তথ্যভিত্তিক।
বটোমোর বলেছেন, “The comparative method often requires and historical sociology always requires, data which only the historian can supply."
বৈসাদৃশ্য বিষয়সমূহ : ইতিহাস ও রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের মধ্যে বৈসাদৃশ্য বিষয়সমূহ নিম্নে তুলে ধরা হল :
১. ইতিহাস বস্তুনিষ্ঠ, সমাজতত্ত্ব বিমূর্ত : অনেকের অভিমত অনুসারে সমাজতত্ত্বের আলোচনা বিমূর্ত (Abstract) ' বিপরীতক্রমে ইতিহাসের আলোচনা বস্তুনিষ্ঠ (Concrete)।
এ প্রসঙ্গে R. E. Park বলেন, "In the same sense that history is the concrete sociology is the abstract science of human experience and human nature"
২. আলোচ্যবিষয়ের পার্থক্য : আলোচনার বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে উভয় বিষয়ের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়, ইতিহাস মানবসমাে ইমান নিয়ে আলোচনা করলে !জনৈতিক সমাজতত্ত্ব চলমান আলোচনাকে অত্যধিক প্রাধান্য ছিল পারে
৩. উদ্দেশ্যগত পার্থক্য : রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব ও ইতিহাসের মধ্যে উদ্দেশ্যগত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। স্থান কালের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ঘটনার পর্যায়ক্রমে (Sequence) পর্যালোচনা করাই হল ইতিহাস।
অপরদিকে, রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব রাষ্ট্রের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ করে থাকে ।
৪. দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য : দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব ও ইতিহাস উভয়ের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
ঐতিহাসিক আনুষঙ্গিক ঘটনাবলি বিকৃত করে ঐতিহাসিক বিশেষ কোন যুদ্ধের বিবরণ লিপিবদ্ধ করে। পক্ষান্তরে, রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বে ব্যক্তিবর্গের পর প্রভাব প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করা হয় ।
৫. আলোচনার ক্ষেত্রে পার্থক্য : সাধারণত অতীতের ঘটনাসম্ভাব্যের মধ্যে ইতিহাসের আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকে। পক্ষান্তরে, সমকালীন বা নিক অতীতের বিষয়াদিতে সমাজতত্ত্ববিদদের উৎসাহ ও আগ্রহ পরিলক্ষিত হয় ।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, ইতিহাস ও রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব দু'টি স্বতন্ত্র সামাজিক বিজ্ঞান। এ বিষয়ে কোন দ্বিমতের অবকাশ নেই।
এ সত্ত্বেও আলোচ্য সামাজিক বিজ্ঞান দু'টিকে পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র করা সম্ভব নয়। উভয়েরই প্রধান উপজীব্য বিষয় হল মানবসমাজ।
তবে এদের উদ্দেশ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি একে অপর থেকে আলাদা, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উভয়ের অবদানকে অস্বীকার করা যায় না।
Prof. T. B. Bottomore , "It is of the greatest importance for the development of the social science that two subjects should be closely related."