সিকান্দার শাহ কে ছিলেন | সিকান্দার শাহর পরিচয় তুলে ধর
সিকান্দার শাহ কে ছিলেন । সিকান্দার শাহর পরিচয় তুলে ধর |
সিকান্দার শাহ কে ছিলেন | সিকান্দার শাহর পরিচয় তুলে ধর
- অথবা, সিকান্দার শাহ সম্পর্কে যা জান লিখ।
- অথবা, সিকাদার শাহ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা : সুলতান সিকান্দার শাহের রাজত্বকাল বাংলার ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। তিনি ছিলেন পিতার সুযোগ্য উত্তরাধিকারী।
তিনি সিংহাসনে আরোহণ করে সর্বাধিককাল পর্যন্ত বাংলায় রাজত্ব করেন। কিন্তু তার রাজত্বকাপের কিছু মুদ্রা ও কয়েকটি শিলালিপি ছাড়া অন্য কোনো সূত্রে তাঁর সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না।
সিকান্দার শাহের সিংহাসনারোহণ : সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের মৃত্যু হয় ১৩৫৮ খ্রিষ্টাব্দে। তার মৃত্যুর তৃতীয় দিনে তার সুযোগ্য পুত্র সিকান্দার শাহ বাংলার মসনদে বসেন। বিনা রুপাতেই তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন কারণ তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না।
তিনি ১৩৫৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৩৯৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৫ বছনা সিংহাসনে অধিষ্ঠিত থাকেন। সিকান্দার শাহের এ দীর্ঘ রাজত্বকালে বাংলায় মুসলিম শাসন সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
১. ফিরোজ শাহের সাথে সম্পর্ক : সিকান্দার শাহ সিংহাসন লাভ করার পর দিল্লির সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক দ্বিতীয়বারের মতো বাংলা অভিযান করেন।
এ অভিযান পরিচালনা করতে তিনি ১৩৬০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ৭০ হাজার অশ্বারোহী, ৪৭০টি হাতি এবং লক্ষাধিক পদাতিক সৈন্য ব্যবহার করেন।
সিকন্দার শাহ এ সংবাদ পেয়ে রাজধানী পাণ্ডুয়া ছেড়ে একডালা দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করেন। দীর্ঘদিন যুদ্ধ চলার পর জয়-পরাজয় অনিশ্চিত থাকে। তাই কোনো উপায় না দেখে উভয় পক্ষের মধ্যে সন্ধি হয়।
২. প্রজাহিতৈষী : সিকান্দার শাহ একজন প্রজাহিতৈষী শাসক ছিলেন। পিতার মত তিনিও একজন নিষ্ঠাবান মুঘলমান ছিলেন।
সুফি ও দরবেশদের প্রতি তার অনেক ভক্তি ও শ্রদ্ধা ছিল। তাদের সম্মানে সিকান্দার শাহ মসজিদও নির্মাণ করেন।
শিলালিপির মাধ্যমে জানা যায়, সুলতান সিকান্দার শাহ ১৩৮৩ খ্রিষ্টাব্দে দিনাজপুর জেলার দেবকোটে মোল্লা আতার দরগাহে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।
৩. সাহসী সেনানায়ক : বাংলার মুসলিম শাসনের ইতিহাসে সিকান্দার শাহ সর্বাধিককাল রাজত্ব করেন। তিনি ছিলেন একজন সাহসী ও সমরকুশলী সেনানায়ক।
তিনি সাফল্যজনকভাবে দিল্লি বাহিনীর আক্রমণ থেকে বাংলাকে রক্ষা করেন এবং এর অর্থততাকে অটুট রাখেন।
আর তাই ফিরোজ শাহ প্রথমবারের তুলনায় দ্বিতীয়বার অধিকতর প্রস্তুতি নিয়েও সিকাদার শাহকে উচ্ছেদ করতে ব্যর্থ হন।
৪. সুশাসক : সুলতান সিকান্দার শাহ সুশাসক হিসেবে অবিস্মরণীয়। তিনি ছিলেন একজন প্রজাহিতৈষী সুশাসক। পিতার মতো তিনি ও অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনা করতেন।
রাজ্যে অভ্যন্তরীণ কাঠামো সুগঠিত করে তিনি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। সিকান্দার শাহের মুদ্রা প্রবর্তন থেকে অনুধাবন করা যায়, তার সময়ে প্রজাসাধারণ সুখে-শান্তিতে বসবাস করতো।
৫. স্থাপত্যশিল্পের অনুরাগী : সুলতান সিকান্দার শাহ স্থাপত্যশিল্পের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। এ পর্যন্ত সিকান্দার শাহের শিলালিপি এবং বেশ কিছু মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে।
তার শাসনকালে নির্মিত প্রাসাদ, মিনার, হামাস ও মসজিদের ধ্বংসস্তূপের নিদর্শন | থেকে ধারণা করা যায়, তিনি অত্যন্ত শিল্পানুরাগী ও শিল্পা ছিলেন।
৬. নিষ্ঠাবান : মুঘলমান সুলতান সিকান্দার শাহ একজন নিষ্ঠাবান মুঘলমান ছিলেন। তাই সুফি-দরবেশগণ সব সময় তার পরবার অলকৃত করতেন।
মসজিদ নির্মাণের প্রতি তার অনেক আগ্রহ ছিল। এ থেকে বুঝা যায় যে, তিনি ধর্মের প্রতি অত্যন্ত আস্থাশীল। ছিলেন। মুসলিম সাধকদেরও তিনি অনেক শ্রদ্ধা করতেন।
মাওলানা মুজাফফর শামস্ বলখির চিঠিতে জানা যায় যে, সিকান্দার শাহের সাথে শেখ শরফউদ্দিন মনোরীর সৌহার্দ ও পত্রালাপ ছিল।
৭. বিষাদের পৃষ্ঠপোষকতা : সিকান্দার শাহ নিজে যেমন বিষানুরাগী ছিলেন ঠিক তেমনি বিশ্বানের পৃষ্ঠপোষকও ছিলেন। তিনি দরবেশ ও সুফিদেরকে অত্যন্ত ভক্তি ও শ্রদ্ধা করতেন। তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন পূর্বক তিনি মসজিদও তৈরি করেন।
শিলালিপি থেকে জানা যায়, সিকান্দার শাহ ১৩৬৩ খ্রিস্টাব্দে দিনাজপুর জেলার দেবকোটে মোল্লা আক্তার দরগাহে একখানি মসজিদ নির্মাণ করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতান সিকান্দার শাহের রাজত্বকালের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া না গেলেও একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, তিনি বাংলায় পিতৃরাজ্য অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন এবং তার শাসনামলে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করছিল এবং মানুষ সুখে শান্তিতে বসবাস করতো।
মূলত ইলিয়াস শাহ কর্তৃক প্রবর্তিত স্বাধীন সুলতানি আমল দৃঢ় প্রতিষ্ঠা লাভ করে সিকান্দার শাহের শাসনামলে।