পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি আলোচনা কর । পলাশি যুদ্ধের পটভূমিকার উপর একটি নিবন্ধ রচনা কর
পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি আলোচনা কর । পলাশি যুদ্ধের পটভূমিকার উপর একটি নিবন্ধ রচনা কর |
পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি আলোচনা কর । পলাশি যুদ্ধের পটভূমিকার উপর একটি নিবন্ধ রচনা কর
- অথবা, যে পটভূমিতে পলাশি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তা বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ১৭৪০ থেকে ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আলীবর্দী খান বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব ছিলেন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তিনি সফলভাবে রাজ্য শাসন করেছেন।
সুকৌশলে ইংরেজ বণিক কোম্পানিকেও নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর বাংলার রাজনীতিতে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
এ পরিস্থিতিতে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সিংহাসনে বসেন। সিংহাসনে বসার পর থেকে তাকে নানামুখী ষড়যন্ত্র ও সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়।
তিনি সফলভাবে পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের ষড়যন্ত্র দমন করলেও তার বিরুদ্ধে বাইরের ষড়যন্ত্রের আরেক জাল বিস্তৃত হতে থাকে।
এর সঙ্গে জড়িত হয় দেশি-বিদেশি বণিক শ্রেণি, নবাবের দরবারের প্রভাবশালী রাজ্যবর্গ ও অভিজাত শ্রেণি, নবাবের সেনাপতি মীর জাফরসহ আরো অনেকে।
প্রত্যেকে যার যার স্বার্থ উদ্ধারের জন্য নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এই ষড়যন্ত্রকারীরা পলাশি যুদ্ধের পটভূমি তৈরি করতে থাকে ।
পলাশি যুদ্ধের পটভূমি : সিরাজ-উদ-দৌলার হা বসার মধ্য দিয়েই পলাশির যুদ্ধের পটভূমিকা রচিত হওয়া শুরু হয়। আর তার সমাপ্তি ঘটে ১৭৫৭ সাল চূড়ান্ত বুদ্ধের মাধ্যমে।
নিম্নে পলাশি যুদ্ধের পটভূমি আলোচনা করা হলো :
১. উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব : নবাব আলীবর্ণীর মৃত্যুর আগে তার কনিষ্ঠ কন্যা আমেনা বেগমের পুত্র সিরাজ-উদ-দৌলাকে বাংলার সিংহাসনের উত্তরাধিকার মনোনীত করে যান।
১৭৫৬ খ্রিঃ আলীবর্দীর মৃত্যু হলে তার প্রিয় দৌহিত্র সিরাজ-উদ-দৌলা ২২ বছর বয়সে নবাবের ক্ষমতা গ্রহণ করেন। সিংহাসনে বসার পর থেকেই উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে।
বিশেষ করে আলীবর্দী খানের তিন কন্যার মধ্যে জ্যেষ্ঠ কন্যা ঘষেটি বেগম সিরাজের নবাব হওয়ায় আশাহত হয়ে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।
এদের সঙ্গে যোগ দেন ঘষেটি বেগমের দেওয়ান রাজা রাজত, পূর্ণিয়ার শাসনকর্তা সিরাজের খালাতো ভাই শওকত জন এবং অন্যান্যরা। কৌশলে নবাব ঘসেটি বেগমকে নজরবন্দি রাখেন।
পূর্ণিয়ার শাসনকর্তা শওকত জঙ্গ বিদ্রোহী হয়ে উঠলে সিরাজ-উদ-দৌলা এক যুদ্ধে তাকে পরাজিত ও নিহত করে পূর্ণিয়া দখল করে নেন।
আপাতত দ্বন্দ্বের নিরসন হলেও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার লাভ করতে থাকে এবং পলাশি যুদ্ধের পটভূমি তৈরি হতে থাকে।
২. নবাবের প্রতি আনুগত্যহীনতা : সিরাজ-উদ-দৌলা যখন বাংলার নবাব হন তখন মুঘল ভারতের প্রচলিত প্রথা অনুসারে ফরাসি, ডাচ কোম্পানি এবং বাংলার জমিদাররা নতুন নবাবকে উপহার উপঢৌকন দিয়ে অভিনন্দন আপন করে এবং নবাবের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে।
কিন্তু কলকাতার ইংরেজ কর্তৃপক্ষ তা না করে নবাবের মর্যাদাহানি করে। তারা নবাবের প্রতি কোনোরূপ সম্মান প্রদর্শন না করে চরম আনুগত্যহীনতার পরিচয় দেয়। এই ঘটনা নবাবকে ইংরেজদের প্রতি চরমভাবে ক্রুদ্ধ করে।
৩. কৃষ্ণদাসকে আশ্রয় প্রদান : রাজবহুভের পুত্র কৃষ্ণদাস সরকারি কোষাগার থেকে ৫৩ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে পরিবার পরিজনসহ ইংরেজ কোম্পানির কাছে আশ্রয় গ্রহণ করে।
১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে সিরাজ কৃষ্ণদাসকে তার হাতে অর্পণ করার জন্য কলকাতার ইংরেজ গভর্নর ড্রেককে নির্দেশ দেন।
কিন্তু ড্রেক নবাবের আদেশ অমান্য করেন। ফলে সিরাজ-উদ-দৌলা ও ইংরেজদের মধ্যকার সম্পর্ক আরো বৈরি হতে থাকে।
৪. দুর্গ নির্মাণ সংক্রান্ত জটিলতা : নবাব আলীবর্দী খান ইউরোপীয় বণিকদেরকে তার রাজ্যে দুর্গ নির্মাণ করার অনুমতি দেননি। আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর ইউরোপে সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের আশঙ্কায় নবাবের বিনা অনুমতিতে ইংরেজ ও ফরাসিরা চন্দনগরে দুর্গ নির্মাণ করতে শুরু করে।
নবাব অবিলম্বে ইংরেজ ও ফরাসিনের দুর্গ নির্মাণ বন্ধ করার এবং নির্মিত অংশ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন।
ফরাসিরা নবাবের আদেশ মানলেও কলকাতার ইংরেজ কর্তৃপক্ষ নবাবের আদেশ অমান্য করেন এবং ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নতুনভাবে নির্মাণ করে আরো দুর্ভেদ্য করে তোলে।
এই ঘটনা নবাবের সার্বভৌমত্বকে হেয় করে। যা পরবর্তীকালে পলাশি যুদ্ধের পটভূমিকা রচনায় সহায়তা করে।
৫. সপ্তক সংক্রান্ত জটিলতা : মুঘল সম্রাট ফররুখশিয়ার ১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দে এক ফরমান দ্বারা ইংরেজ কোম্পানিকে বিনা তকে সমগ্র ভারতে। ব্যবসা-বাণিজ্য করবার অধিকার প্রদান করেন।
বিদাতকে আমদানি-রপ্তানির সুবিধার জন্য কোম্পানিকে যে ছাড়পত্র দেওয়া হয় তা দত্তক নামে পরিচিত। বিনা শুল্কে সমগ্র ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য করার বিনিময়ে কোম্পানি মুঘল সরকারকে বার্ষিক তিন হাজার টাকা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়।
কিন্তু কোম্পানির কর্মচারীরা শীঘ্রই দন্তকের অপব্যবহার করে হাক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ে। মুর্শিদকুলি খান ইংরেজদের ফরমান লাভের মধ্যে অশুভ সংকেত লক্ষ্য করে এর বিরোধিতা করেন।
শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়, কোম্পানি তার রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য শুষ্ক ছাড়পত্র বা দস্তক ভৌগ করলেও কোম্পানির কর্মচারীরা ব্যক্তিগত বাণিজ্যের জন্য সপ্তক ব্যবহার করবে না।
কিন্তু সিরাজ ক্ষমতাসীন হয়ে লক্ষ্য করলেন, কোম্পানির কর্মচারীরা শর্ত অমান্য করে ব্যক্তিগত ব্যবসা করছে এবং নবাবকে কর ফাঁকি দিচ্ছে। এর ফলে নবাবের রাজকোষের যথেষ্ট ক্ষতি হয়।
মধাব ইংরেজ গভর্নর ড্রেককে দন্তকের অপব্যবহার বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু ড্রেক তা অগ্রাহ্য করেন। এর ফলে নবাব ইংরেজদের প্রতি ভীষণভাবে ক্ষুদ্ধ হন।
৬. কলকাতা দখল : ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে সিরাজ মুর্শিদাবাদ থেকে সসৈন্যে শওকত জঙ্গকে দমন করার উদ্দেশ্যে পূর্ণিয়ার দিকে অগ্রসর হন। ২০ মে তিনি যখন রাজমহলে পৌঁছান তখন গভর্নর ড্রেক প্রদত্ত পত্র তার হস্তগত হয়।
এই পত্রে ট্রেক ইংরেজদের সদিচ্ছার কথা প্রতি নম্র ভাষায় সিরাজকে জানালেও দুর্গ নির্মাণ বন্ধ কিনা সে বিষয়ে কোনো উল্লেখ করেননি।
এতে ক্রুদ্ধ হয়ে নবাব পূর্ণিয়ার দিকে অগ্রসর না হয়ে মুর্শিদাবাদে ফিরে আসেন এবং কয়েক দিনের মধ্যে কলকাতার ইংরেজগণকে উপযুক্ত শাস্তিদানের উদ্দেশ্যে সসৈন্যে যাত্রা করেন।
পথিমধ্যে তিনি কাশিমবাজারের ইংরেজ কুঠি দখল করে কলকাতার দিকে অগ্রসর হন। ১৬ জুন নিরাজ কলকাতার উপকণ্ঠে পৌঁছান। কলকাতা দুর্গের সৈন্য সংখ্যা খুব অল্প ছিল।
কলকাতাস্থ ইংরেজ ঘাঁটি ফোর্ট উইলিয়াম দখল করতে সিরাজকে বেগ পেতে হয়নি। গভর্নর ড্রেক ও অপরাপর ইংরেজগণ ফোর্ট উইলিয়াম ত্যাগ করে জলপথে ফলতা নামক স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
২০ জুন কলকাতার নতুন গভর্নর হলওয়েল আত্মসমর্পণ করেন এবং বিজয়ী সিরাজ কলকাতার দুর্গে প্রবেশ করেন।
৭. ইংরেজ কর্তৃক কলকাতা পুনর্দখল : কলকাতা হাতছাড়া হবার পর ইংরেজ কোম্পানি মাদ্রাজ থেকে রবার্ট ক্লাইভের অধীনে একদল সৈন্য ও এডমিরাল ওয়ার্টসনের অধীনে এক নৌবহর কলকাতা পুনরুদ্ধারের জন্য পাঠান।
ক্লাইভ ও ওয়াটসন বিনা বাধায় কলকাতা উষার ইংরেজদের সঙ্গে মিলিত হন। ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর ইংরেজ সৈন্য ও নৌবহর কলকাতার দিকে যাত্রা করে।
নবাবের বজবজে একটি ও তার কাছেই আরো একটি দুর্গ ছিল। মানিকচাঁদ এই দুর্গ দুটি রক্ষার্থে অগ্রসর হচ্ছিলেন পথে ক্লাইভের সৈন্যের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
ফলে মানিকচাদ পলায়ন করে। ইংরেজরা বজবজ দুর্গ ধ্বংস করে এবং বিনা যুদ্ধে কলকাতা অধিকার করে। এরপর তারা ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ সুরক্ষিত করে।
৮. নবাব কর্তৃক ২য় বার কলকাতা আক্রমণ : কলকাতা অধিকার করেই ইংরেজরা নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। অপরদিকে নবাব সিরাজও কলকাতা অধিকারের সংবাদ পেয়ে যুদ্ধযাত্রা করেন।
ক্লাইভ ১০ জানুয়ারি হুগলি অধিকার করে শহরটি লুন্ঠন করেন এবং পার্শ্ববর্তী বহু গ্রাম পুড়িয়ে দেন। ১৯ জানুয়ারি নবাব হুগলি পৌঁছালে ইংরেজরা কলকাতায় প্রস্থান করেন।
১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা ফেব্রুয়ারি নবাব কলকাতার শহরতলীতে আমীর চালের বাগানে শিবির স্থাপন করেন। ৫ ফেব্রুয়ারি শেষ রাতে ক্লাইভ ও ওয়াটসন অকস্মাৎ নবাবের শিবির আক্রমণ করেন।
অতর্কিত আক্রমণের ফলে নবাবের পক্ষের প্রায় ১৩০০ লোক নিহত হয়। কিন্তু সকালে নবাবের সৈন্য সুসজ্জিত হয়ে পাল্টা আক্রমণ করলে ক্লাইভ প্রস্থান করেন।
কলকাতা জয় করার মত নবাবের যথেষ্ট সৈন্য সংখ্যা ছিল। কিন্তু তারপরও নবাব ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়ে যুদ্ধ না করে ইংরেজদের সাথে আলীনগরের সন্ধি স্থাপন করেন।
৯. ইংরেজ কর্তৃক ফরাসিদের পরাজয় : আলীনগরের সন্ধি ইংরেজনের প্রভাব প্রতিপত্তিকে বহুগুণে বৃদ্ধি করেছিল। সেই সুযোগে ইংরেজরা তাদের অপর শত্রু ফরাসিদের পরাজিত করতে বদ্ধপরিকর হয়।
ফরাসিদের সাথে সিরাজের ঐক্য যাতে স্থাপিত হতে না পারে ক্লাইভ প্রথমে সেই ব্যবস্থাই করতে চাইলেন। ইতোমধ্যে ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ইউরোপে সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল।
সেই সূত্র ধরে নবাবের আপত্তি সত্ত্বেও ক্লাইভ ফরাসি, ঘাঁটি ও বাণিজ্য কেন্দ্র চন্দনগর অধিকার করে নেন। আহমদ শাহ আবদালিও এসময় দিল্লি অধিকার করে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল সুষ্ঠন করেছিলেন।
পূর্ব ভারতের দিকে আবদালির অগ্রসরের সংবাদ প্রচারিত হলে সিরাজ অত্যন্ত আশঙ্কিত হয়ে পড়েন। সুতরাং তিনি ইংরেজদের অসন্তুষ্ট করতে সাহসী হলেন না।
ফলে ইংরেজদের হাতে বঙ্গে ফরাশিদের সম্পূর্ণ পরাজয় ঘটল এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধে ফরাসিদের সাহায্য প্রাপ্তির আশাও বিনষ্ট হলো।
কিন্তু পলাতক ফরাসিরা মুর্শিদাবাদে আশ্রয় পেলে ক্লাইভ প্রমাদ শুনলেন। সিরাজ দাক্ষিণাত্যে বুসীর সঙ্গে আলাপ পত্রালাপ করছেন এ সংবাদও ইংরেজদের অজানা রইল না।
এরূপ পরিস্থিতিতে ইংরেজরা এটা বুঝতে পারলো যে, যতদিন সিরাজ সিংহাসনে আসীন থাকবেন ততদিন তাদের স্বার্থ নিরাপদ থাকবে না।
নিজেদের মনোনীত কোনো লোককে মুর্শিদাবাদের মসনদে অধিষ্ঠিত করতে পারলেই তাদের স্বার্থ নিরাপদ হবে এই ধারণা ইংরেজদের মনে বদ্ধমূল হলো।
১০. নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র : এই অবস্থায় মুর্শিদাবাদে সিরাজের বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্র ঘনীভূত হয়ে উঠেছিল। সিরাজের প্রতি অসন্তুষ্ট বাংলার কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি জগৎশেঠ, মীরজাফর, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ, উমিচাদ প্রমুখ সিরাজকে সিংহাসনচ্যুত করে তদস্থলে মীরজাফরকে অধিষ্ঠিত করার জন্য ষড়যন্ত্রে লি হয়েছিল।
ষড়যন্ত্রকারীরা তৃতীয় পক্ষের সহায়তা লাভের জন্য ক্লাইভের নিকট এই ষড়যন্ত্রের কথা প্রকাশ করলে কলকাতার সিলেক্ট কমিটি ও ক্লাইভ আনন্দে ষড়যন্ত্রকারীগণকে সাহায্য করতে সম্মত হয়।
১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে ইংরেজ ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে একটি সন্ধিপত্র রচিত হয়। যা পলাশির বুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বে উপনীত হবার মঞ্চ তৈরি করে।
১১. পলাশির যুদ্ধ : বিশ্বাসঘাতকতা, জালিয়াতি, স্বার্থপরতা ও দেশদ্রোহিতার এক অতি নীচ ও জঘন্য ষড়যন্ত্রের সাহায্যে বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে মসনদে চ্যুত করার চেষ্টা চলতে থাকে ।
ষড়যন্ত্রকারীগণ যখন সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত তখন রবার্ট ক্লাইভ অতিসামান্য অজুহাতে সিরাজের বিরুদ্ধে সসৈন্যে অগ্রসর হন। নবাবও ষড়যন্ত্রের কথা জ্ঞাত হয়ে পূর্বেই প্রস্তুত ছিলেন।
সুতরাং তিনিও সসৈন্যে ইংরেজদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হলেন। এভাবে ১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন প্রাতঃকালে ভাগিরথীর নদীর তীরে পলাশির প্রান্তরে উভয় পক্ষের শুরু হয় পলাশি যুদ্ধ ।
উপসংহার : আলোচনার পরিশেষে বলা যায়, এক ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে যে সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার মসনদে আরোহণ করেছিলেন অনুরূপ আরেকটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সংঘটিত পলাশির যুদ্ধের মধ্যদিয়ে তার শাসনের যবনিকাপাত ঘটে।
সিংহাসনে বসার শুরু থেকেই ইংরেজ কোম্পানির সাথে নবাবের বিভিন্ন কারণে মনোমালিন্য ও প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব উপস্থিত হয়।
সেই সব দ্বন্দ্ব ক্রমে ক্রমে দানা বেঁধে পরবর্তীকালে বিরাট সমস্যায় পরিণত হয়। এর মধ্যে ইংরেজদের ঔদ্ধত্য চরম পর্যায়ে উপনীত হয়।
তারা নবাবের যেকোনো আদেশ অমান্য করতে শুরু করে। আর তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা ও সমর্থন দিতে থাকে নবাবের রাজ কর্মচারীগণ।
এরূপ অবস্থায় যুদ্ধের ডামাডোল বাজতে বেশি সময় দরকার হয়নি। অচিরেই যুদ্ধের পটভূমিকা রচনা সম্পন্ন হলে ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন পলাশির যুদ্ধ শুরু হয় এবং বাংলার নবাবের পরাজয় সম্পন্ন হয়।