রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের পদ্ধতিগুলোর বর্ণনা দাও
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের পদ্ধতিগুলোর বর্ণনা দাও |
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের পদ্ধতিগুলোর বর্ণনা দাও
- অথবা, রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের পদ্ধতিগুলো কী কী?
উত্তরঃ ভূমিকা : সমাজবিজ্ঞান বা রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে । কোন বিষয় সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে গবেষণার জন্য যে পন্থা বা উপায় ব্যবহৃত হয়, সেটাই মূলত পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত।
অর্থাৎ পদ্ধতি বলতে গোটা কাজটি কিভাবে করতে হবে সেটার পন্থা। সমাজবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু হচ্ছে সমাজ ও সামাজিক সম্পর্ক।
বিষয়বস্তুর জটিলতার কারণেই সমাজবিজ্ঞানে তথা রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানে একাধিক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের পদ্ধতিসমূহ : একটি সামাজিক বিজ্ঞানের শাখা হিসেবে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান যথাযথ পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের মাধ্যমে সুসংহত জ্ঞান অর্জনের জন্য কতকগুলো পদ্ধতি অনুসরণ করে। পদ্ধতিগুলো নিম্নরূপ :
১. ঐতিহাসিক পদ্ধতি : ঐতিহাসিক পদ্ধতিতে অতীত সমাজের ঘটনা, সামাজিক প্রক্রিয়া, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির ধারাবাহিক বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে।
এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বর্তমান সমাজের পটভূমি, প্রকৃতি এবং ভূমিকা সম্পর্কে জ্ঞান অনুসন্ধান করা। এ পদ্ধতিতে প্রকাশিত বিভিন্ন গ্রন্থ, পত্রপত্রিকা, গবেষণা রিপোর্ট, সরকারি দলিল প্রভৃতির সাহায্য ছাড়া সম্ভব হয় না।
২. পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি : সমাজবিজ্ঞানী এ পদ্ধতিতে কোন চলমান ঘটনা নিজ চোখে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গবেষণা করেন।
৩. দার্শনিক পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে সামাজিক বিষয়সমূহের অন্তর্নিহিত রূপ বা তাৎপর্য সম্পর্কে বিচার বিশ্লেষণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে গবেষক দার্শনিকের ভূমিকায় কাজ করেন। গবেষককে গবেষণাধীন বিষয়ের প্রতি আন্তরিক ও সংবেদনশীল হতে হয়।
দার্শনিক পদ্ধতি দ্বারা সমাজ বিশ্লেষণ জীবন্ত ও অর্থপূর্ণ হয়ে উঠে। সমাজচিন্তাবিদ ভিবেগ, ইবনে খালদুন, ম্যাক্স ওয়েবার প্রমুখ দার্শনিক পদ্ধতিতে সমাজ বিশ্লেষণ করেছেন।
৪. ক্রিয়াবাদ বা কার্যক্রম পদ্ধতি : সামাজিক রীতিনীতি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে কাজের মাঝে সমাজব্যবস্থাকে বাস্তবে রূপায়িত করছে, সে বিষয়ে অধ্যয়নের চেষ্টাই হচ্ছে এ পদ্ধতির লক্ষ্য। মূলত এ পদ্ধতির সাহায্যে সমাজের বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রমকে বিশ্লেষণ করা হয়।
৫. নৃতাত্ত্বিক পদ্ধতি : মানুষের সংস্কৃতি, ভাষাতত্ত্ব, জাতিতত্ত্ব ইত্যাদি সম্পর্কে জানার জন্য প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করে নৃতাত্ত্বিক পদ্ধতিতে সমাজ গবেষণা করা হয় ৷
৬. পরিসংখ্যান বা বিজ্ঞান পদ্ধতি : প্রাকৃতিক বিজ্ঞানসমূহের মধ্যে যে পদ্ধতিতে গবেষণা হয়, তাকেই পরিসংখ্যান পদ্ধতি বলা হয়। এ গবেষণা পদ্ধতি তিনটি স্তরে বিভক্ত। যথা :
ক. প্রকল্প প্রণয়ন
খ. প্রকল্পের পরীক্ষা নিরীক্ষা ও
গ. পরীক্ষা নিরীক্ষার ভিত্তিতে সামান্যীকরণ। পরিসংখ্যান পদ্ধতির সাহায্যে সামাজিক তথ্যাদির সংখ্যাগুলো ও তার নির্দিষ্ট পরিমাণকে নিয়ে প্রকৃত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় ।
৭. প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ পদ্ধতি : সামাজবিজ্ঞান কোন সমাজ বা গ্রাম সম্পর্কে গবেষণা করার জন্য সশরীরে সেখানে অবস্থান করে সম্পূর্ণ পরিস্থিতি নিজের আয়ত্তে এনে গবেষণা করেন।
৮. ঘটনা জরিপ পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে এক বা একাধিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে একটি সাধারণ সূত্রে আসার চেষ্টা করা হয়।
এ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে কোন নির্দিষ্ট বা বিশেষ এলাকার জনসাধারণের জীবন প্রণালী সম্পর্কিত অনেক তথ্য সহজে জানা যায়। সুনির্দিষ্ট সমাজের গবেষণা করা ও সামাজিক অবস্থা বিশ্লেষণ করাই এ পদ্ধতির লক্ষ্য।
৯. তুলনামূলক পদ্ধতি : একটি সমাজ অন্য সমাজ থেকে কতটা ভিন্নধর্মী সে সম্পর্কে জানার জন্য এ পদ্ধতি অধিক উপযোগী।
একটি সমাজের ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান তথা গোটা সমাজ অন্য একটি সমাজ থেকে কতটা ভিন্নধর্মী বা কতটা সহধর্মী সে বিষয়ে গবেষণা করতে হলে তুলনামূলক পদ্ধতির আশ্রয় নিতে হয়।
১০. বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতি : সামাজিক সমস্যার কারণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য সমাজবিজ্ঞানিগণ এ পদ্ধতির আশ্রয় নিয়ে থাকেন।
কোন সামাজিক সমস্যার সঠিক সমাধান খুঁজে বের করতে হলে ঐ সমস্যার সঠিক কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে।
অন্যথায় সুষ্ঠু সমাধান বের করা কষ্টকর হবে। তাই সমাজবিজ্ঞানিগণ সামাজিক অবস্থাকে বিশ্লেষণ করার জন্য এ পদ্ধতির ব্যবহার করে থাকেন।
১১. মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি : সামাজিক মানুষের আচার আচরণ, মনোভাব ও অভ্যাস সম্পর্কে জানার জন্য এ পদ্ধতি বহুল প্রচলিত । সমাজে মানুষকে একতাবদ্ধভাবে বাস করতে হলে পারস্পরিক সম্পর্কের প্রয়োজন হয় ।
১২. সামাজিক পরিমাপক পদ্ধতি : সমাজের বিভিন্ন ঘটনাবলি ও বৈশিষ্ট্যসমূহ পরিমাপ করার জন্য এ পদ্ধতি ব্যাপক কার্যকর।
এ পদ্ধতির মাধ্যমে সমাজবিজ্ঞানিগণ সমাজের তথা কোন দেশের কাজের পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, শিক্ষা, রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেয়। এ পদ্ধতি সামাজিক বিজ্ঞানের পাশাপাশি রাজনৈতিক সামাজিক বিজ্ঞানেও বেশ কার্যকর।
উপসংহার : রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব গবেষণা ও অধ্যয়নের জন্য বিভিন্ন উপযোগী পদ্ধতি বিদ্যমান। বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষাপটেও সামাজিক প্রেক্ষাপটে এক এক পদ্ধতি অধিক কার্যকরী হয়।