নবাব আলীবর্দী খানের সুবাদারির সফলতার সংক্ষেপে বর্ণনা দাও
নবাব আলীবর্দী খানের সুবাদারির সফলতার সংক্ষেপে বর্ণনা দাও |
নবাব আলীবর্দী খানের সুবাদারির সফলতার সংক্ষেপে বর্ণনা দাও
- অথবা, নবাব আলীবর্দী খানের সুবাদারির সফলতার সংক্ষেপে লিখ ।
উত্তর : ভূমিকা : অষ্টদশ শতাব্দীতে ভারতে যেমন অতি নগণ্য অবস্থা থেকে স্বীয় শক্তি ও সামর্থ্যের বলে দাক্ষিণাত্যে নিজামুল মূলক (১৭১৩), অযোধ্যায় সাদাত আলী (১৭২৩) পাঞ্জাবের সৈয়দ উদ-দৌল্লাহ (১৭১৩) গৌরবময় পদে উন্নীত হয়েছিলেন ঠিক তেমন বাংলাদেশেও এক ভাগ্যান্বেষীর আবির্ভাব ঘটেছিল যিনি আলীবর্দী খান নামে পরিচিত। তার শাসনকালও একটি স্মরণীয় যুগ হিসেবে বিবেচিত।
→ আলীবর্দী খানের সফলতা : সুবাদার সরফরাজ খানের মৃত্যুর পর আলীবর্দী খান বাংলা মসনদে আরোহণ করে বিদ্রোহ ও বহিরাক্রমণ প্রতিরোধ অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধন, শিক্ষা ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা প্রদর্শন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অভাবনীয় প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন ।
নবাব, আলীবর্দী খানের সুবাদারি আমলে বাংলায় গৌরব ও ঐশ্বর্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছিল। নিম্নে সুবাদার হিসেবে নবাব আলীবর্দী খানের সফলতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো :
১. সিংহাসনের বৈধতা প্রতিষ্ঠা : ১৭৪০ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে আলীবর্দী খান বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার সুবাদার হিসেবে বাংলার মসনদে আরোহণ করেন। সিংহাসন অধিকারের কয়েক মাস পর মুঘল সম্রাট মোহাম্মদ শাহের নিকট থেকে সুবাদারি সনদ লাভ করে সিংহাসনের বৈধতা প্রতিষ্ঠা করেন।
২. উড়িষ্যার বিদ্রোহ দমন : তিনি উড়িষ্যার বিদ্রোহী সহকারী শাসনকর্তা সুজাউদ্দিনের জামাতা রুস্তম জঙ্গকে এবং তৎপর মীর্জা বাকেরের বিদ্রোহ দমন করে উড়িষ্যার স্বীয় আধিপত্য কায়েম করেন। এদের তৎপরতা তার প্রতিপত্তি বিস্তারের পথে অন্তরায় স্বরূপ ছিল।
৩. আফগান বিদ্রোহ দমন : বিশ্বস্ত সেনাপতি মুস্তফা খান বিহারের নায়েব নাযিমের পদ দাবি করলে এবং আলীবর্দী খান তা প্রত্যাখান করলে মুস্তাফা খান সসৈন্যে অগ্রসর হয়ে মুর্শিদাবাদ আক্রমণ করতে উদ্যস্ত হলে ১৭৪৫ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে ভোজপুরের নিকট সংঘটিত যুদ্ধে মুস্তফা খান পরাজিত ও নিহত হন।
৪. ইউরোপীয় বণিকদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি : অর্থনৈতিক উন্নতির প্রয়োজনে আলীবর্দী খান ইউরোপীয় বণিকদেরকে বাংলায় ব্যবসা- বাণিজ্যের করার অনুমতি প্রদান করেন। তবে তিনি তাদের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও সতর্ক দৃষ্টি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।
সে সঙ্গে নবাব স্থানীয় ব্যবসায়ীদের স্বার্থের প্রতিও যথেষ্ট সহানুভূতিশীল ছিলেন । তার নীতি ইউরোপীয়দের প্রতি কঠোর ছিল।
৫. মারাঠাদের সাথে সংঘর্ষ : নবাব আলীবর্দী খানের সর্বাপেক্ষা সাহসিকতা পূর্ণ কার্য ছিল দুর্ধর্ষ মারাঠাবর্গীদের আক্রমণ প্রতিরোধ করে বাংলার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান ও শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ।
৬. সুদক্ষ শাসন প্রতিষ্ঠা : তিনি শান্তিপ্রিয় ও প্রজাবৎসল শাসক ছিলেন। তিনি তার রাজ্যকে জাহাঙ্গীরনগর, পূর্ণিয়া, বিহার এই তিনটি প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্রে বিভক্ত করে সুদক্ষ শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেন।
৭. কৃষির অগ্রগতি : তার শাসনামলে কৃষির অগ্রগতি সাধিত হয়। তিনি পূর্ববর্তী শাসকদের রাজস্ব ব্যবস্থা বজায় রাখেন এবং জমিদারদের সাথে রাজস্বের বন্দোবস্ত করেন। ফলে কৃষির উন্নতি হয় ।
৮. শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসার : শিক্ষার প্রতি তার প্রগাঢ় অনুরাগ ছিল। তিনি জ্ঞানী, গুণী ও শিক্ষানুরাগীদের সমাদর করতেন।
তার পৃষ্ঠাপোষকতায় ধর্ম, দর্শন, চিকিৎসা শাস্ত্র, ফার্সি সাহিত্য ও জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় যথেষ্ট উন্নতি সাধিত হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নবাব আলীবর্দী খানের সুবাদারি আমল বিভিন্ন সফল কার্যকারণে ভরপুর।