ইংরেজদের সাথে শায়েস্তা খানের সংঘর সম্পর্কে লিখ
ইংরেজদের সাথে শায়েস্তা খানের সংঘর সম্পর্কে লিখ |
ইংরেজদের সাথে শায়েস্তা খানের সংঘর সম্পর্কে লিখ
- অথবা, ইংরেজদের সাথে শায়েস্তা খানের সংঘর্ষের বিবরণ দাও
উত্তর : ভূমিকা : ১৬৭৯ সালের অক্টোবর মাসে শায়েস্তা খান দ্বিতীয়বার বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হন। এ সময়ে ইংরেজদের সাথে সংঘর্ষ তার রাজত্বকালের প্রধান ঘটনা।
ইংরেজ বণিকগণ যখন এদেশে বাণিজ্য শুরু করে তখন শর্ত ছিল পণ্যসামগ্রীর উপর শতকরা দুই টাকা হিসেবে কর দিতে হবে। কিন্তু স্থানীয় কর্মচারীরা জোর করে বেশি কর আদায় করতো।
ফলে তাদের ব্যবসায় ক্ষতি হয়। তারা শায়েস্তা খানের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করে কিন্তু তেমন লাভ হয় নি। তাই শায়েস্তা খানের সাথে ইংরেজদের সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠে।
→ ইংরেজদের সাথে শায়েস্তা খানের সংঘর্ষ : ইংরেজদের নানাবিধ অন্যায় কার্যাবলির বিরুদ্ধে যথাবিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে তারা ক্রমাগত অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত কোম্পানির ডাইরেক্টরগণ সম্রাট দ্বিতীয় জেমসের নিকট শায়েস্তা খান ও আওরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে তাদের ব্যবসায়ের ক্ষতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে তার অনুমতি প্রার্থনা করেন।
দ্বিতীয় জেমস বিষয়টি অনুধাবন করে ডাইরেক্টসের যুদ্ধের অনুমতি প্রদান করেন এবং সৈন্যসহ ব্যাংকটি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে দিলেন। এদের মধ্যে তিনখানা জাহাজ বঙ্গদেশে এসে হাজির হলো।
১৬৮৬ সালে ইংরেজ সৈন্যবাহী জাহাজ হুগলীতে পৌঁছে। ফলে শায়েস্তা খানও হুগলী শহর রক্ষার জন্য ৩০০০ পদাতিক এ ৩০০ অশ্বরোহী মোতায়েন করেন।
উভয় পক্ষের মধ্যে যখন মন কষাকষি ভাব বিরাজ করছে তখন সামান্য একটি ঘটনা যুদ্ধকে এগিয়ে দেয়। ১৬৮৬ সালের ২৮ অক্টোবর হুগলী কুঠির তিনজন ইংরেজ সৈন্য বাজার করার সময়ে আক্রান্ত ও আহত হন।
তাদের উদ্ধার করার জন্য ইংরেজ ক্যাপ্টেন সচেষ্ট হলে তার অগ্রগতি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং মুঘল ফৌজদার আব্দুল গণি তার বাহিনী নিয়ে হুগলীতে ইংরেজদের কুঠি আক্রমণ করেন।
এতে বহু সৈন্য হতাহত হয় এবং ইংরেজ নৌযানগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু আস্তে আস্তে | ইংরেজ সৈন্য বেশি হলে মুঘল বাহিনী পলায়ন করে।
এ যুদ্ধে মুঘলদের প্রায় ৬০ জন সৈন্য নিহত হন এবং অনেকে আহত হন। কিন্তু শায়েস্তা খান এ ঘটনার ক্ষোভে অনেক সৈন্য প্রেরণ করেন।
১৬৮৬ সালের ২০ ডিসেম্বর ইংরেজরা পিছু হটতে থাকে এবং অবশেষে তাদের নেতা জব চার্নক শায়েস্তা খানের সাথে আলোচনা চালাতে লাগলেন। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইংরেজদের সাথে শায়েস্তা খানের সংঘর্ষ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ যুদ্ধের ফলে ইংরেজরা তাদের শক্তির প্রকাশ ঘটাতে থাকলে এবং শায়েস্তা খান এ সম্পর্কে অবগত হন এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে থাকেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইংরেজদের কবল থেকে বাংলা রক্ষা পায় নি।