সভ্যতা কি । সভ্যতা বলতে কী বোঝায়
সভ্যতা কি । সভ্যতা বলতে কী বোঝায় |
সভ্যতা কি । সভ্যতা বলতে কী বোঝায়
উত্তর : ভূমিকা : মানুষ তার নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে এবং উন্নত জীবনের আশায় অদম্য প্রকৃতিকে জয় করার জন্য যেসব প্রচেষ্টা চালায় সেসব কর্মপ্রচেষ্টার ফসল হচ্ছে সভ্যতা।
মানব সভ্যতার ইতিহাস খুবই প্রাচীন ও বৈচিত্র্যময় । আর এ মানবগোষ্ঠীর ভাষা, রাজনৈতিক সংগঠন, সামাজিক প্রথা ও মূল্যবোধের মধ্য দিয়ে সভ্যতা বিকাশ লাভ করে।
তাই সভ্যতা হচ্ছে একটি মৌলিক ও জটিল বিষয় । মানবজাতির জীবনাচরণের সম্মিলিত সমন্বয়কেই সভ্যতা বলে ।
সভ্যতার : সভ্যতার ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে 'Civilization' যা 'Civis' বা 'Civitas' শব্দ থেকে এসেছে। আর 'Civitas' শব্দের অর্থ নাগরিক বা Citizen ।
প্রখ্যাত দার্শনিক ভলতেয়ার সর্বপ্রথম সভ্যতা বা 'Civilization' শব্দটি ব্যবহার করেন। সাধারণত সভ্যতা হচ্ছে মানুষের উদ্ভাবিত যন্ত্রপাতি, কার্যপ্রণালি, স্থাপত্য, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং কৌশলাদির সমষ্টি।
আর ব্যাপকার্থে, সভ্যতা হচ্ছে কোন একটি অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর উন্নততর জীবনব্যবস্থার প্রয়োজনে উদ্ভাবিত লিখন পদ্ধতি, আইন, সরকার ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্য, নব প্রযুক্তি, শিক্ষা ও ধর্মীয় দর্শনাদির সমষ্টি।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী, দার্শনিক ও নৃবিজ্ঞানী সভ্যতার বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন যা নিম্নরূপ: মন্টেস্কু এবং হ্যান্টিংটন (Montesquieu & Huntington) বলেন, "সভ্যতা হচ্ছে ভৌগোলিক তথা প্রাকৃতিক পরিবেশের আশীর্বাদপুষ্ট এক ফসল।”
মর্গান (Morgan) তাঁর 'Ancient Society' গ্রন্থে বলেন, “সভ্যতা হচ্ছে বিবর্তন নামক সিঁড়িটির শীর্ষ ধাপ। যে সমাজে লেখা ভাষা ও বর্ণমালা আছে, ধাতুর ব্যবহার ও লিখিত দলিলের প্রচলন আছে, সে সমাজই সভ্য।”
আলফ্রেড ওয়েবার (Alfred Waber) বলেন, "Civilization is meant primarily scientific and technical knowledge and the command which they give over natural resources."
ই. বি. টেইলর (E.B. Taylor) বলেন, "A civilization is a culture which has attained a degree of complexity usually characterized by urban life."
প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার ও পেজ (Maclver & Page) এর মতে, "সভ্যতা বলতে আমরা বুঝি মানুষ তার জীবনধারণ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকল্পে যে যান্ত্রিক ব্যবস্থা বা সংগঠন সৃষ্টি করেছে তারই সামগ্রিক রূপ।
কেবল যে আমাদের সামাজিক সংগঠনের নানারূপ নীতি সভ্যতার অন্তর্গত তা নয়, নানাবিধ কারিগরি কলাকৌশল ও বাস্তব যন্ত্রপাতি এর অন্ত
পি. জিলবার্ট (P. Gisbert) এর মতে, “সংস্কৃতির সে স্তরকে সভ্যতা বলা হয়, যে স্তর অপেক্ষাকৃত উন্নত ও মিশ্র সমাজে বহুসংখ্যক জনমানবের সমাবেশ সৃষ্টি করেছে, যাদের আমরা নগর আখ্যা দিয়ে থাকি ।
জার্মান দার্শনিক অসওয়াল্ড স্পেলোর (Oswald Spengler) এর মতে, “সভ্যতা হলো উৎকর্ষ সাধিত বা আদর্শ সংস্কৃতির চূড়ান্ত রূপ।”
অতএব বলা যায় যে, সমাজে বসবাসকারী মানুষের সৃষ্ট যাবতীয় বস্তুগত উপকরণই হলো সভ্যতা। মূলত মানবসমাজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার অভিপ্রায় থেকে সভ্যতার সৃষ্টি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সভ্যতা হচ্ছে মানব সৃষ্ট আদর্শিক প্রত্যয় এবং সংস্কৃতির সর্বোৎকৃষ্ট রূপ। সভ্যতা মৌলিক ও জটিল সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠে।
কেউ কেউ সত্যতা বলতে মানবজাতির বিকশিত পর্যায়কে বুঝিয়েছেন। মানুষ ধীরে ধীরে নিজস্ব বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে প্রকৃতিকে ব্যবহারের উপযোগী করে সুসংগঠিত ও সুশীল মানবসমাজ গড়ে তোলার মাধ্যমে সভ্যতার সৃষ্টি হয়।