পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে লেখ । পলাশির যুদ্ধের ফলাফল কি ছিল
পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে লেখ । পলাশির যুদ্ধের ফলাফল কি ছিল |
পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে লেখ । পলাশির যুদ্ধের ফলাফল কি ছিল
- অথবা, পলাশির যুদ্ধের ফলাফল লিখ।
- অথবা, পলাশির যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ১৭৫৭ সালে সংঘটিত পলাশির যুদ্ধ ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ও কলঙ্কজনক অধ্যায়। কারণ এ যুদ্ধের মাধ্যমেই বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়।
শুরু হয় ইংরেজ বেনিয়াদের আধিপত্য। হতভাগ্য নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতনের মাধ্যমে আমরা হারাই আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব।
→ পলাশির যুদ্ধের ফলাফল : নিয়ে পলাশির যুদ্ধের ফলাফল তুলে ধরা হলো :
(ক) রাজনৈতিক ফলাফল :
১. পলাশির যুদ্ধের ফলে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়।
2. পলাশির যুদ্ধের ফলে ইংরেজরা কোম্পানির মর্যাদা লাভ করে ।
৩. পলাশির যুদ্ধের পর ইংরেজরা এদেশের ত্রাণকর্তা সেজে বসে।
৪. বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিদান স্বরূপ মীর জাফর নবাবী লাভ করে। কিন্তু ক্ষমতা ক্লাইভের হাতেই থেকে যায়।
(খ) অর্থনৈতিক ফলাফল :
১. মীর জাফরের সাথে চুক্তি মোতাবেক পলাশির যুদ্ধের পর ইংরেজরা প্রচুর অর্থ-সম্পত্তির মালিক হয়। তাদের ব্যবসায়-বাণিজ্য তখন সরগরমভাবে চলতে থাকে ।
২. যেহেতু মুঘলমানরা ছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধ পক্ষ। তাই পলাশির যুদ্ধের পর তারা ইংরেজদের রোষানলে পড়ে। এতে করে তাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি নাজুক হয়ে পড়ে।
(গ) সম্প্রদায়গত ফলাফল :
১. ভারতীয় মুঘলমানগণ এতদিন প্রচণ্ড প্রতাপে নিজেদের মর্যাদাকে সমুন্নত রেখেছে। কিন্তু পলাশি যুদ্ধের পর তাদের আধিপত্য ও প্রাধান্য শূন্যের কোঠায় গিরে দাঁড়ায়।
২. ইংরেজরা ক্ষমতার বসায় হিন্দুরা তাদের সমর্থন দানের প্রতিদান স্বরূপ নানা রকম সুযোগ-সুবিধা পেয়ে নিজেদের ভাগ্যের উন্নতি সাধন করে।
(ঘ) ইঙ্গ-ফরাসি সংঘাতের উপর প্রভাব : পলাশির যুদ্ধে ইংরেজদের জয়লাভের পর দাক্ষিণাত্য ইঙ্গ-ফরাসি সংঘাতের গতিপথে বিপুল প্রভাব বিস্তার করে। এর ফলে বঙ্গদেশের সম্পদ, জনবল ও অর্থবল সবই ইংরেজদের হাতে চলে যায়।
কর্নাটের যুদ্ধে এ সকল সম্পদ ফরাসিদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। এভাবে কর্নাটের তৃতীয় যুদ্ধে বঙ্গের সম্পদের বলে ইংরেজরা দাক্ষিণাত্যে ফরাসিদের পরাজিত করে।
(ঙ) ভারতীয় উপমহাদেশে বিজয়ের পথ প্রশস্ত : পলাশির যুদ্ধ বঙ্গ দেশে এবং পরে সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজরা বিজয়ের পথ প্রশস্ত করে।
(চ) শিক্ষার পরিবর্তন : পলাশির যুদ্ধের পর দেশে মুঘল ও ভারতীয় শিক্ষা সভ্যতার স্থানে ইউরোপীয় সভ্যতা আত্মপ্রকাশ করতে থাকে। কালক্রমে বাংলা তথা ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শিক্ষা সংস্কৃতি বিপদাপন্ন হতে থাকে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সামরিক দিক দিয়ে পলাশির যুদ্ধ খুব গুরুত্বপূর্ণ না হলেও রাজনৈতিক দিক দিয়ে এটি ছিল নিঃসন্দেহে বাংলার ইতিহাসে একটি সর্বাধিক বেদনাবহ ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
এ যুদ্ধে জয়লাভের ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাণিজ্যিক শক্তি থেকে রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে পড়ে।