বাংলার সামগ্রিক জীবনে মুর্শিদকুলি খানের শাসন ব্যবস্থা প্রভাব সম্বন্ধে লিখ
বাংলার সামগ্রিক জীবনে মুর্শিদকুলি খানের শাসনব্যবস্থার প্রভাব সম্বন্ধে লিখ |
বাংলার সামগ্রিক জীবনে মুর্শিদকুলি খানের শাসন ব্যবস্থা প্রভাব সম্বন্ধে লিখ
- অথবা, বাংলার সামগ্রিক জীবনে মুর্শিদকুলি খানের শাসনব্যবস্থার প্রভাব সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : অষ্টাদশ শতকে বাংলার ইতিহাসে নবাব মুর্শিদকুলি খানের আবির্ভাব বাংলার সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সংযোজন।
শাসনব্যবস্থার পর্যায়ক্রমে মুঘল সাম্রাজ্যের অর্থনীতি চরম দুর্দশায় পৌঁছলে সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ করেন।
→ শাসনব্যবস্থার প্রভাব : মুর্শিদকুলিখান শুধু রাজস্ব, অর্থনীতিতেই অবদান রাখেননি, তিনি শাসক হিসেবে প্রশাসনে, রাজনীতিতে মহত্বের পরিচয় দেন। তার শাসনব্যবস্থার প্রভাব প্রশাসনের এবং বাংলার সামগ্রিক জীবনে পরিলক্ষিত হয় । যথা—
১. প্রজাশোষণের অবসান : তার সংস্কারের ফলে প্রজারা পূর্বের সুবাদারি ও দিওয়ানি এ দ্বৈত শাসনের শোষণ থেকে জনগণ মুক্তি পায় ।
২. প্রজাদের অবস্থার উন্নতি : পূর্বে প্রজা তথা কৃষকদের অত্যাচারী কর আদায়কারীর মর্জির উপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু তার ব্যবস্থার উন্নতিতে প্রজাদের নিকট থেকে অতিরিক্ত কোনো কর আদায় করা হতো না । ফলে প্রজাদের উৎপীড়ন হ্রাস পায়।
৩. সাবেক জমিদারী ধ্বংস : মুর্শিদকুলি খান আমিন বা ইজারাদারদের নামে এক নতুন শ্রেণির উৎপত্তি ঘটান এবং সংস্কারের মাধ্যমে পুরাতন জমিদার বিশেষ করে মুঘলমানদের জমিদারীর সংখ্যা কমিয়ে দেন।
৪. নতুন শ্রেণির উদ্ভব : মুঘলমানদের পরিবর্তে তিনি | বাঙালি হিন্দুদেরকে বিভিন্ন সরকারি পদে নিয়োগ ও জমিদারীত্ব অপর্ণ করেন। ফলে একটি নতুন হিন্দু মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে ওঠে।
৫. কৃষি উন্নতি : তার সংস্কারের ফলে একদিকে কৃষকরা যেমন আগের শোষণ পীড়ন থেকে রক্ষা পায় অপরদিকে কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন অনুসারে সরকারের থেকে কৃষকদের ঋণদানের নীতি গৃহীত হয়। ফলে কৃষির যথেষ্ট উন্নতি সাধিত হয়।
৬. উদার শাসননীতি : তাঁর শাসনামলে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করে। ফলে প্রজাদের কর দেওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তিনি হিন্দুদের বিভিন্ন পদে বসিয়ে মুঘলমানদের একচেটিয়া প্রশাসনিক আধিপত্য থেকে জনগণকে মুক্ত করে এক উদার শাসননীতির প্রবর্তন করেন।
৭. মুদ্রানীতি : তিনি বিবিধ সংস্কারে ব্যাপক সফলতা লাভ করলেও মুদ্রানীতি তেমন একটা সাফল্য লাভ করতে পারেননি।
৮. অর্থনৈতিক অগ্রগতি : রাজস্ব সংস্কারের ফলে অর্থনীতিতে তার ব্যাপক সফলতা অর্জিত হয়।
৯. সরকারের আয় বৃদ্ধি : বিভিন্ন ক্ষেত্রে পূর্ব থেকে সরকারের আয় বৃদ্ধি পায় ।
১০. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা : রাজনীতির এক চরম বৈরী পরিবেশে তার আবির্ভাব হয়। তিনি পরবর্তীতে স্থিতিশীলতা আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুর্শিদকুলি খানের শাসনব্যবস্থার প্রভাবে বাংলার গোটা প্রশাসনিক জীবনে নিয়ম- শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়।
জনজীবনে শান্তি ফিরে আসে। বণিকেরা অতিরিক্ত করের হয়রানি থেকে রেহাই পায়। এভাবে প্রশাসনে ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়।