শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে বাংলার হোসেন শাহী সুলতানদের অবদান আলোচনা কর
শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে বাংলার হোসেন শাহী সুলতানদের অবদান আলোচনা কর |
শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে বাংলার হোসেন শাহী সুলতানদের অবদান আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : বাংলার রাজবংশগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজবংশ হলো হোসেন শাহী বংশ। তারা যেমন বাংলায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন, তেমনিভাবে উদারনৈতিক নীতি গ্রহণ করে বাংলা ভাষার শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশ সাধন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
একদিকে যেমন মুঘলমানদের আরবি, ফারসি শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন, তেমনি হিন্দুধর্মের শিক্ষারও সুব্যবস্থা করেছিলেন।
→ শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে বাংলার হোসেন শাহী সুলতানদের অবদান : শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে বাংলার হোসেন শাহী সুলতানদের অবদান নিম্নে আলোচনা করা হলো।
১. উনার শিক্ষানীতি গ্রহণ : বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য বিকাশের জন্য হোসেন শাহী বংশের সুলতানগণ শিক্ষার ক্ষেত্রে উদারনীতি গ্রহণ করেন।
মুসলিম এবং হিন্দু উভয় সাহিত্যিকদেরকেই তারা সমান অধিকারের ভিত্তিতে উৎসাহিত করেন এবং উপাধি ও পুরস্কার প্রদান করেন।
২. আরবি ও ফারসি ভাষা চর্চার ব্যবস্থা : ইসলামি আনার্জনের জন্য সুলতানগণ বাংলার মুখলমানদের আরবি এবং ফারসি জ্ঞানার্জনের সুযোগ করে দেন। ফলে মুসলিমগণ আরবি এবং ফারসি ভাষায় দক্ষ হয়ে উঠে।
৩. উৎসাহ প্রদান : প্রত্যেক সুলতানগণ নিজ উদ্যোগে সাহিত্যের বিকাশে কাজ করেন। তারা প্রত্যেকেই কবি সাহিত্যিকদেরকে উৎসাহ প্রদান করেছেন।
ফলে কবি সাহিত্যিকগণ নিজেরাই উৎসাহিত হয়ে সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। যে কারণে বাংলা সাহিত্যের বিকাশ সাধিত হয়।
৪. বাংলা ভাষায় ইসলাম প্রচার : বাংলা ভাষার বিকাশ সাধনের জন্য সুলতানগণ বাংলা ভাষায় ইসলামি জ্ঞান চর্চা এবং প্রচার প্রসারের ব্যবস্থা করেন। যে কারণে ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটে এবং বাংলা ভাষার বিকাশ সাধিত হয়।
৫. সাহিত্যেকদের উপাধি প্রদান : সুলতানগণ সাহিত্যিকদের জাগের কর্মের প্রতিদান স্বরূপ বিভিন্ন উপঢৌকন প্রদান করতেন। সেই সাথে কবি সাহিত্যিকদেকে বিভিন্ন নামে উপাধি প্রদান করতেন।
৬. রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা : প্রদান : রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি পেতো। বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদেরকে হতো। তাদের রাজ দরবার থেকে ভরণপোষণের খরচ দেওয়া দেখা হতো। যে কারণে তারা স্বাধীনভাবে সাহিত্য চর্চা করার সুযোগ পেতেন ।
৭. হিন্দুধর্মের প্রচার : নিরপেক্ষ শিক্ষানীতির ফলে হিন্দু সাহিত্যিকগণ তাদের ধর্ম প্রচারের মাধ্যম হিসেবে সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। শ্রীচৈতন্যদেব তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বৈষ্ণবপদাবলি রচনা করে বাংলা সাহিত্যের বিকাশ ঘটান, সেই সাথে হিন্দুধর্মের প্রসার ঘটে।
৮. মুসলিম সাহিত্যের বিকাশ : মুসলিম সাহিত্যের বিকাশের ক্ষেত্রে হোসেন শাহী বংশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাদের পৃষ্ঠপোষকতার ফলে অনেক মুসলিম সাহিত্যিকগণ সাহিত্যে অবদান রাখেন। ইউসুফ জুলেখা, নূর নবী প্রভৃতি এই সময়ের উল্লেখযোগ্য সাহিত্য কর্ম।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলা সাহিত্যের বিকাশের ক্ষেত্রে হোসেন শাহী বংশ অন্যতম ভূমিকা পালন করেন। তাদের নিরপেক্ষ পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই বাংলা সাহিত্যের ব্যাপক বিকাশ সাধিত হয়।
শ্রীচেতন্যদেবের বৈষ্ণব পদাবলি হোসেন শাহীযুগের অন্যতম নিদর্শন। বাংলা সাহিত্যের বিকাশে হোসেন শাহী বংশের অবদান অপরিসীম।