বাংলাদেশের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের প্রকৃতি আলোচনা কর
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের প্রকৃতি আলোচনা কর |
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের প্রকৃতি আলোচনা কর
- অথবা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের প্রকৃতি আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ব্যক্তিত্ব বিকাশ ক্ষেত্রে একক সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। প্রত্যেক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ক্ষেত্রে কিছু নিজস্ব স্বকীয়তা রয়েছে।
এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে সাথে সাথে সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর শক্তি হিসেবে কাজ করে।
প্রত্যেক দেশের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের প্রকৃতি ভিন্ন ধরনের। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের প্রকৃতিরও নিজস্ব কিছু স্বকীয়তা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে অ্যালান বল (Ball) বলেন যে, "Political socialization is not a process confined to the impressionable years of child, but one that continues throughout adult life."
রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ (Political socialization) : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ হল এমন একটি পদ্ধতি যার সাহায্যে শিশুর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পথে রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও মনোবৃত্তি জাগরিত করা যায় এবং প্রাপ্তবয়স্কদের বিভিন্ন রাজনৈতিক উপাত্তের উপযোগী করে গড়ে তোলা যায়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের প্রকৃতি : বাংলাদেশের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের নিজস্ব কিছু স্বকীয়তা রয়েছে। নিম্নে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করা হল ।
১. একটি উন্নয়নমুখী রাজনৈতিক ব্যবস্থা : একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এর জনগণের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের প্রকৃতি কিরূপ, তার উপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্বরূপ নির্ণয় করা হয়।
একটি নবীন উন্নয়নমুখী রাজনৈতিক ব্যবস্থার সভ্য জনগণ হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের উপর ন্যস্ত হয় জাতি গঠন ও রাজনৈতিক উন্নয়নের গুরুদায়িত্ব।
২. প্রকাশ্য ও সুপ্ত রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ : বাংলাদেশের জনসাধারণ প্রকাশ্যে ও সুপ্ত উভয় প্রকার পদ্ধতির মাধ্যমে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ লাভ করে।
বিভিন্ন সভাসমিতি, বক্তৃতা, প্রচারণা প্রভৃতি পদ্ধতি এদেশের জনগণের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণে মূল্যবান অবদান রাখে।
৩. গ্রামভিত্তিক সামাজিকীকরণ : বাংলাদেশ মূলত একটি গ্রামপ্রধান দেশ এবং এদেশের অধিকাংশ লোক অশিক্ষিত। এ অশিক্ষিত জনগণ অক্ষরজ্ঞান বর্ণিত হওয়ায় সভাসমিতি, মিটিং মিছিল ও স্লোগানের মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় প্রভাবিত হয়।
৪. পারিবারিক সামাজিকীকরণ : যে কোন দেশের সামাজিকীকরণ ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না। আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক অশিক্ষিত, বিধায় তাদের সামাজিক ক্ষেত্রে সামাজিকীকরণ ক্ষেত্রে পরিবারের উপর সর্বাধিক নির্ভরশীল।
৫. নিম্ন মাত্রার সামাজিকীকরণ : অশিক্ষিত পরিবারের সদস্যবৃন্দ পরিবারে যে সামাজিকীকরণ লাভ করে তার মান নিম্ন হতে বাধ্য। বাংলাদেশের অশিক্ষিত পরিবারগুলোতে যে মাত্রায় রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ সূচিত হয়, তা শূন্যের প্রায় কাছাকাছি ।
কিন্তু কিছু কিছু শিক্ষিত পরিবারের সদস্যবৃন্দ তুলনামূলকভাবে উচ্চ স্তরে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ লাভ করে থাকে।
৬. প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ : প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ নীতির ফলে দেশব্যাপী শহরায়নের এক জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আজ থেকে পনেরো-বিশ বছর আগে গ্রামাঞ্চলের যেসব স্থানে একা চলতে গা ছম ছম করত বর্তমানের শহরায়ন প্রবাহে সে সকল স্থানে এখন বিদ্যুতের ঝলক প্রবাহিত হচ্ছে এবং নগর জীবনের নানাবিধ উপাদানে প্রাত্যহিক জীবন সমৃদ্ধ হয়েছে।
শহরায়নের এ জোয়ার গ্রামের মানুষের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ক্ষেত্রেও নবজাগরণের সূচনা করেছে।
৭. প্রাথমিক ও সুপ্ত সামাজিকীকরণ : প্রাথমিক ও সুপ্ত সামাজিকীকরণ পরবর্তী সামাজিকীকরণের সংমিশ্রণ ঘটতে থাকে। প্রাথমিক ও সুপ্ত ও পরবর্তী বা প্রকাশ্যে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের সংমিশ্রণ ও সহাবস্থানের এ কাজটি উন্নত পশ্চিমা রাজনৈতিক ব্যবস্থাসমূহের বিশেষ প্রক্রিয়ায় সম্পাদিত হয় এবং সেখানে এ দু'প্রকার সামাজিকীকরণ কমবেশি একই পথে প্রবাহিত হয়।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের মত গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ক্ষেত্রে পরিবার ও সামাজিক এবং রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণে রাজনৈতিক দলসমূহ ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
আবার বাংলাদেশের অশিক্ষিত জনগণের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণে সঙ্গী দল সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে সার্বিক বিচারে বাংলাদেশের রাজনৈতিক এর মাত্রা তথা প্রকৃতি অনুন্নত ও পশ্চাৎপদ ।