ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলায় আধিপত্য বিস্তারের বর্ণনা দাও
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলায় আধিপত্য বিস্তারের বর্ণনা দাও |
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলায় আধিপত্য বিস্তারের বর্ণনা দাও
উত্তর : ভূমিকা : ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা শাসন করেছিলেন। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিশাল শক্তিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পরাজিত করেন।
এজন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কৌশলে নবাবের নিকটবর্তী লোকদের হাতে নেন। সিরাজ-উদ-দৌলার মৃত্যুর পর বাংলার স্বাধীন সূর্য অস্তমিত হয়।
→ ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলার আধিপত্য বিস্তারের ইতিহাস : নিম্নে বাংলার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্য বিস্তারের ইতিহাস বর্ণনা করা হলো :
১. ইংরেজদের আগমন : ১৫৯৯ সালে জনমেনডেনহল স্থলপথে ভারতবর্ষে আগমন করেন। ব্যবসার উদ্দেশ্যে ইংরেজরা বাংলায় আসেন ।২. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠন । ১৬০০ সালে বানি প্রথম এলিজাবেথের সময় ইংরেজ বণিকগণ ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নামে একটি বণিক সংঘ করেন।
৩. বাংলায় প্রবেশ : ইংরেজরা বিভিন্নভাবে বাংলায় প্রবেশ করার চেষ্টা করেন। টমাস রো ১৬১৬ সালে বাংলার সাথে স্থলপথে বাণিজ্য স্থাপনের জন্য সুরাটে ইংরেজ কর্তৃপক্ষকে চাপ দেন। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের অনুমতি নিয়ে ১৬২৩ সালে ইংরেজরা বাংলায় প্রবেশ করেন।
৪. বাণিজ্য কুঠি স্থাপন : ক্যাপ্টেন হকিলের নেতৃত্বে ইংরেজরা প্রথম সুরাটে ১৬১২ সালে কুটি স্থাপন করেন। ১৬৩২ সালে বাংলার ইংরেজদের বাণিজ্যের সূত্রপাত হয়। তারা ১৬৩৩ সালে বাংলার হরিপুরে এবং ১৬৫১ সালে হুগলিতে কুঠি স্থাপন করে।
৫. বাংলার ইংরেজদের জমিদারি লাভ : ১৬৬০ সালে পর থেকে বাংলায় ইংরেজ কোম্পানির বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৬৯৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সুতানটি, গোবিন্দগঞ্জ ও কালিঘাট নামে তিনটি গ্রাম খরিদ করেন।
৬. সুবাদার শাহ সুজার ফরমান : বাংলায় বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার জন্য ইংরেজরা সুবাদার শাহ সুজার নিকট থেকে একটি ফরমান লাভ করেন।
৭. সুবাদার মীর সুজার দত্তক অনুমোদন : ১৬৬০ সালে সুবাদার মীর জুমলা ইংরেজদের বাংলায় ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য একটি সড়ক অনুমোদন দেন।
৮. শায়েস্তা খানের অনুমতি লাভ : ১৬৭২ সালে শায়েস্তা খান ইংরেজদের বাংলায় অবাধ ও বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার একটি অনুমতি পত্র দেন।
৯. সম্রাট আওরঙ্গজেবের ফরমান লাভ : ১৬৮০ সালে বাংলাসহ সমগ্র মুঘল সাম্রাজ্যে অবাধ বাণিজ্য করার জন্য ইংরেজরা সম্রাট আওরঙ্গজেবের নিকট থেকে ফরমান লাভ করেন।
১০. সম্রাট ফররুখ শিয়ারের ফরমান : ১৭১৫ সালে সম্রাট ফররুখ শিয়ার ৩ হাজার টাকা পুরস্কারস্বরূপ ইংরেজদের বাংলায় বাণিজ্য করার অনুমতি দেন।
১১. পলাশি যুদ্ধে ইংরেজদের জয়লাভ : ১৭৫৬ সালে আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসনে বসেন। ১৭৫৭ সালে ২৩ জুন নবাবের সাথে ইংরেজ কোম্পানির সাথে পলাশির প্রান্তরে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে সিরাজ-উদ- দৌলা পরাজিত ও নিহত হন।
১২. কোম্পানির দেওয়ানি লাভ : ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজরা নবাব মীর কাসিমকে পরাজিত করে বাংলার স্বাধীন সার্বভৌমত্ব লাভ করে। কোম্পানি মুঘল সম্রাট নিকট থেকে বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় ব্যবসা-বাণিজ্যর উদ্দেশ্যে বাংলায় আগমন করে সর্বপ্রথম দ্রব্যসামগ্রী বিক্রির মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের কীর্তি গ্রহণ করে। তখন বাংলা ছিল ধনসম্পদে পরিপূর্ণ। কোম্পানির বাণিজ্যনীতি বাংলায় কৃষি অর্থনীতির ধস ডেকে আনে।