নবাব আলীবর্দী খানের সাথে মারাঠাদের সংঘর্ষ আলোচনা কর
নবাব আলীবর্দী খানের সাথে মারাঠাদের সংঘর্ষ আলোচনা কর |
নবাব আলীবর্দী খানের সাথে মারাঠাদের সংঘর্ষ আলোচনা কর
- অথবা, নবাব আলীবর্দী খানের সাথে মারাঠাদের সংঘর্ষ সম্পর্কে ধারণা দাও ।
উত্তর : ভূমিকা : নবাব আলীবর্দী খানের শাসনামলে (১৭৪০-১৭৫৬) বাংলায় মারাঠা আক্রমণ একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত।
সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মারাঠা শক্তি সমগ্র দক্ষিণ ভারতে আধিপত্য বিস্তার করে উত্তর ভারতে ও বাংলায়ও তাদের প্রভাব বিস্তারের প্রয়াস চালায়। আলীবর্দী খান মারাঠাদের দমন করে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনে ।
→ আলীবর্দী খানের সাথে মারাঠাদের সংঘর্ষ : নিম্নে নবাব আলীবর্দী খানের সাথে মারাঠাদের সংঘর্ষ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. প্রথম মারাঠা আক্রমণ : ১৭৪২ খ্রি. মারাঠারা প্রথম বাংলা আক্রমণ করে। মারাঠা নেতা রঘুজী ভোঁসলা, ভাস্কর পণ্ডিতকে ৪০,০০০ অশ্বারোহী সৈন্যসহ বাংলা আক্রমণ করতে পাঠান।
উড়িষ্যা সীমান্তের অরণ্য ও ঝাড়খণ্ড জঙ্গলের মধ্য দিয়ে ভাস্কর পণ্ডিত তাঁর বাহিনী নিয়ে বাংলায় প্রবেশ করেন। বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদ অঞ্চলে লুটতরাজ আরম্ভ করেন।
নবাব আলীবর্দী খান মারাঠাদের বিতাড়িত করার জন্য প্রস্তুত হন। তিনি মুর্শিদাবাদ হয়ে কাটোয়ায়া মারাঠা শিবির আক্রমণ করেন।
সেসময় ভাস্কর পণ্ডিত পূজারত ছিলেন আলীবর্দীর হঠাৎ আক্রমণে ভীত হয়ে কাঠোয়া হতে পলায়ন করেন।
২. দ্বিতীয় মারাঠা আক্রমণ : ১৭৪৩ খ্রি. মার্চ মাসে রঘুজী ভোঁসালের নেতৃত্বে দুই দল মারাঠা সৈন্য দুই দিক থেকে বাংলায় প্রবেশ করে। রঘুজীর নেতৃত্বে বর্গী হানাদাররা বাংলায় লুটতরাজ আরম্ভ করে।
আলীবর্দী বুঝতে পারেন যে, তার ক্লান্ত সৈন্যদের নিয়ে এদের দমন করা দুরূহ হয়ে যাবে। অতঃপর তিনি পেশোয়ারের সাহায্য কামনা করেন । অতঃপর মারাঠারা দ্রুত বাংলা ত্যাগ করেন।
৩. তৃতীয় মারাঠা আক্রমণ : ১৭৪৪ খ্রিঃ ভাস্কর পণ্ডিত পুনরায় উড়িষ্যা ও মেদেনীপুরের পথে বাংলা আক্রমণ করেন। ইতোমধ্যে পেশোয়ার বালাজী ও রগুজীর মধ্যে বিবাদ মিটে গেলে আলীবর্দী অসহায় হয়ে পড়েন।
বর্গি বাহিনী পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এবং লুটতরাজ করতে থাকে। আলীবর্দী কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে এদের দমন করেন।
৪. ৪র্থ মারাঠা আক্রমণ : আলীবর্দীর সেনাপতি গোলাম মোস্তফা ভাস্কর পণ্ডিতকে হত্যার বিনিময়ে যোগ্য পুরস্কার না পাওয়ায় বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন।
তিনি রঘুজীকে বাংলা আক্রমণে প্ররোচিত করলে আলীবর্দীর বিহার আক্রমণের ব্যস্ততার সুযোগে মারাঠারা মুর্শিদাবাদ আক্রমণ করে।
এ সংবাদে নবাব দ্রুত রাজধানীতে ফিরে আসলে মারাঠা নেতা রঘুজী তার দলবল নিয়ে কাটোয়ার দিকে পলায়ন করে।
৫. পঞ্চম মারাঠা আক্রমণ : ১৭৪৭ সালের নভেম্বর মাসে রঘুজী ভোঁসালের পুত্র জানোজী ভোঁসালের নেতৃত্বে মারাঠারা আবার বাংলা আক্রমণ করলে আলীবর্দী বারহা শহরের নিকট এক তুমুল যুদ্ধে মারাঠাদের পরাজিত করে উড়িষ্যা পুনরুদ্ধার করেন।
কিন্তু শীঘ্রই মারাঠারা উড়িষ্যা দখল করে। এরূপে মারাঠা ১৭৫১ সাল পর্যন্ত উড়িষ্যা প্রদেশে লুটপাট অভিযান চালিয়ে যায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আপোষহীন আক্রমণ ও কৌশলের নীতি অবলম্বনে নবাব আলীবর্দী খান যেভাবে মারাঠাদের হাত থেকে বাংলার সুশাসনকে রক্ষা করেছেন তা অনুকরণীয়।
বেশির ভাগ সময়ে বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত থাকলেও বাংলার সামাজিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়।