মুর্শিদকুলি খান কে ছিলেন । সুবাদার মুর্শিদকুলি খানের পরিচয় দাও
মুর্শিদকুলি খান কে ছিলেন । সুবাদার মুর্শিদকুলি খানের পরিচয় দাও |
মুর্শিদকুলি খান কে ছিলেন । সুবাদার মুর্শিদকুলি খানের পরিচয় দাও
- অথবা, সুবাদার মুর্শিদকুলি খান সম্পর্কে লিখ।
উত্তর : ভূমিকা : অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে যখন দিল্লির অকর্মণ্য সম্রাটগণের দুর্বলতায় ও আত্মকলহে মুঘল সাম্রাজ্য চরম দুর্দশায় নিপতিত হয়েছিল, তখন মুর্শিদকুলি খান বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হন। তিনি সুবাদার পদে নিয়োগের সাথে সাথে বাংলার ইতিহাসে এক নব অধ্যায়ের সূচনা হয়।
→ মুর্শিদকুলি খানের পরিচয় : মুর্শিদকুলি খান দাক্ষিণাত্যের এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু বাল্যকালে তাঁকে “হাজি শফী ইস্পাহানি মুহাম্মদ” নামে একজন মুঘলমানের নিকট বিক্রি করা হয়।
হাজি শফী ইস্পাহানী শায়েস্তা খানের জনৈক দেওয়ান ছিলেন। তিনি মুর্শিদকুলি খানকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে তার নামকরণ করেন মুহাম্মদ হাদী।
শফী ইস্পাহানি মুহাম্মদ হাদীকে নিজের সন্তানের মত লালন-পালন করেন এবং তাকে পারস্যে নিয়ে যান। পারস্যে অবস্থানকালে মুহাম্মদ হাদী পারস্যের শিক্ষা-সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হন।
শফী ইস্পাহানী কিছুকাল দিল্লিতে দিওয়ান-ই-তান পদে নিযুক্ত থাকেন। তার নিকট থেকে মুহাম্মদ হাদী দিওয়ানি সংক্রান্ত ব্যাপারে মূল্যবান অভিজ্ঞতা লাভ করেন।
১৬৯৬ খ্রিষ্টাব্দে শফী ইস্পাহানির মৃত্যুর পর মুহাম্মদ হাদী বেরার প্রদেশের দিওয়ান হাজি আব্দুল্লাহ খোরাসানীর অধীনে কর্মে নিযুক্ত থেকে দিওয়ানি সংক্রান্ত ব্যাপারে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার পরিচয় দেন
১. দিওয়ান পদে নিযুক্ত : আওরঙ্গজেব মুহাম্মদ হাদীর যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় পেয়ে তাঁকে প্রথমে হায়দ্রাবাদের দিওয়ান পদে নিযুক্ত করেন ১৬৯৬ খ্রিষ্টাব্দে।
তার অভিজ্ঞতা ও কর্মনৈপুণ্যে, মুগ্ধ হয়ে সম্রাট আওরঙ্গজেব মুহাম্মদ হাদীকে বাংলার অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও রাজস্ব সংস্কারের জন্য বাংলার দিওয়ান পদে নিযুক্ত করেন ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে ।
২. ফৌজদারি পদে নিযুক্ত : সম্রাট আওরঙ্গজেব তার অসাধারণ কর্মস্পৃহা দেখে তাকে ফৌজদারির দায়িত্ব ন্যস্ত করেন। এক বছরের মধ্যে আরও অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয় ।
৩. মুর্শিদকুলি উপাধিতে ভূষিত : তার সকল শাখায় কাজের মাত্রা পরিমাপ করে সম্রাট তাকে মুর্শিদকুলি খান উপাধিতে ভূষিত করেন ।
৪. সুবাদার পদে নিযুক্ত : ১৭০৩ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদকুলি খান উড়িষ্যার নায়েব সুবাদার পদে নিযুক্ত হন। পরের বছর পূর্ণ সুবাদার পদ লাভ করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুর্শিদকুলি খানের বিভিন্ন কৃতিত্বপূর্ণ কার্যাবলি তার আমলকে বাংলার ইতিহাসে স্মরণীয় করে রেখেছে। তাঁর আমলে বাংলা সুখ ও শান্তির স্বর্ণশিখরে আরোহণ করতে সক্ষম হয়।