বাংলায় জলদস্যু ও মগ আক্রমণকারীদের প্রতিরোধকল্পে শায়েস্তা খানের পদক্ষেপসমূহ আলোচনা কর
বাংলায় জলদস্যু ও মগ আক্রমণকারীদের প্রতিরোধকল্পে শায়েস্তা খানের পদক্ষেপসমূহ আলোচনা কর |
বাংলায় জলদস্যু ও মগ আক্রমণকারীদের প্রতিরোধকল্পে শায়েস্তা খানের পদক্ষেপসমূহ আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : শায়েস্তা খান ছিলেন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সুবেদার শায়েস্তা খান ছিলেন সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহলের ভ্রাতা এবং নূরজাহান বেগমের ভাই আসফ খানের পুত্র।
জলদস্যু ও মগরা বাংলা আক্রমণ করে ধন-সম্পদ লুন্ঠন করতো ও নারী-পুরুষ ধরে নিয়ে ক্রীতদাসরূপে বিক্রি করতো। শায়েস্তা খান মগদের দমন করার জন্য শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তুলেন।
→ জলদস্যু ও মগদের প্রতিরোধকল্পে শায়েস্তা খানের পদক্ষেপ : নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. মগ ও ফিরিঙ্গি জলদস্যুদের অত্যাচার : মগ ও ফিরিঙ্গি জলদস্যুরা বাংলার অধিবাসীদের উপর অত্যাচার চালাত। তাছাড়া ধনসম্পদ লুট করতো। চট্টগ্রাম শাসন করতো আরাকান রাজা।
আরাকানের রাজা সন্দীপ ১৬১৭ সালে পর্তুগিজদের নিকট হতে কেড়ে নিয়েছিল। মগ ও ফিরিঙ্গি জলদস্যুরা ঢাকা পর্যন্ত লুটতরাজ চালাত। তারা নারী পুরুষ ধরে নিয়ে যেত। তাদের ক্রীতদাসরূপে বিক্রি করতো।
২. নৌবাহিনী পুনর্গঠন : সুবেদার শায়েস্তা খান মগ ও ফিরিঙ্গি জলদস্যুদের হাতে থেকে লোকজনের জানমাল রক্ষার জন্য নৌবাহিনী পুনর্গঠন করেন।
এছাড়া বহু রণতরী নির্মাণ ও সংগ্রহ করেন। তিনি ৩০০ রণতরী সংগ্রহ করে জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযানের প্রস্তুতি নেন।
৩. মগদের বিরুদ্ধে অভিযান : শায়েস্তা খান ৫০০ বন্দুকধারী সৈন্যসহ মগদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি সাইয়িদ নামক একজন আফগানকে নোয়াখালীর দায়িত্বে নিযুক্ত করেন।
ফাঁড়ি রক্ষার জন্য হুগলির ফৌজদার মুহাম্মদ শরিফকে নিয়োগ দেন। শ্রীপুরের নদী পাহারার জন্য মুহাম্মদ বেগ ও আবুল হাসানকে নিয়োগ দেন।
৪. সন্দীপ পুনর্দখল : শায়েস্তা খান মগদের দমন করার জন্য সন্দীপ পুনর্দখলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তিনি দিলির খানের নিকট থেকে সন্দীপ দখলের জন্য আবুল হাসানকে পাঠান। আবুল হাসান নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধায়ক ইবনে হুসাইনের সহযোগিতায় সন্দীপ পুনর্দখল করেন।
৫. ফিরিঙ্গি জলদস্যুদের দলে আনার চেষ্টা : চট্টগ্রাম ঐ সময় মগদের দখলে ছিল। চট্টগ্রামে মগ ও পর্তুগিজের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাধে। ফিরিঙ্গিরা ৪২টি জেলেদের নৌকায় পরিবার-পরিজনদের নিয়ে নোয়াখালীতে আশ্রয় নেন। শায়েস্তা খান কৌশলে ফিরিঙ্গিদের দলে নেন ।
৬. চট্টগ্রামে অভিযান প্রেরণ : চট্টগ্রাম আগমন করতে মুঘল বাহিনীকে ফিরিঙ্গি দলপতি অনুপ্রাণিত করেন। শায়েস্তা খান তার জ্যেষ্ঠ পুত্র বুজুর্গ উমেদ খানের নেতৃত্বে ১৬৬৫ সালে ২৪ ডিসেম্বর অভিযান পরিচালনা করেন।
২৮৮টি জাহাজ নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ইবনে হোসাইন নৌবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন। বুজুর্গ উমেদ খান স্থলবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন।
৭. চট্টগ্রাম দখল : ১৬১৬ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রথম নৌযুদ্ধে আরাকানি নৌবাহিনী পরাজিত হয়ে কর্ণফুলি নদীর দিকে পশ্চাৎপসারণ করে। মুঘল বাহিনী সম্মুখে অগ্রসর হতে থাকলে আবার ভীষণ যুদ্ধ হয়।
এই যুদ্ধে ফিরিঙ্গিরা ও বাংলার জমিদার মনোয়ার খান কৃতিত্বের পরিচয় দেন। এই অভিযানে অসংখ্য বাঙালি নর-নারী আরাকানি দস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পান ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শায়েস্তা খানের শাসনকালে বাংলার জনগণ সুখ ও শান্তিতে ছিলেন। তাঁর আমলে বাংলার কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি করে।
পণ্যদ্রব্যের মূল্য এতো সস্তা ছিল যে ১ টাকায় আট মন চাল পাওয়া যেত। বাংলায় জলদস্যু ও মগদের দমন করার জন্য তিনি শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলেন।
মগদের অত্যাচার থেকে বাংলার জনগণকে রক্ষা করার জন্য মগদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অভিযান প্রেরণ করেন।