বাংলার সুবাদার হিসেবে মীর জুমলার শাসনকাল আলোচনা কর
বাংলার সুবাদার হিসেবে মীর জুমলার শাসনকাল আলোচনা কর |
বাংলার সুবাদার হিসেবে মীর জুমলার শাসনকাল আলোচনা কর
- অথবা, বাংলার সুবাদার হিসেবে মীর জুমলার শাসনামলের বিবরণ দাও ।
উত্তর : ভূমিকা : বাংলার ইতিহাসে মীর জুমলা একজন অন্যতম সুবাদার। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে মীর জুমলা বাংলার সুবাদারের মর্যাদা লাভ করেন। শাসক, রাজনীতিবিদ ও সেনানায়ক হিসেবে তিনি কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
মীর জুমলা তার অসাধারণ কৃতিত্বের ফলে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছ থেকে “খান-ই-খানান” এবং “সিপাহসালার” উপাধিতে ভূষিত হন।
→ মীর জুমলার পরিচয় : মীর জুমলার প্রকৃত নাম ছিল মীর .মুহাম্মদ । পারস্যের ইস্পাহান শহরে তার জন্ম হয়। ভাগ্যান্বেষণেই ভারতবর্ষে আগমন করেন এবং গোলকুন্ডার সুলতানের অধীনে সৈন্যবিভাগে চাকরি গ্রহণ করেন।
পরে তিনি গোলকুন্ডার সেনাপতির পদ লাভ করেন। স্বীয় কর্মদক্ষতা ও গুণে তিনি শীঘ্রই সম্রাট শাহজাহানের অনুগ্রহ লাভ করেন এবং উজীর পদ লাভ করেন।
শাহজাদা আওরঙ্গজেব যখন দাক্ষিণাত্যের সুবাদার তখন মীর জুমলা তার সাথে যোগদেন এবং আওরঙ্গজেবের অনুগ্রহে পুত্রসহ মুঘল দরবারে আশ্রয় লাভ করেন।
মীর জুমলা আওরঙ্গজেবের প্রিয়পাত্র ছিলেন। ভ্রাতৃবিরোধ কালে তিনি আওরঙ্গাজেবের পক্ষ অবলম্বন করেন। তার সাহায্যেই আওরঙ্গজেব সুজার বিরুদ্ধে জয়ী হন এবং সুজার পলায়নের পর মীর জুমলা বাংলার শাসনকর্তার পদ লাভ করেন।
বাংলার শাসনক্ষমতা গ্রহণের পর মীর জুমলা প্রথমে রাজ্যের বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা দূর করেন। তিনি বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। তিনি প্রায় তিন বছরকাল বাংলার শাসক ছিলেন।
→ মীর জুমলার শাসনকাল : বাংলার সুবাদার হিসেবে মীর জুমলার শাসনকাল নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১. ক্ষমতা লাভ : ইস্পাহানের অধিবাসী মীর জুমলার নাম ছিল মীর মুহাম্মদ । তিনি ভাগ্যান্বেষণে ভারতবর্ষে আগমন করে গোলকুন্ডার সুলতানের সেনা বিভাগে চাকরিতে যোগদান করেন এবং আস্তে আস্তে সেনাপতির পদ লাভ করেন।
স্বীয় কর্ম ও দক্ষতার গুণে তিনি সম্রাট শাহজাহানের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে ভ্রাতৃবিরোধ কালে তিনি আওরঙ্গজেবের পক্ষে যোগদান করেন।
তারই সাহায্যে আওরঙ্গজেব সুজার বিরুদ্ধে জয় লাভ করেন। এজন্য আওরঙ্গজেব তাকে সাত হাজারী মনসব প্রদান করেন। ১৬৬০ সালে তিনি বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হন এবং বাংলার শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
২. শাসন সংস্কার : বাংলার শাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর মীর জুমলা প্রথমে রাজ্যের বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা দূর করেন। তিনি বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন।
তিনি প্রজাদের মঙ্গলের জন্য নানা প্রকার সংস্কার প্রবর্তন করেন এবং এদেশের উপযোগী একটি সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলেন । তিনি প্রায় তিন বছরকাল বাংলার শাসক ছিলেন।
৩. কুচবিহার ও আসাম অভিযান : তিনি এক প্রকার বিনা বাধায় কুচবিহার অধিকার করেন। তিনি সম্রাটের নামানুসারে কুচবিহারের রাজধানীর নামকরণ করেন আলমগীরনগর। এরপর তিনি ব্রহ্মপুত্র নদ অতিক্রম করে আসামের রাজধানী বরগ্রাম অধিকার করেন।
৪. সমরকৌশলী ও দক্ষ শাসক : মীর জুমলা সমরকৌশলী ও দক্ষ শাসনকর্তা ছিলেন। তিনি নিত্য প্রয়োজনীয় সকল জিনিসের একচেটিয়া আড়ৎদারি সরকারের হাতে ন্যস্ত করেন।
তিনি ইংরেজ বণিকদের জাহাজের মাধ্যমে এদেশ থেকে পারস্য দেশে নানা প্রকার দ্রব্যাদি রপ্তানির ব্যবস্থা করেন। রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে প্রজাদের উপর যাতে কোনো প্রকার অত্যাচার না হয় সেদিকে তার দৃষ্টি ছিল।
উপসংহার : মীর জুমলা ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান। মনের দিক থেকে অস্বাভাবিক শান্ত, নির্ভীক ও সাহসী। রাজ দরবারের কূটকৌশলে এবং যুদ্ধের ময়দানে রণচাতুর্যে তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণ ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অমায়িক ও ন্যায়পরায়ণ ছিলেন। তিনি অল্প সময়ের মধ্যে এ দেশে একটি সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রজাদের মঙ্গলের জন্য নানা প্রকার শাসন সংস্কার সাধন করেন।