ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় আলোচনা কর
ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় আলোচনা কর |
ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় আলোচনা কর
- অথবা, ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষের প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরগুলো তুলে ধর।
উত্তর : ভূমিকা : ত্রিপক্ষীয় সংঘষ পালবংশের ইতিহাসে অন্যতম এক ঘটনা। ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষ হলো কনৌজের আদিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ধর্মপাল ভারতের প্রতিহার রাজবংশ ও দাক্ষিণাত্যর রাষ্ট্রকূট রাজবংশের মধ্যে যে সংঘর্ষ দেখা দেয় তাই ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষের সূচনা ঘটনার অবতারণা এভাবে যে বাংলায় যখন পালরা ক্ষমতায় তখন দাক্ষিণাত্যের চালুকদের পরাজিত করে রাষ্ট্রকূট রাজ বংশ ক্ষমতায় আসে।
ঐ দিকে প্রতিহার রাজবংশ মালব ও রাজস্থানের ক্ষমতায় থাকে। আবার যশোবর্মা ও ললিতাদিত্যের বিজয় কুঞ্জে অভিযানের পর দীর্ঘদিন যাবৎ কানাভুজে রাজনৈতিক অচলাবস্থা বিরাজ করতে থাকে।
এ অচল অবস্থা পূরণ করার জন্য পার্শ্ববর্তী শক্তিবর্গের মধ্যে প্রবল আগ্রহ কাজ করে, যার দরুন শুরু হয় বিপক্ষীয় সংঘর্ষ।
→ ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় : নিচে ত্রিপক্ষীর | সংঘর্ষের প্রথম, দ্বিতীয় পর্যায় আলোচনা করা হলো :
১. ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষের প্রথম পর্যায় ; প্রতিহার ও পাল ৭ সংঘর্ষের মাধ্যমে ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষের প্রথম পর্যায় শুরু হয়। প্রতিহার রাজ ও ধর্মপাল উত্তর ভারত বিজয় অভিযানের জন্য যাত্রা করে।
তবে যুদ্ধ সমপর্যায়ে চললেও ধর্মপাল এ যুদ্ধে পরাজিত হয়। আবার বৎসরাজ কর্তৃক মধ্যদেশ অধিকারে করার আগেই দাক্ষিণাত্যে রাষ্ট্রকূটরাজ ধ্রুবধারাবর্ষ আর্যাবর্তে বিজয় অভিযান প্রেরণ করে ধর্মপাল ও বৎসরাজকে পরাজিত করে।
কিন্তু তিনি বিভিন্ন এলাকা তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত না করেই দাক্ষিণাত্য ফিরে যান। এ সুযোগে ধর্মপাল আবার আর্যাবর্তে রাজ্য বিস্তার করেই থেমে থাকে নি।
তিনি তার পরবর্তী টার্গেট কনৌজের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। যেখানে ধর্মপাল স্বীয় যোগ্যতা ও দক্ষতার বসে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল।
ভিন্ন লিপি ও প্রাপ্ত তথ্য থেকে এ কথা জানা যায় ধর্মপাল কনৌজ অধিকার করে এবং সেখানে চক্রাধকে শাসনভারের দায়িত্ব প্রদান করে।
২. ত্রিপক্ষীয় সংঘষের্র দ্বিতীয় পর্যায় : ধর্মপাল যখন চক্রাধকে ক্ষমতায় বসিয়ে বাংলায় চলে আসে তখন চক্রাধকে পরাজিত করে প্রতিহাররাজ দ্বিতীয় নাগভট্ট।
সেখানে নাগভট্ট তার শাসন প্রতিষ্ঠা করে, যা ধর্মপাল সহ্য করতে পারেনি। ছটফট করতে থাকে নাগভট্টকে সমুচিত জবাব দিতে।
যার দরুন নাপডী ও ধর্মপালের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়। নাগ পাশ্বতী শক্তিশালী রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব করে তার শক্তিকে বাড়াতে থাকে।
যখন চরম পর্যায়ে 'যুদ্ধ শুরু হয় তখন নাগভট্ট ধর্মপালকে পরাজিত করে। বিশাল সৈন্য সামস্তের অধিকার করে ধর্মপাল পরাজিত হয় এ সত্যের ঐতিহাসিক অনেক তথ্য রয়েছে।
কিন্তু নাগভট্ট তার রাজ্যে বেশি দিন টিকে থাকতে পারেনি কারণ যে সময় রাষ্ট্রকূটরাজ তৃতীয় গোবিন্দ শক্তির ভারতে আগমন করে নাগভট্টকে ভীষণভাবে পরাজিত করে।
সে সময় ধর্মপাল গোবিন্দের ক্ষমতায় হতবিম্ব হয় এবং চক্রাধসহ ধর্মপাল গোবিন্দের নিকট আত্মসম্পর্ণ করে।
বলা যায় অদূরদর্শী গোবিন্দ পিতার মত সেখানে তার প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার না করে চলে যান এবং আবার পরাজিত ধর্মপাল তার রাজ্য নির্দিধায় শাসন কার্য চালাতে থাকে। এটা গোবিন্দের ব্যর্থতা বলা যায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ধর্মপাল ও অন্যান্য শক্তির মধ্যে যে ত্রিশক্তি সংঘর্ষ চলে তাতে দেখা যায় ধর্মপাল এত বিশেষ শক্তি থাকা সত্ত্বেও তার অদূরদর্শী নীতির কারণে পরাজিত হয়।
পরাজিত হয়েছে পু-দুবার ধর্মপাল স্বীয় ক্ষমতায় থাকেন। বলা যায় এটা ধর্মপালের এক ধরনের ভাগ্য তা হলে তিনি কেন ক্ষমতায় থাকবে কারণ তিনি তো সেখানে পরাজিত।