রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের কার্যক্রমসমূহ আলোচনা কর
রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের কার্যক্রমসমূহ আলোচনা কর |
রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের কার্যক্রমসমূহ আলোচনা কর
- অথবা, রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের কার্যাবলি আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ব্যক্তির সামগ্রিক সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার একটি অত্যাবশ্যকীয় দিক। Alan R. Ball তাঁর 'Modern Politics and Government' শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন, "Political socialization is the establishment and development of attitudes and belief about political system."
রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ছাড়া কোন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব পরিপূর্ণরূপে বিকশিত হয় না। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিস্টটল থেকে শুরু করে জন স্টুয়ার্ট মিল এবং অপরাপর রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ রাজনৈতিক সামাজিকীকরণকে সামাজিক পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক উন্নয়নকে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ (Political socialization) : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ হল এমন একটি পদ্ধতি যার সাহায্যে শিশুর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পথে রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও মনোবৃত্তি জাগরিত করা যায় এবং প্রাপ্তবয়স্কদের বিভিন্ন রাজনৈতিক উপাত্তের উপযোগী করে গড়ে তোলা যায়।
১. রাজনৈতিক সংস্কৃতির লালনপালন (Maintaining political culture) : এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের হাতে রাজনৈতিক সংস্কৃতি পৌঁছে দেয়াটাই মূলত রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের অন্যতম প্রধান কাজ।
স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের এ ধরনের ভূমিকাই মুখ্য। তবে যেহেতু দেখা যায়, স্থিতিশীল রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যাকেমধ্যেই অস্থিতিশীলতার শিকার হয়, সেহেতু অনেক সময় রাজনৈতিক সামাজিকীকরণকে রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারা বজায় রাখতে ব্যর্থ হতে দেখা যায়।
২. রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন (Modification of political culture) : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ মাঝেমধ্যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে বিভিন্ন পরিবর্তন ও উন্নয়ন নিয়ে আসে। রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের সাথে সামাজিক পরিবর্তনের সম্পর্ক থেকেই আমরা এটা উপলব্ধি করতে পারব।
৩. রাজনৈতিক সংস্কৃতির সৃষ্টি (Creating political culture): নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রতিটি সমাজেরই দরকার হয়ে পড়ে একটি নিজস্ব নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গঠন করা। এ কাজটি সাধিত হয়েছে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার কল্যাণে।
৪. রাজনৈতিক কৃষ্টির বিকাশ (Development of political culture) : রাজনৈতিক কৃষ্টির বিকাশ রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের কার্যাবলির অন্যতম দিক। রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যমে রাজনৈতিক কৃষ্টির বিকাশ সম্ভব হয়।
তাছাড়া রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ছাড়া যেমন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয় না তেমনি রাষ্ট্রের কৃষ্টিও বিকশিত হয় না। সুতরাং বলা যায়, রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যমে রাজনৈতিক কৃষ্টিও বিকশিত হয়।
৫. জাতির ঐতিহ্য রক্ষায় (To save the nation's tradition) : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ছাড়া জাতির ঐতিহ্য রক্ষা করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে কোন জাতির ঐতিহ্যগত দিকসমূহ বিবেচনা রাখার জন্য রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের কোন বিকল্প পন্থা নেই।
৬. রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ একটি সমাজ ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠন করে থাকে।
৭. রাজনৈতিক মূল্যবোধ : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূল্যবোধ সৃষ্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৮. রাজনৈতিক আনুগত্য লাভ : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের নিটে আনুগত্য প্রকাশের শিক্ষা দিয়ে থাকে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ছাড়া কোন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব যেমন বিকশিত হয় না তেমনি রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও ব্যাহত হয়।
সুতরাং বলা যার যে, রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ হচ্ছে তেমনই একটা অবস্থা যেটা রাজনৈতিক অবমূল্যায়ন তথা রাষ্ট্রের অবনতি থেকে রাষ্ট্রকে উন্নত পর্যায়ে পৌঁছে দিতে বলিষ্ঠভাবে সাহায্য করে থাকে।
অতএব বলা যায়, রাজনৈতিক সামাণিকীকরণ ছাড়া ব্যক্তি ফোন অচল = তেমনি রাষ্ট্র ব্যবস্থাও তার পরিপূর্ণ কোঠায় পৌঁছাতে সক্ষম হয় না।