সড়ক উন্নয়নের ইতিহাস সংক্ষেপে বর্ণনা কর
সড়ক উন্নয়নের ইতিহাস সংক্ষেপে বর্ণনা কর |
সড়ক উন্নয়নের ইতিহাস সংক্ষেপে বর্ণনা কর
প্রশ্নঃ সড়ক উন্নয়নের ইতিহাস সংক্ষেপে বর্ণনা কর
উত্তরঃ জনসাধারণের যাতায়াতের ও মালামাল পরিবহনের প্রধান প্রধান মাধ্যম হলো সড়কপথ, জলপথ ও আকাশপথ। দ্রুততম ও সহজ মাধ্যম হিসেবে সড়ক ও মহাসড়কের গুরুত্ব অপরিসীম। সভ্যতার আদি যুগ হতে চলাচলের জন্য সড়ক যথেষ্ট গুরুত্ব পরিলক্ষিত হয়। সভ্যতা বিকাশের অঙ্গ হিসেবে সড়কের গুরুত্ব কোন অবস্থাতেই উপক্ষো করা যায় না।
খ্রিষ্টপূর্ব 4000 বা 3000 সাল হতে সড়কের গুরুত্ব মানুষের কাছে অপরিসীম বলে প্রতীয়মান হয়। প্রাচীন হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো, রোমান ও মিসরীয় সভ্যতায় সড়কপথের নজির পাওয়া যায়। দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতিকল্পে সড়ক ও মহাসড়কের ভূমিকা অপরিসীম। দেশের যাতায়াত ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে সেদেশের অগ্রগতির পরিমাপ করা যায়।
প্রায় পাঁচ হাজার পূর্বে মহেঞ্জোদারো খনন কাজ সফলতার পর দেখা যায় ঐ সময়েও রাস্তাঘাট এবং এর উপর তামার তৈরি চাকার গাড়ির চলার ছাপ সুস্পষ্ট।
পরবর্তী সময়ে হরপ্পায় খননকার্য ও ঐরূপ চিহ্ন দেখা যায়। আর্যদের সময়ে মহাসড়কের মহাপথ বলা হতো। তাই বর্তমানে মহাসড়ক নামের ব্যবহার চলছে। মৌর্য সম্রাট বিশ্বসারের আমলে পাটনা জেলার দক্ষিণ-পূর্বদিকে রাজগীর নামক স্থানে রাস্তা নির্মিত হয়েছিল।
সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের আমলে যাতায়াত ব্যবস্থা ও রাস্তাঘাট নির্মাণের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে শেরশাহের আমলে গ্রান্ডট্রাঙ্ক রোড মানুষের যাতায়াতের জন্য এবং ডাক পরিবহনের জন্য নির্মিত হয়। যা এখনও বিলুপ্ত হয়নি।
মোগল আমলে রাস্তাঘাটের যথেষ্ট উন্নত হয়েছিল। মোগল সাম্রাজ্যের পতনের পর ইংরেজ শাসনের প্রথমদিকে রাস্তাঘাটের উন্নতির কোন নজির নেই তবে লর্ড ডালাহৌসির আমলে (1855 খ্রিষ্টাব্দে) সমাজ সংস্কার ও রাস্তাঘাট ইত্যাদির উন্নতির জন্য গুরুত্ব দেওয়া হয়।
পরবর্তী পর্যায়ে 1939 সালে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সামরিক বাহিনীর প্রয়োজনে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর সাথে যোগাযোগের জন্য ব্যাপকভাবে রাস্তাঘাট তৈরির কাজ শুরু হয়। তারই ফলশ্রুতিস্বরূপ সেন্ট্রাল পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট গঠিত হয় এবং এই বিভাগ দেশের সরকারি দালানকোঠা ও রাস্তাঘাট নির্মাণে এবং রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করে আসছিল। পরবর্তীতে এটা সিএন্ডবি নামে পরিচিত ছিল।
দেশের চাহিদার সাথে সমন্বয় রাখতে সিএন্ডবি বর্তমানে গণপূর্ত বিভাগ (PWD) এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ (R & HD) এ দুইভাগে বিভক্ত করা হয়। সড়ক ও জনপথ বিভাগ দেশের অভ্যন্তরীণ সকল প্রকার রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট ইত্যাদি নির্মাণ, মেরামত ও সংরক্ষণের কাজ করে আসছে।
এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (LGED) জেলা বোর্ড, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা এবং অন্যান্য সংস্থা ও কিছু কিছু সড়কের কাজ করে থাকে। তবে বড় বড় ব্রিজ নির্মাণের ক্ষেত্রে সড়ক ও জনপথ বিদেশি কারিগরি উন্নত প্রযুক্ত/পরামর্শ সাহায্য নিয়ে থাকেন।