রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর |
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর
- অথবা, রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সমাজের গণতন্ত্রের কার্যকারিতার বাস্তব ও সুনির্দিষ্টি ব্যাখ্যা তুলে ধর।
- অথবা, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের উপযোগিতা বর্ণনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : অধ্যাপক লিপসেট বলেন, "One of the political sociology's prime concern is an analysis of social conditions making for democracy."
রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব : যে কোন সামাজিক বিজ্ঞানের ন্যায় রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের সংজ্ঞা ও ধারণা তার আলোচনার পরিধির দ্বারাই নির্ধারিত হয়। সাবেকি রাজনীতি ছিল সম্পূর্ণরূপে রাজনীতিকেন্দ্রিক।
কিন্তু আধুনিক কালে বহুলাংশে সামাজিক স্বরূপ সম্পন্ন হয়ে পড়েছে। আধুনিক রাজনীতির বীজ বাস্তবে সমগ্র সমাজের বৃহত্তর ক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব পাঠের প্রয়োজনীয়তা : বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর সাংবিধানিক হিসেবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
সময়ের ধারবাহিকতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা এখনও তার নিরবচ্ছিন্ন অস্তিত্ব বজায় রেখেছে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সুষ্ঠু চর্চার জন্য রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
নিম্নে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব পাঠের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা হল :
১. সুসংগঠিত সমাজ গঠন : সুসংগঠিত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বে ব্যাপক আলোচনা করা হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের অস্থিতিশীল সমাজব্যবস্থার জন্য সংগঠিত সমাজ গঠন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সেজন্য সুন্দর, সংগঠিত ও সুস্থ সমাজ গঠনের জন্য আমাদের রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান বা রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব অধ্যয়ন করা একান্ত প্রয়োজন।
২. রাজনৈতিক সংগঠন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন : রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, সরকার, জনমত, নির্বাচকমণ্ডলী, রাজনৈতিক দল ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
সেজন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তর সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হলে রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব অধ্যয়ন করা একান্ত অত্যাবশ্যক।
৩. রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি : রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব রাজনীতি সম্পর্কে জনগণের মনে সচেতনতা সৃষ্টি করে। এর ফলে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কে সচেতন হয়ে রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করা যায়।
রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে বলিষ্ঠভাবে ভূমিকা রাখে ।
৪. আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন : রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে থাকে।
রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের সাথে আন্তর্জাতিক রাজনীতিক পরোক্ষ যোগসূত্র থাকায় আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিভিন্ন প্রত্যয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভের জন্য রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার।
৫. রাজনৈতিক উন্নয়নে : দেশের রাজনৈতিক উন্নয়ন কিভাবে ঘটে, রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রকৃতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অস্থিতিশীলতার কারণ সম্পর্কে জানতে হলে রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব পাঠের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
এজন্য অধ্যাপক রুডি বলেন, “রাজনৈতিক উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক।”
৬. নাগরিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে : রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে নাগরিকের অধিকার সম্পর্কে সার্বিক আলোচনা করে থাকে।
একজন নাগরিক হিসেবে নাগরিকের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভের জন্য রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক।
৭. অর্থনৈতিক কল্যাণসাধন : অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়া রাষ্ট্রের উন্নয়ন অসম্ভব। সেজন্য সুশাসকের অর্থনৈতিক জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক।
আবার রাজনীতি ও অর্থনীতি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হওয়ার রাজনৈতিক জ্ঞান ছাড়া অর্থনৈতিক কল্যাণসাধন করা সম্ভব হয় না।
৮. রাজনৈতিক তত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন : রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব জাতীয়তাবাদ, আন্তর্জাতিকতাবাদ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে আলোচনা করে।
সেজন্য রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের জ্ঞান ছাড়া রাজনৈতিক তত্ত্ব সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করা যায় না।
৯. ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য : রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব ব্যক্তিত্ব বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখে। রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে বিধায়, ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য বিভিন্ন নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের জ্ঞান থাকা প্রয়োজন ।
১০. বিভিন্ন শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, চীন প্রভৃতি রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা প্রকৃতি সম্পর্কে সুসংবদ্ধ জ্ঞানার্জন করতে রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
বিভিন্ন দেশের শাসনব্যবস্থা এবং এদের তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব।
১১. সরকারের বিভিন্ন বিভাগ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন : রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব সরকারের বিভিন্ন বিভাগ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে থাকে।
সেজন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। সেজন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার উন্নয়নে রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের জ্ঞান থাকা প্রয়োজন ।
১২. রাষ্ট্র পরিচালনায় : রাষ্ট্র, শাসনব্যবস্থা, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য প্রভৃতি সাবেকি ধারণাসমূহের সীমাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সেজন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক।
১৩. সাংস্কৃতিক উন্নয়নে : বাংলাদেশের সামাজিক শ্রেণি, সাংস্কৃতিক কাঠামো, আর্থসামাজিক পরিবর্তন, রাজনৈতিক এলিট প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞান ছাড়া রাজনৈতিক পরিবেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
এসব বিষয়াবলি পরোক্ষভাবে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত। সেজন্য রাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক উন্নয়নে রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের অধ্যয়ন অতীব জরুরি ।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, বর্তমানে বাস্তবসম্মত রাজনীতির অনেক বিষয় রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের আলোচনায় সমৃদ্ধি লাভ করেছে।
প্রত্যেক রাষ্ট্রের নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্য থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সার্বিক রাজনৈতিক কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের জ্ঞান থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।
বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে রাজনৈতিক সঠিক অনুশীলন অত্যাবশ্যক।