বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্বরূপ আলোচনা কর
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্বরূপ আলোচনা কর |
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্বরূপ আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : প্রত্যেক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাজনীতির প্রশ্নটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রাজনীতির ধারণা বিভিন্ন সামাজিক অবস্থানের উপর নির্ভরশীল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নিজস্ব স্বকীয়তা লক্ষ্য করা যায়।
দীর্ঘদিন যাবৎ এ উপমহাদেশে ইংরেজদের শাসন বলবৎ থাকায় তাদের প্রতিষ্ঠিত কিছু রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচলিত হয়েছে। তবে বিভিন্ন চিন্তাবিদ নিজের পরিবেশ ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে রাজনীতির ধারণটির ব্যাখ্যা করেছেন।
রবার্ট ডাল এ সম্পর্কে বলেছেন, "Politics is one of the unavodable facts of human existance. Everyone is involved is some fashion at sometime in some kind of political system."
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্বরূপ : বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্বরূপ আলোচনার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের স্বরূপের সাথে অনেক বিষয়ে সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
নিম্নে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্বরূপ আলোচনা করা হল :
১. বাংলাদেশের রাজনৈতিক কার্যকলাপ : অধ্যাপক ফাইনারের অভিমত অনুসারে রাজনীতির মধ্যে কার্যাবলির ধারণা বর্তমান যেটা বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক কার্যকলাপের ক্ষেত্রে সহনশীলতার মাত্রা অন্যান্য রাষ্ট্র থেকে অনেক বেশি। যেটা বর্তমানে আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার অন্যতম আলোচ্যবিষয়। অধ্যাপক Allan R. Ball বলেন, "Politics is an activity, not a moral prescription, it is a universal activity."
২. আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা : বাংলাদেশে বর্তামানে যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা বর্তমান তা অনেক আধুনিক। বর্তমানে মনে করা হয় যে, কেবলমাত্র সরকারি সংস্থা, পার্লামেন্ট, নির্বাচন, মন্ত্রিসভা প্রভৃতির সাথে সম্পর্কযুক্ত কার্যাবলিই হল রাজনৈতিক কার্যাবলির অংশ। যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত।
৩. ক্ষমতাকেন্দ্রিক বিষয়াবলি : ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের সাথে রাজনীতির সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। অধ্যাপক H. D. Lasswell বলেন, the study of the shoping and sharing of power."
বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। বর্তমানে রাজনীতিতে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের লড়াইয়ের জন্য রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরিলক্ষিত হয়।
৪. রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক বিষয় : বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা রাষ্ট্রনৈতিক বিষয়াবলি নিয়ে আবর্তিত হয়। যে কারণে রাজনৈতিক ব্যবস্থা সকলের কাছে একটা গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা জনগণের অনুকূলে কাজ করে। ফলে জনগণ রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থা স্থাপন করেছে।
৫. ক্ষমতা প্রয়োগ : আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূল কেন্দ্রবিন্দু হল ক্ষমতার অবাধ প্রয়োগ, এর মাধ্যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয় এবং ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ক্ষমতার অবাধ প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়।
৬. রাজনৈতিক মতভেদ : বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মতভেদ লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশ। মূলত বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে পরিচিত।
যে কারণে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে রাজনৈতিক মতভেদ লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে রাজনৈতিক মতভেদের কারণে জনগণের মাঝে বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করা যায়।
৭. গণতন্ত্রের চর্চা : বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত। গণতন্ত্রের জনগণ সর্বোচ্চ ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। এ কারণে বাংলাদেশের জনগণের মাঝে গণতন্ত্রের চর্চা পরিলক্ষিত হয়।
বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রের চর্চা করে থাকে। যদিও বর্তমানে সেমিগণতন্ত্র প্রচলিত রয়েছে।
৮. রাজনৈতিক গতিশীলতা : পৃথিবীর সকল রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাথে বাংলাদেশের ব্যবস্থার একটা ভারসাম্য লক্ষ্য করা যায়। সকল রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাথে তাল মিলাতে গিয়ে এখানে রাজনৈতিক গতিশীলতা বর্তমান রয়েছে।
সকল রাজনৈতিক দলগুলো বর্তমানে রাজনৈতিক ব্যবস্থার সকল কার্যাবলির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
৯. রাজনৈতিক কোন্দল : রাজনৈতিক কোন্দল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অস্টিন রেনি বলেছেন, "Political conflict is not an unfortunate temporary aberration from the room of perfect co- operation and harmoney. বাংলাদেশের প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের মধ্যে উপদলীয় কোন্দল পরিলক্ষিত হয়।
১০. সবার আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার : বাংলাদেশের আইনের চোখে সবাই সমান। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭নং অনুচ্ছেদে আইনের চোখে সকলেই সমান এবং সকলেই আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী।
১১. বাকস্বাধীনতা : বাংলাদেশের সকল জনগণের বাকস্বাধীনতা রয়েছে। কোন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের কোন জনগণের বাকস্বাধীনতা খর্ব করতে পারে না। যে কারণে সকলের ব্যক্তিস্বাধীনতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ।
১২. সরকারের অংশগ্রহণ : অধ্যাপক বলের অভিমত অনুসারে বলা যায়, রাজনৈতিক কার্যকলাপের প্রেক্ষিতে সরকারের সর্বদলীয় সরকারের ধারণা বিভ্রান্তির পরিচায়ক।
বাংলাদেশে সরকারের সকল রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করে। জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে জনগণের দাবি পূরণে তার সকল কার্যাদি পরিচালিত করে।
১৩. ধর্মীয় স্বাধীনতা : বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত। এখানে প্রত্যেকের ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে। কোন ব্যক্তি অপর ধর্মের কোন ব্যক্তিকে তাঁর ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে না।
১৪. জোট গঠনের প্রবণতা : সম্প্রতি বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জোট গঠনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছে।
বর্তমানে আওয়ামী লীগ মহাজোট গঠনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য বিভিন্ন বামপন্থি দলের সাথে ঐকমত্যে পৌঁছেছে।
১৫. সমাবেশের স্বাধীনতা : বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের তথা প্রত্যেক জনগণের সমাবেশের অধিকার বর্তমান। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৭নং অনুচ্ছেদে জনগণ জনসভা এবং সভাযাত্রায় যোগদান করবার অধিকার লাভ করবে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা বর্তমান তাতে দ্বন্দ্ব ও ক্ষমতার প্রয়োগ সর্বত্র পরিলক্ষিত হয়।
কোন রাজনৈতিক দল অপর কোন রাজনৈতিক দলের সাথে রাজনৈতিক ঐক্যে পৌঁছাতে পারছে না, এর মূল কারণ রাজনেতিক দ্বন্দ্ব ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব।
যে কারণে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে। অধ্যাপক মিনার বলেছেন, "Conflict lies at the heart of politics. In a world of universal agreement, there would be no room for it."