সেন সাম্রাজ্য স্থাপনে বিজয় সেনের কৃতিত্বসমূহ আলোচনা কর
সেন সাম্রাজ্য স্থাপনে বিজয় সেনের কৃতিত্বসমূহ আলোচনা কর |
সেন সাম্রাজ্য স্থাপনে বিজয় সেনের কৃতিত্বসমূহ আলোচনা কর
- অথবা, সেন সাম্রাজ্য স্থাপনে বিজয় সেনের কৃতিত্ব সম্পর্কে তুমি কী জান?
উত্তর : ভূমিকা : বাংলায় পাল শাসনের অবসানের পর সেন শাসনের আবির্ভাব ঘটে। সেন বংশের ইতিহাসে বিজয় সেনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
কারণ তিনিই ছিলেন এ বংশের সর্বপ্রথম স্বাধীন ও শক্তিশালী রাজা এবং তার শাসনামলেই সেন বংশের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। ড. নীহারঞ্জন রায় এর মতে, তিনি ১০৯৬ থেকে ১১৫৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন।
সেন সাম্রাজ্য স্থাপনে বিজয় সেনের কৃতিত্ব : সেন রাজবংশ একশ বছর বাংলা শাসন করে। সেন বংশের স্থাপনকারী তথা প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বিজয় সেন।
প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে একাদশ শতাব্দীর অন্তিমকালে পাল রাজবংশের অবসান ঘটিয়ে সেনদের উত্থান একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
বাংলার পাল রাজবংশের রাজা দ্বিতীয় মহীপালের রাজত্বকালে বরেন্দ্র 'সামন্তচক্রের' বিদ্রোহের সুযোগ নিয়ে বিজয় সেন পশ্চিমবঙ্গে ক্রমশ স্বীয় আধিপত্য বিস্তার করেন এবং অবশেষে পালবংশের রাজা মদনপালের রাজত্বকালে স্বাধীন সত্তার বিকাশ ঘটান ।
বিজয় সেন ক্ষুদ্র সেন রাজ্যকে একটি বিরাট সাম্রাজ্যে পরিণত করেন। বিজয় সেন পশ্চিমবঙ্গের এক শূরবংশীয় রাজকন্যাকে বিয়ে করে বর্ধমান অঞ্চলে নিজের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করেন।
তিনি উড়িষ্যার রাজা অনস্বর্মন চোড়গঙ্গের সাথে মিত্রতা করেন এবং সমগ্র রাঢ়ে নিজের আধিপত্য স্থাপন করেন।
বিজয় সেন মিথিলার নান্যদেব গৌড়রাজ, মদনপাল ও কোশাম্বীর সামন্তরাজা ঘোরপর্বাকে পরাজিত করেন। প্রাচীনকালের বাংলার ইতিহাসে বিজয় সেনের রাজত্বকাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনিই ছিলেন সেন রাজত্বের স্থাপনকারী। একজন সামন্ত রাজা থেকে স্বীয় বুদ্ধিমত্তা, যোগ্যতা ও দক্ষতা বলে প্রায় ৬৫ বছর রাজত্বকালেই বঙ্গদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বিজয় সেন একজন অসামান্য প্রতিভাবান রাজা ছিলেন। তার সাহস ছিল অপরিসীম। সামরিক দূরদর্শিতা ছিল অতুলনীয়। তিনি একজন দুর্ধর্ষ বীর যোদ্ধা ছিলেন।
তিনি পরমেশ্বর, পরম মাহেশ্বর, পরমভট্টারক, মহারাজাধিরাজ অবিরাজ-বৃষভ-শঙ্কর প্রভৃতি গৌরবসূচক উপাধি গ্রহণ করেন। তার সাফল্য তাকে বাংলার ইতিহাসে অবিস্মরণীয় করে রেখেছে।