পলাশীর যুদ্ধে নবাবের ব্যর্থতার কারণ সমূহ চিহ্নিত করো
পলাশীর যুদ্ধে নবাবের ব্যর্থতার কারণ সমূহ চিহ্নিত করো |
পলাশীর যুদ্ধে নবাবের ব্যর্থতার কারণ সমূহ চিহ্নিত করো
- অথবা, স্বীয় পতনের জন্য নবাব সিরাজউদ্দৌলা কি পরিমাণ দায়ী ছিলেন? তোমার উত্তরের ধারাণা দাও ।
- অথবা, স্বীয় পতনের জন্য নবাব সিরাজ উদ্দৌলা কি পরিমাণ দায়ী ছিলেন?
উত্তর : ভূমিকা : ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন সংঘটিত পলাশির যুদ্ধ ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে এক স্মরণীয় ঘটনা এবং কলঙ্কজনক অধ্যায়।
কারণ এই যুদ্ধের মাধ্যমেই বাংলা-বিহার উড়িষ্যার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। শুরু হয় ইংরেজ বেনিয়াদের আধিপত্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদের দুঃশাসন।
হতভাগ্য নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের মাধ্যমে আমরা হারাই আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব।
সেই সাথে হারিয়ে থাকি স্বাধীনতা। তাই ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে পলাশির যুদ্ধ এক তাৎপর্যময় ঘটনা ।
→ সিরাজউদ্দৌলা স্বীয় পতনের জন্য কতখানি দায়ী : পলাশির প্রান্তরে নবাব সিরাজের পতনের জন্য তাঁরও কিছু দায়- দায়িত্ব ছিল। যেমন—
১. আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি দুর্বলতা প্রকাশ : আত্মীয়স্বজন ও পরিবার পরিজনদের প্রতি দুর্বলতা প্রকাশ না করে সিরাজ যদি ষড়যন্ত্রকারী ঘষেটি বেগম ও শওকত জঙ্গ, রায়বল্লভ, ও মীর জাফরকে রাজদ্রোহিতার অপরাধে পূর্বেই হত্যা করতেন তাহলে পলাশির যুদ্ধ ও ঘটনা তাঁর পতনও হত না
২. মীর জাফরকে সেনাপতিত্ব প্রদান : ইতিপূর্বে বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধে তার মাতামহ আলীবর্দী খান সিপাহশালার পদ হতে মীর জাফরকে অপসারণ করেন। কিন্তু তরুণ নবাব সিরাজদৌলা আবার তাকে পুনর্বহাল করে অদূরদর্শিতার পরিচয় দেন।
৩. অসময়ে যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা : বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরের পরামর্শে সিরাজ তার বিজয়ের পূর্বে মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধের আদেশ দিয়ে অপরিময় ভুল করেন। এতে তার পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে।
৪. মানসিক দুর্বলতা : নবাবের মনের দুর্বলতা তার পরাজয়ের জন্য অনেকাংশে দায়ী ছিল।.
৫. অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা : যুদ্ধের পূর্বে সিরাজের উচিত ছিল অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছলতা অর্জন করা। অর্থের অভাবে তিনি প্রায়ই জগৎ শেঠের মতো বিত্তশালী লোকের দ্বারস্থ হতেন।
ফলে তাদের ষড়যন্ত্রমূলক কার্যাবলি সম্পর্কে অবহিত থাকা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি।
এছাড়া যুদ্ধের আগে ও পরে অর্থের অভাবে তার সৈন্যরা তাঁর দল ত্যাগ করে। এসকল হেয়ালীর জন্য তার পতন অনিবার্য ছিল ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পলাশির যুদ্ধ সম্পর্কে নিরপেক্ষভাবে পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয় যে, যুদ্ধ ক্ষেত্রে সিরাজকে বিশ্বাস ঘাতকরা পরাজয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
কারণ যুদ্ধের পূর্বে তার যত অদূরদর্শিতাই থাকুক না কেন যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি যখনই জিতে যাচ্ছিলেন তখনই মীর জাফরগংরা তাকে দিয়ে যুদ্ধ বন্ধ করিয়ে তাঁর পতনকে ডেকে আনে। কাজেই বলা যায় পলাশির প্রান্তরে বিশ্বাসঘাতকরাই জয়ী হয়েছে।