মানব সৃষ্ট সবকিছুর সমষ্টিই হলো সংস্কৃতি উক্তিটি আলোচনা কর
মানব সৃষ্ট সবকিছুর সমষ্টিই হলো সংস্কৃতি উক্তিটি আলোচনা কর |
মানব সৃষ্ট সবকিছুর সমষ্টিই হলো সংস্কৃতি উক্তিটি আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : সংস্কৃতি বলতে মানবসমাজের সদস্যদের সামাজিক ব্যবহারের পরিমিত শিক্ষালব্ধ ধারাগুলোকে বুঝায়। সংস্কৃতি বা Culture শব্দটি ষোলো শতকের শেষার্ধে ফ্রান্সিস বেকন সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন।
পাশ্চাত্য ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী জোনস তাঁর 'Basic Principles of Sociology' গ্রন্থে বলেন, “মানব সৃষ্ট সবকিছুর সমষ্টি হলো সংস্কৃতি।”
(Culture is the sum of man's creation) তবে সমাজবিজ্ঞানী জোনস পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে সংস্কৃতিকে মূল্যায়ন করেছেন।
জোনসের উক্তিটির যথার্থতা : সাধারণত মানুষের জীবনযাপন প্রণালিকে সংস্কৃতি বলা হয়। অর্থাৎ সমাজে বসবাসকারী মানুষ তার নিজের অস্তিত্ব রক্ষা এবং উন্নত জীবনযাপনের প্রত্যাশায় যা কিছু সৃষ্টি বা নির্মাণ করেছে তাকে সংস্কৃতি বা Culture বলে।
প্রাচীনকালে মানুষ গুহাবাসী হয়ে বসবাস করতো। যাযাবরের ন্যায় একস্থান থেকে অন্যস্থানে সর্বদাই চলাচল করতো। তখনই মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয়তা পরিলক্ষিত হতো।
এসব প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ বিভিন্ন উপকরণাদি সৃষ্টি করে চাহিদা পূরণ করতো। যুগ ও চাহিদার পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের চাহিদার পরিবর্তন ঘটে এবং এর পরিধি প্রসারিত হয়।
মানুষ তার ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে একসময় জ্ঞানবিজ্ঞান, আচার, বিশ্বাস, ভাষা, শিল্পকলা, নীতিবোধ, কথা বলার ধরন, রাষ্ট্রীয় আইনকানুন, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, নীতিবোধ, ধর্ম ও অভ্যাস অনুশীলন প্রভৃতির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে ফেলে।
এ সম্পৃক্ততা মানুষের সৃজনশীলতাকে অধিক বাড়িয়ে দেয়। মানুষের এরূপ সৃজনশীলতাকে সমাজবিজ্ঞানীরা সংস্কৃতি বলে অভিহিত করেছেন।
অর্থাৎ মানুষের প্রয়োজনীয়তা থেকেই সংস্কৃতির ধারণা জন্মলাভ করেছে। তবে সমাজবিজ্ঞানীরা সংস্কৃতির প্রধান দুটি ধারার উল্লেখ করেছেন।
যথা : বস্তুগত ও অবস্তুগত। অন্যদিকে, সমাজবিজ্ঞানীরা ও দার্শনিক কার্ল মার্কস বলেন, সংস্কৃতি হলো উপরিকাঠামো ।
অর্থাৎ উৎপাদন পদ্ধতি ও উৎপাদন সম্পর্কে সমাজের মৌল কাঠামোকে নির্ধারণ করে। এ মৌল কাঠামোই উপরিকাঠামো নির্ধারণে সাহায্য করে থাকে।
মার্কসের মতে, মানুষ তার প্রয়োজনে রাষ্ট্র, আইন, ধর্ম, শিল্পকলা, নীতিবোধ, ধর্মীয় দর্শন, রাষ্ট্রীয় আইন, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান নামক যেসব কাঠামো সৃষ্টি করেছে তার সমষ্টিই সংস্কৃতি। তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানব সংস্কৃতির ধারা উন্নত থেকে উন্নততর হয়েছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক জীব হিসেবে সমাজে বসবাস করতে গিয়ে অর্থাৎ মানুষ নিজেকে সমাজের উপযোগী করতে যা কিছু সৃষ্টি করেছে তার সমষ্টিই সংস্কৃতি।
সুতরাং সমাজবিজ্ঞানী জোনস এর উক্তির যথার্থতা রয়েছে এবং তা অন্যান্য সমাজবিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের কাছে প্রশংসনীয় এবং গ্রহণযোগ্য। অতএব বলা যায় যে, “মানব সৃষ্ট সবকিছুর সমষ্টি হচ্ছে সংস্কৃতি।”